পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর আশ্বাস কমিশনের
-
-
- Jan 23, 2021 04:33 [IST]
- Last Update: Jan 23, 2021 04:33 [IST]
পশ্চিমবঙ্গে তিনদিনের সফর শেষ করে শুক্রবার বিকেলে দিল্লি ফিরে গেল নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। যাওয়ার আগে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানিয়ে গেলেন শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় দিল্লিতে কমিশন পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণ নিয়ে বৈঠকে বসবেন। এবং তারপরে যে কোনও দিন নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হবে দিল্লি থেকেই। সফরের শুরুতে বুধবার রাজ্যের স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলি সেন্ট্রাল অবজার্ভারদের ভূমিকা, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহার, সিভিক পুলিশ, বাইকবাহিনী ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সুনীল অরোরা জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয়বাহিনী নিয়ে দিল্লিতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সবাই পর্যাপ্ত বাহিনীর কথা বলছেন। কিন্তু দেশে যে পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে সেখান থেকেই তো দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে মূলত ‘নর্থ ইস্ট’ থেকে ফোর্স আসবে। আমরা চেষ্টা করছি প্রয়োজন মতোই বাহিনী পশ্চিমবঙ্গে পাঠাতে। সেটা ভোটের অনেক আগেই রাজ্যে চলে আসবে। সুনীল অরোরা স্মরণ করিয়ে দেন, যতক্ষণ না ভোট ঘোষণা হচ্ছে ততক্ষণ কমিশন কোনও রাজ্যের আইন হাতে নিতে পারে না। ফলে ভোট ঘোষণার সঙ্গে বাহিনীর নিয়োগ দুটোই সম্পর্ক যুক্ত। তিনি জানান, রাজ্যে এই মুহূর্তে ২৩ কোম্পানি বাহিনী রয়েছে। তাদের এখনই দরকার হলে কাজে লাগাতে পারে রাজ্য প্রশাসন। একইসঙ্গে বিগত কয়েকটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় এবারের ভোটে সিভিক পুলিশ এবং গ্রিন পুলিশ একেবারেই নিষিদ্ধ করল নির্বাচন কমিশন। সেইসঙ্গে সুনীল অরোরা এদিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যেদিন থেকে ভোট ঘোষণা হয়ে যাবে সেদিন থেকে রাজ্যে ‘বাইক র্যালি’ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। দিল্লি ফিরে এরজন্য আলাদা নির্দেশিকা জারি করবে নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা আশা করছি এবং আমরা চাইছি, সবাই যদি সহযোগিতা করেন তাহলে পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার জেলাগুলির প্রশাসনিক ও পুলিশের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে বৈঠক শুরু হয় কমিশনের। টানা সাতঘণ্টার মতো বৈঠক চলে। বুথ ধরে ধরে আলোচনা হয়েছে। সূত্রে খবর, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে শহরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে কমিশন। এদিন সকাল থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি’র সঙ্গে বৈঠক হয়। প্রশাসনিক শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন সুনীল অরোরা। ছিলেন অপর দুই নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র এবং রাজীব কুমার ও সিইও আরিজ আফতাব। সেখানে সুনীল অরোরা বলেন, পেশি শক্তি, অর্থ বলের দাপট এবং প্রশাসনকে অপব্যবহার— এগুলিকে কোনভাবেই হালকাভাবে দেখছে না কমিশন। সেটা মুখ্যসচিবকে বলা হয়েছে। কোভিড বিধি মেনে চলতে গিয়ে কোনও বুথে এক হাজারের বেশি ভোটার থাকবে না। ফলে বুথ সংখ্যা অনেকটাই বাড়বে। এখন রাজ্যে ৭৮ হাজার ৯০৩টি বুথ রয়েছে এটা বেড়ে হচ্ছে ১ লক্ষ ১ হাজার ৭৯০টি। অর্থাৎ ২২ হাজার ৮৮৭টি বুথ বাড়ছে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে এবার প্রত্যেকটি বুথ একতলায় থাকতে হবে। দোতলা, তিনতলায় কোনও বুথ করা যাবে না। আমরা এবার বলেছি ৮০ বছর বা তার উপরে ভোটার এবং শারীরিকভাবে অক্ষম ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট দানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বুথ এলাকায় এই ধরনের ভোটার নির্দিষ্ট হয়ে যাবার পর তার তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ভোটার তালিকায় ভূতুড়ে ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার দাবি বামপন্থীদের বহু দিনের। এবারও ১৭ ডিসেম্বর উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের সঙ্গে দেখা করে সিপিআই(এম) নেতা শমীক লাহিড়ী এবং পলাশ দাশ স্মারকলিপি দিয়ে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব একইভাবে ভোটার তালিকার প্রসঙ্গ তোলেন। বামপন্থী কর্মী-সমর্থক যাঁদের নাম ষড়যন্ত্র করে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁদের নাম অবিলম্বে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। এদিন সুনীল অরোরার সাংবাদিক বৈঠকের পর সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব বলেন, সেন্ট্রাল অবজার্ভার, কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ আরও কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে কমিশনে আমাদের বক্তব্য প্রাধান্য পেয়েছে। এরজন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমরা বারবার ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করার কথা বলছি। সে বিষয়ে কমিশন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, জানা যাচ্ছে না। পোস্টাল ব্যালটের বিষয়টিও আমরা কমিশনের নজরে এনেছি। এর উপর যদি কমিশনের নজর ঠিক মতো না থাকে তাহলে সেটাও লুট হবে, অপব্যবহার হবে।
সুনীল অরোরা এদিন বলেন, ২০২১-এর ৩০ মে এরাজ্যে বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এবার ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৩৩ লক্ষ। ১৮ বছরের উপরে ভোটার বেড়েছে প্রায় ১১ লক্ষ ৫৭ হাজার। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন ৬ দফায় হয়েছিল, ৮২.৮০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ২০১৯-এ লোকসভায় ৮১.৬৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল, ভোট হয়েছিল ৭ দফায়। এবার কত দফায় ভোট হবে তা শনিবার আমরা দিল্লিতে আলোচনা করব। এবারের ভোটে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। একজন করে স্পেশ্যাল অবজার্ভার (জেনারেল), আইন-শৃঙ্খলা এবং এক্সপেনডিচার রাজ্যে পাঠানো হবে। তাঁরা খুবই অভিজ্ঞ। এছাড়া জেলায় পাঠানো হচ্ছে অবজার্ভার। তাঁদের ফোন নম্বর লোকাল প্রেসকে দিয়ে দেওয়া হবে। যাতে প্রেস তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। ফলে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা এবার ভোটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। সাংবাদিক বৈঠকে জৈনও ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠকের দিন সীমান্তে বিএসএফ-এর ভূমিকার সমালোচনা করে সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেছিল তৃণমূল। তার পরিপ্রেক্ষিতে সুনীল অরোরা এদিন বলেন, সর্বসমক্ষে বিএসএফ নিয়ে এই ধরনের অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের দেশে ‘ফাইনেস্ট ফোর্স’ হলো বিএসএফ। তাদের বিরুদ্ধে ওপেন ফোরামে এই ধরনের অভিযোগ করা ঠিক নয়, তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে একটি বিশেষ দলের হয়ে ভোট চাইছে বিএসএফ। পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন কি সন্তুষ্ট? প্রশ্ন করা হয় সাংবাদিক বৈঠকে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে এই ফোরামে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। তবে কমিশন বিষয়টির উপর নজর রাখছে। তাঁর বক্তব্য, পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারদের বিশেষভাবে বলা হয়েছে, সিরিয়াস ক্রাইম হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিশনের আশা, পশ্চিমবঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু, নৈতিকতা সম্পন্ন এবং নিরাপদ নির্বাচন করা সম্ভব হবে।