মৃত্যু পরোয়ানা প্রত্যাহার না করিয়ে কৃষক ফিরবে না
-
অরূপ সেন
- Jan 23, 2021 04:56 [IST]
- Last Update: Jan 23, 2021 04:56 [IST]
কৃষক নেতারা সরকারকে সাফ জানিয়ে দিলেন, কৃষি আইন কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখার প্রস্তাব তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তিন আইন প্রত্যাহারই করতে হবে। সেইসঙ্গে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে। শুক্রবার বিজ্ঞান ভবনে নির্ধারিত বৈঠকে বসেছিলেন তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কৃষক নেতারা। বুধবারের বৈঠকে কেন্দ্র দেড় বছরের জন্য আইন স্থগিত রেখে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল। সরকার ও কৃষকদের একটি কমিটি বানিয়ে আইন খতিয়ে দেখার প্রস্তাবও পেশ করা হয়েছিল। এদিন বৈঠকের শুরুতেই কৃষকরা জানিয়ে দেন সরকারের প্রস্তাব নিয়ে সাধারণসভা করা হয়েছে। কৃষক সংগঠনগুলি একমত যে এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া যাবে না। সরকারকে তিন আইন তুলে নিতেই হবে। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার বলেন, সরকারের তরফে আর কোনও নতুন প্রস্তাব দেওয়া সম্ভব নয়। কৃষক সংগঠনগুলি তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করুক। সব মিলিয়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে বৈঠক হলেও বাস্তবে মাত্র আধ ঘণ্টার কথা হয়েছে এদিন। সরকারের তরফে বলা হয়েছে, যদি কৃষকদের কোনও নতুন প্রস্তাব থাকে, যদি তারা পুনর্বিবেচনা করেন তাহলে শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে তা জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে কালই আবার বৈঠক হবে।
এদিন বৈঠকের পরেই কৃষিমন্ত্রী নিজেই কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে কুৎসায় নেমে পড়েছেন। তিনি দাবি করেন, কিছু শক্তি আছে যারা চাইছে না আন্দোলন উঠে যাক। বাইরের শক্তি রয়েছে। কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তি প্রতিবাদ জিইয়ে রাখতে চাইছে। সরকার অনেক প্রস্তাব দিয়েছে কিন্তু আন্দোলনের পবিত্রতা চলে গেলে কোনও সমাধান সম্ভব নয়। তোমার এদিন এই আন্দোলনকে পাঞ্জাব, হরিয়ানার আন্দোলন বলে পুনরায় কটাক্ষও করেন। তাঁর দাবি, আইনে কৃষকের উপকার হবে তবুও কৃষকদের প্রতিবাদকে সম্মান দিতেই সরকার নানা প্রস্তাব দিয়েছে।
রাজধানী ঘিরে কৃষকদের প্রতিবাদ প্রায় দু’মাসে পড়ল। নানা কৌশলেও এই আন্দোলনে ফাটল ধরানো যায়নি। তিন আইন প্রত্যাহারের মূল দাবি থেকে কৃষকদের সরানোও যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে কৃষি আইন রূপায়ণ স্থগিত রাখার নির্দেশও দিয়েছে। সরকারের সর্বশেষ প্রস্তাবের মধ্যে আইনি ফাঁকের কথা বিশিষ্ট আইনজীবীরাও উল্লেখ করেছেন। সংসদে পাশ হওয়া আইন সরকার নিজের ইচ্ছায় স্থগিত রাখতে পারে না। অর্ডিন্যান্স বা সংসদে আইন পাশ করিয়েই তা করতে হবে। সংসদে যখন আইন পাশ করাতেই হবে তখন কৃষকের দাবি মেনে তিন আইন প্রত্যাহার করা হবে না কেন, এই প্রশ্ন উঠেছে। এদিন সারা ভারত কৃষকসভার তরফেও এই প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, তিন মন্ত্রীর কমিটি যে আইন স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে তার কি কোনও আইনি বৈধতা রয়েছে? আইনজ্ঞদের অভিমত, স্থগিত রাখার অধিকারই নেই সরকারের। সংসদের অধিকারে তা হস্তক্ষেপ এবং তা আইনের চোখে টিকবে না। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে এই আইন রূপায়ণ স্থগিত হয়ে রয়েছে। বরং কৃষকরা যে তিন আইন প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে তা আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেই উত্থাপিত হয়েছে। মূল দাবি লঘু করা যায় না।
এদিনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতা দর্শন পাল বলেছেন, কৃষকরা তাঁদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। সরকার নিজের অবস্থান থেকে না সরলে আন্দোলন চলবে। মন্ত্রী আমাদের পুনরায় আলোচনা করতে অনুরোধ করেছেন। আমরা তা করব। বস্তুত এদিন বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতির সময়ে ৪১জন কৃষক নেতা নিজের মধ্যে পুনরায় কথা বলেন।
বৈঠকের পরে সারা ভারত কৃষক সভার সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, আমরা সরকারকে বলেছি এত বিপুল সংখ্যায় মানুষ এত যন্ত্রণা ভোগ করেও অবস্থানে রয়েছেন। কেন, সে কথা সরকার বুঝতে চাইছে না। কৃষক বুঝে নিয়েছে এই তিন বিল তার মৃত্যু পরোয়ানা। মৃত্যু পরোয়ানা না ছিঁড়ে কৃষক ফিরবে না। সরকার মানবিকতার দৃষ্টিতে দেখছে না। সরকার যদি অবস্থান না বদলায় তাহলে আন্দোলন দীর্ঘ হবে।
এদিকে ২৬ জানুয়ারি কৃষক প্যারেডের প্রস্তুতি তুঙ্গে উঠেছে। কৃষক মোর্চা ডাক দিয়েছে, দিল্লি ও তার সংলগ্ন এলাকার মানুষ দলে দলে এই প্যারেডের সমর্থনে সমবেত হন। দিল্লির আউটার রিং রোড ধরেই এই ট্রাক্টর প্যারেড হবে। তবে শুক্রবার পুলিশ অফিসাররা প্যারেডের রাস্তা নিয়ে কৃষক নেতাদের একটি মানচিত্র তৈরি করে দিয়েছে। কৃষক মোর্চা আগামীকাল বৈঠকে বসে সেই রুট চূড়ান্ত করবে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান থেকে হাজার হাজার ট্রাক্টর রওনা দিতে শুরু করেছে। কৃষকরা প্যারেডের মতোই ট্যাবলো সাজাচ্ছেন। সেখানে কৃষক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে। অন্যদিকে, দিল্লি পুলিশ সিঙ্ঘু, টিকরির সীমান্তে যেভাবে ব্যারিকেড সাজাচ্ছে তা পুলিশের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। কংক্রিটের চাঁই, লোহার জাল, কনটেনার দিয়ে রাস্তা আটকানো হচ্ছে। রাজ্যে রাজ্যেও কিষাণ প্যারেড হবে।