ত্রিপুরায় বিজেপি-র হাতে ফের আক্রান্ত বাদল চৌধুরি
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Mar 04, 2021 13:13 [IST]
- Last Update: Mar 04, 2021 13:13 [IST]
বুধবার আবার নিজের বিধানসভা নির্বাচন ক্ষেত্রে শাসক দল বিজেপি’র দুর্বৃত্ত বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিধায়ক বাদল চৌধুরি। তাঁকে জিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাথায় রক্ত জমাট হয়েছে। তিনি ওই হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে রয়েছেন। পুলিশকে আগাম জানিয়েই বাদল চৌধুরি, পার্টির দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা কমিটির সম্পাদক প্রাক্তন বিধায়ক বাসুদেব মজুমদার, বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক তাপস দত্ত সহ ঋষ্যমুখ বিধানসভা কেন্দ্রের মণিরামপুরে রাজ্যে ৬ষ্ঠ তফসিলের উপজাতি এলাকা জেলা পরিষদ গঠন, ককবরক ভাষাকে রাজ্য ভাষা হিসাবে স্বীকৃতির দাবি জানাতে গিয়ে ১৯৭৫ সালে শহীদ ধনঞ্জয় ত্রিপুরার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। উপজাতি জনগোষ্ঠীর জনবসতিতে দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ মুহুরীপুর সহ অন্যান্য এলাকা থেকে বিজেপি’র অনুপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত বাইক বাহিনী পুলিশের উপস্থিতিতে বাদল চৌধুরি সহ অন্যান্য নেতৃত্বকে আক্রমণ করে এবং বাদল চৌধুরিকে বহনকারী রাজ্য দপ্তরের গাড়ি এবং বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বাদল চৌধুরি এবং অন্যান্য নেতৃত্ব কোনোক্রমে বিলোনিয়া শহরে এসে সরাসরি দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার এসপি অফিসে গিয়ে আজকের ঘটনা এবং অন্যান্য আক্রমণের ঘটনাগুলি জানান। গতকালই রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের নেতৃত্বে সিপিআই (এম) বিধায়কদল সাম্প্রতিক সময়ে বিলোনিয়ায় আক্রান্ত পরিবারবর্গের সাথে দেখা করেছিলেন।
২০১৮ সালের আজকের দিনটিতেই বিজেপি এবং তাদের নির্বাচনী জোট বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে পরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্তসুলভ সন্ত্রাস শুরু করেছিল। গত তিন বছর ধরে প্রতিদিন বিজেপি দুর্বৃত্তদের হিংস্র-আক্রমণ চলছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন না করে নিষ্ক্রিয় থাকে। রাজ্যে আইনের শাসনের কোনও অস্তিত্বই নেই। সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী আজকের পুলিশের উপস্থিতিতে বাদল চৌধুরি ও অন্যান্য নেতৃত্বের ওপর বিজেপি দুর্বৃত্তদের ফ্যাসিস্তসুলভ আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আক্রমণকারী দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার দাবি করেছে।
এদিকে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ককবরক ভাষা আন্দোলনের শহীদ ধনঞ্জয় ত্রিপুরার গ্রামে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে এলাকার বিধায়ক, সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাদল চৌধুরি আজ সকালে বিজেপি দলের কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক এবং পার্টির দক্ষিণ জেলা সম্পাদক বাসুদেব মজুমদার, বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক তাপস দত্ত সহ অনেকেই। এই কাপুরুষোচিত আক্রমণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান।
তিনি বলেছেন, বিধায়ককে তাঁর নিজের বিধানসভা এলাকায় ঢুকতে বারবার বাধা দেবার ঘটনা এবং আজকের আক্রমণ শাসক দলের স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্তসুলভ চেহারাকে আরও উন্মুক্ত করল। নিজেদের কৃতকর্মের কারণে জনবিচ্ছিন্নতা যত বাড়ছে শাসক দল তত হিংস্রতা বাড়াতে চাইছে। এই পদ্ধতির জন্য শাসক দলের জনবিচ্ছিন্নতা আরও বাড়বে এবং দ্রুততর হবে। দলীয় দুর্বৃত্তদের এ জাতীয় একের পর এক কার্যকলাপে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নীরবতা অভাবনীয়, উদ্দেশ্যমূলক এবং অনভিপ্রেত।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এই ফ্যাসিস্তসুলভ দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করতে, রাজ্যে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে, ত্রিপুরা পুলিশের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পথে নেমে আসেন মানুষ। নিন্দার ঝড় ওঠে। রাজধানী আগরতলায়ও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সিপিআই( এম) পশ্চিম জেলা কমিটির ডাকে হয় প্রতিবাদ মিছিল। শিরদাঁড়া সোজা করেই রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। বিকাল ৫ টা নাগাদ মেলারমাঠের ভানু ঘোষ স্মৃতি ভবনের সামনে থেকে ঝড়ের বেগে মিছিল চলে যায় প্যারাডাইস চৌমুহনী, পোস্ট অফিস চৌমুহনী হয়ে কামান চৌমুহনীতে। শহর ঘুরে মিছিল ফিরে আসে মেলার মাঠে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সিপিআই( এম) নেতা কর্মী সমর্থকদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করার দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে।