তৃণমূলের বাধা ভেঙেই হবে ধর্মঘট
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Nov 23, 2020 10:45 [IST]
- Last Update: Nov 23, 2020 10:45 [IST]
নিজস্ব সংবাদদাতা: টিটাগড়, ২২ নভেম্বর— যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে সলিল চৌধুরির গান বাজিয়ে বামপন্থী সেজেছিল তারাই এখন সরকারে বসে শ্রমিক কৃষকদের ডাকা ধর্মঘট ভাঙতে চাইছে। ধর্মঘটের সমর্থনে রবিবার টিটাগড়ে বিরাট জনসমাবেশে একথা বলেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তিনি বলেছেন, ঐতিহাসিক লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ৮ ঘণ্টা কাজের যে অধিকার অর্জিত হয়েছিল তা অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় সরকার এখন ১২ ঘণ্টা কাজের আইন করে শ্রম দাসে পরিণত করছে শ্রমিকদের। অপরদিকে কৃষি ব্যবস্থাকেই তুলে দিচ্ছে কর্পোরেটদের হাতে। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার জমির পাট্টা দিয়েছিল তফসিলি জাতি, আদিবাসী, মুসলিম সহ গরিব প্রান্তিক মানুষের হাতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে কৃষি জমি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত করছে। এসবের প্রতিবাদেই ২৬ নভেম্বরের দেশব্যাপী ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, এরাজ্যে যা ঠেকাতে তৃণমূল তৎপর হয়েছে।
২৬ নভেম্বরের সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে ও বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে রবিবার উত্তর ২৪পরগনা জেলা বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যৌথ আহ্বানে বারাকপুর স্টেশন চত্বর থেকে একটি বিরাট যৌথ মিছিল বের হয়ে টিটাগড় থানার সামনে এসে শেষ হয়। টিটাগড় থানার সামনে হয় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যৌথ আহ্বানে জনসভা অনুষ্ঠিত হয় যা জনসমাগমে বিরাট চেহারা নেয়। জনসভায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই জেলা সম্পাদক শৈবাল ঘোষ, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চ্যাটার্জি, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তাপস মজুমদার, সিআইটিইউ জেলা সম্পাদক গার্গী চ্যাটার্জি, আইএনটিইউসি'র নেতা দিব্যেন্দু মিত্র প্রমুখ ভাষণ দেন। সভাপতি ছিলেন সিপিআই(এম) উত্তর ২৪পরগনা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। এছাড়াও মিছিলে পা মেলান পলাশ দাশ, নেপালদেব ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখার্জি, বিধায়ক মানস মুখার্জি ও তন্ময় ভট্টাচার্য প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। তাঁদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল বারাকপুর পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়ে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি করে ডেপুটেশন দিয়েছেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডাঃ প্রবীন কুমার, তারিফ আলম, বিপুল ঘোষাল ও তাপস বিশ্বাস।
তৃণমূল ও বিজেপি’র দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে জনসভায় বিমান বসু বলেন, যখন তখন বোমা পড়ে, টিটাগড়ের মানুষ কি শান্তি চান? সমবেত জনতা উত্তর দেন ‘শান্তি চাই, শান্তি’। বিমান বসু বলেন, তাহলে এলাকাতে এলাকাতে গিয়ে একজোট হয়ে বলুন, যারাই দুষ্কর্ম করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দাবি করুন, শান্তি বজায় রাখতে হবে।
যতোই বোমাবাজি করুক, তৃণমূল বিজেপি’র বোঝাপড়া স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিমান বসু বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস আর বিজেপি হচ্ছে চরম দক্ষিণপন্থী। তাই এদের মধ্যে বোঝাপড়া আছে। অথচ, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে বামপন্থী সেজেছিল। সলিল চৌধুরির গান সমেত গণসংগীত বাজিয়ে বাজিয়ে চাতুরি করেছিল। বিজেপি’র সাথে তাদের বোঝাপড়া যাতে বোঝা না যায় তার জন্য এখনও চাতুরি করে চলেছে।
জনসভায় মহম্মদ সেলিম ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্মঘট সফল করার জন্য পথে নামার ডাক দিয়ে বলেন, মমতা ব্যানার্জির পুলিশ আর গুন্ডাদের কাছে কতো লাঠি আছে আর শ্রমিক কৃষকের কীরকম দৃঢ়তা আছে সেটা দেখা যাবে ২৬ নভেম্বর। কারণ এই ধর্মঘট দেশের জনসাধারণের দাবি নিয়ে। মুনাফাখোরদের সরকার দেশ বেচার পথে চলেছে, পুলিশ জনতাকে নিরাপত্তা না দিয়ে অপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছে। তাই রুটি রুজি, কৃষকের ফসলের দাম, মূল্যবৃদ্ধি রোধ, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প রক্ষার ন্যায্য দাবি নিয়ে চাক্কা জ্যাম করে ধর্মঘটের পথে নামতে বাধ্য হচ্ছেন দেশের মানুষ। ধর্মঘটের পরে দাবি আদায়ের লড়াই আরও তীব্র হবে। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ও হানাহানি সৃষ্টির রাজনীতির বিরুদ্ধেও লড়াইয়ের আহবান জানিয়ে সেলিম বলেন, হিন্দু মুসলিম শিখ ইসাই নির্বিশেষে শ্রমিক কৃষক আজ সকলে ঐক্যবদ্ধভাবেই দেশব্যাপী সংগ্রামের পথে। দেশটা মোদী অমিত শাহদের নয়। করোনা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তারা রেল, বিমান, খনি, ব্যাঙ্ক, বিমা সব কিছু বেচে আদানি আম্বানিদের মুনাফা বাড়াতে চাইছে। এত সহজে ভারতবর্ষ এটা মেনে নেবে না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল এই দেশ। লড়াই করে প্রতিরোধ করা হবে বিজেপি নামধারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আক্রমণকেও।
সভায় প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন জনগণের দাবি নিয়ে ডাকা এই ধর্মঘট আপনারা কি সমর্থন করেছেন? নাকি বিরোধিতা করতে নামছেন? ওঁরা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, অথচ গরিব মানুষ কী খাবে সে বিষয়ে কিছুই বলছেন না। আমেরিকাতে ট্রাম্পকে যেভাবে চলে যেতে হলো সেভাবেই মমতা সরকারকে চলে যেতে হবে।
টিটাগড় থানার সামনে জনসভায় সভাপতিত্ব করে মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, বিজেপি - তৃণমূল দুই দল সারা রাজ্যের সাথে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সমাজবিরোধীদের দাপাদাপিতে মদত দিচ্ছে। কারণ সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য জারি রেখে তারা মানুষের সংগ্রাম আন্দোলনকে আটকে রাখতে চায়। ভোটে দখলদারি করতে চায়।