মোদীযোগ আড়ালের চেষ্টা
-
-
- Jan 07, 2021 16:08 [IST]
- Last Update: Jan 07, 2021 16:08 [IST]
তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের নজিরবিহীন আন্দোলনে বেকায়দায় পড়া মোদী সরকারকে খানিকটা অক্সিজেন জোগাতে এবং সাথে সাথে কৃষি আইনের সঙ্গে নিজেদের মুনাফার স্বার্থের সম্পর্ক অস্বীকার করতে এবার সরাসরি মাঠে নেমে পড়েছে মোদীর অতি ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট সংস্থাগুলি। কয়েকদিন আগে আদানি গোষ্ঠী বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার কৃত তিন কৃষি আইনের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। হরিয়ানাসহ বিভিন্ন রাজ্যে তারা অতিকায় আধুনিক গোডাউন নির্মাণ করলেও সেখানে বর্তমানে তারা এফসিআই’র কেনা শস্য মজুত করে। অর্থাৎ এফসিআই’র নিজস্ব মজুত ক্ষমতা সুরক্ষা না করে এবং সম্প্রসারিত না করে আদানির গুদাম ব্যবহার করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের ভাড়ার বিনিময়ে। মোদী সরকারের কাছ থেকে নিশ্চয়তা না পেলে রাজ্যে রাজ্যে গুদাম নির্মাণে নিশ্চয়ই আদানিরা এতো বিপুল বিনিয়োগ করত না। তাছাড়া নিছক ভাড়া দেবার জন্যই আদানিদের মতো সংস্থা গুদাম নির্মাণে এতো বিনিয়োগ করবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেখানে মোদী সরকার গণবণ্টন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভরতুকির টাকা পাঠানোর পক্ষে নীতিগত সওয়াল করে যাচ্ছে সেখানে মোদী সরকারের হাতে এফসিআই’র ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই কিসের ভরসায় দেশের সর্বত্র ফসল মজুতের জন্য গুদাম নির্মাণ করে চলেছে ?
এখন মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স বলছে তারা কোথাও কৃষি জমি কেনেনি। কৃষকদের কাছ থেকেও সরাসরি ফসল কেনে না। কোনও চুক্তি চাষ বা কর্পোরেট চাষ তারা করে না। ঠেলায় পড়ে এখন দাবি করা হলেও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের নামে তারা মহারাষ্ট্রে ও অন্যত্র বিপুল জমি কিনেছে। তাদের সংগঠিত খুচরো বিপণন ব্যবস্থায় তারা যে কৃষিজাত পণ্য বিক্রি করে তা কৃষকদের কাছ থেকেই কেনে তবে তা তাদের ঠিক করা এজেন্ট বা সরবরাহকারীর মাধ্যমে। রিলায়েন্স ফ্রেশের ওয়েব সাইটে জ্বলজ্বল করে কৃষকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ফল ও তরিতরকারি কেনার কথা। রিলায়েন্স এখন যা দাবি করছে তা অংশত সত্য। কারণ, পুরানো আইনে ব্যাপক হারে চুক্তি চাষ বা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কেনার তেমন সুযোগ ছিল না। তাই আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে এজেন্টের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিজেদের দোকানে বিক্রি করছিল। তাতেই দিল্লির মলে দেখা গেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ভুট্টা ইত্যাদি জিনিস কয়েকশো থেকে হাজার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ কৃষক উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কিনে কয়েকশো গুণ বেশি বিক্রির আইনি ছাড়পত্র পেতেই কর্পোরেট সংস্থা তাদের বন্ধু সরকারের বন্ধু প্রধানমন্ত্রীকে আবদার করে। তাতেই সব বিরোধিতা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের পথে বসানোর ব্যবস্থা করে সরকার তিনটি আইন তৈরি করে দেয়। এরফলে আদানি-আম্বানিদের ইচ্ছাপূরণ ও লক্ষ্যপূরণে আর কোনও বাধা থাকছে না। কিন্তু তাদের আশায় ছাই দিয়ে কৃষকরা দিল্লির বুকে বিরোধিতার হিমালয় প্রমাণ প্রাচীর তুলে দিয়েছে। তিন আইনে কৃষকদের কাছ থেকে চুক্তি চাষ করে সরাসরি ফসল কেনার ব্যবস্থা হয়েছে। তেমনি যতখুশি খাদ্যশস্য ও শাকসবজি মজুত করারও অধিকার দেওয়া হয়েছে কর্পোরেটকে। ফসল ওঠার সময় জলের দামে ফসল কিনে আম্বানি আদানিরা সব ফসল তাদের গুদামে মজুত করবে। তারপর সারা বছর ধরে অতি উচ্চ মূল্যে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করবে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি কর্পোরেটের হাতে চলে যাওয়ায় ফসল ওঠার সময় তারা দাম তলানিতে নামিয়ে কৃষকদের নিঃস্ব করবে। পরে গুদামে মাল রেখে বাজারে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে অতি উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা লুটবে। এই ষড়যন্ত্র কৃষকরা ধরে ফেলেছেন। তাই তিন আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা আদানি-আম্বানির পণ্য পরিষেবা বয়কটের ডাক দিয়েছেন। তার জেরে আম্বানির পেট্রোল পাম্প, জিও মার্টের সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে। পাঞ্জাবে জিও টাওয়ারে হামলা হচ্ছে। মানুষ জিও ছেড়ে অন্য মোবাইল নিচ্ছেন। তাছাড়া মোদী সরকারের সঙ্গে অশুভ আঁতাতের কথা ব্যাপকহারে প্রচার হওয়ায় তাদের অস্বস্তি বেড়েছে। ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় বিবৃতি দিয়ে তাদের মোদীযোগ কিছুটা আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।