হিন্দুত্বের ফ্যাসিস্ত স্লোগান ‘এক দেশ এক ভোট’
-
মৃদুল দে
- Dec 13, 2020 15:29 [IST]
- Last Update: Dec 13, 2020 15:29 [IST]
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং
আরএসএস-বিজেপি ২০১৪ সাল থেকে হামেশাই থেকে থেকে হাঁকডাক পেড়ে আসছেন যে, দেশে পাঁচবছরে একবারই সব নির্বাচন করা দরকার। বিরোধীদের
তুমুল প্রতিবাদের মধ্যে থেমে গিয়ে আবার নতুন করে তিনি একই কথা উচ্চারণ করেন। এখন
আবার তিনি আরেক দফায় ‘এক দেশ এক ভোট’-র আওয়াজ তুলেছেন। অজুহাত অতিপরিচিত— বারবার
এত নির্বাচনে বিরাট খরচ, একেবারে কেন্দ্র এ
রাজ্য সব নির্বাচন সাঙ্গ হলে খরচ কমে যায়। দুরাত্মার কোনকালে কোনসময় ছলের অভাব হয়
না। মুখে ফোয়ারা ছোটে ছলচাতুরির বিশেষ করে ফ্যাসিস্ত সংগঠনের মুখপাত্রদের।
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সংসদে আরএসএস-বিজেপি’র স্লোগানের সমর্থনে জোরালোভাবে
দাঁড়ান। তার বাইরে রাষ্ট্রপতির একচুলও
যাবার উপায় নেই। যেমন আরএসএস প্রচারক হিসাবে পরিচিতি রাজ্যপালের পদাভিষিক্ত
ব্যক্তিবর্গেরও নেই। বহু বৈচিত্রের কারণে পৃথিবীতে ভারত সেই অর্থে অনন্য। এই বৈচিত্রগুলিকে
দুমরে মুচরে ভেঙ্গে দেওয়া হলে ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের জায়গায় হিন্দুরাষ্ট্র
স্থাপনের জন্য সঙ্ঘ পরিবারের চরম লক্ষ্য অর্জনে অনেকটা রাস্তা অতিক্রমণের কাজ সহজ
হয়। ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। যদিও
দীর্ঘ শাসনে এই কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এককেন্দ্রিক কাঠামো ও স্বৈরতান্ত্রিক
ব্যবস্থা জোরদার করার ঝোঁক বেড়েছে। রাজ্যগুলির অধিকার সঙ্কুচিততর হয়েছে, অসম বিকাশ ও বঞ্চনা প্রতারণা বেড়েছে, মুষ্টিমেয়র সম্পত্তি ও ক্ষমতা প্রচণ্ড গতিতে ঊর্ধ্বমুখী
জনগণের দুর্দশাও সমানতালে বাড়ন্ত। এতে ভারত দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। মৌলবাদী, সন্ত্রাসবাদী ও বিভাজনের শক্তির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এদেরও
আরএসএস-বিজেপি সর্বাত্মক উপায়ে ব্যবহার করছে। একসঙ্গে একবারই এবং এক ভোটের অর্থ
হলো সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির মূলোৎপাটনের চেষ্টা, হিন্দুরাষ্ট্রের পত্তনের ভিত্তি তৈরি করা। তাতে একদলীয়
ব্যবস্থা হয়ে উঠবে সর্বগ্রাসী, ফ্যাসিবাদ
প্রতিষ্ঠার জন্য যা অপরিহার্য বৈধ শর্ত। ‘নতুন ভারত’ তৈরি ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র
শুরু,
এক দেশ-এক জাতি— এক ভাষা— এক ধর্ম— এক আইন— এক সংস্কৃতি তার
সঙ্গে খাপ খাওয়ানো নাগরিকত্ব আইন বদলে দেওয়া অপকর্ম ও এরকম স্লোগান কার্যকর করার
পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই মোদী সরকার ও সঙ্ঘ পরিবার নিতে শুরু করেছে। এজন্য সরকার চাপিয়ে
দিচ্ছে ব্রিটিশ আমলের চেয়েও দানবীয় আইন রাজ্যের পর রাজ্য দখল করে নেওয়া, কথায় কথায় যে কোনও সমালোনাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা আখ্যা দিয়ে
নৃশংসভাবে দমন করার অভিযানও শুরু হয়েছে।
এই ঘটনাস্রোতে প্রশ্ন স্বাভাবিক
মোদী কার প্রতিনিধি? কাদের
প্রধানমন্ত্রী? সহজ সরল একটাই উত্তর: আরএসএস এবং
কর্পোরেট জগতের। ২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী যখন, তখন গুজরাটে সংখ্যালঘু মুসলিমদের গণহত্যার পর, যেভাবেই চাপা দেওয়া হোক না কেন, প্রধান আসামী তিনিই। ভারতে সংখ্যালঘু বিরোধী উগ্রতম হিংসার
জন্য চরমপন্থী ধর্মীয় মৌলবাদের সব চাইতে আগ্রাসী প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনিই।
দেশ-বিদেশের কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও গণনিধন পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র
মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি বিরাট জয়লাভ করে। ধন্য ধন্য বাণীতে তাঁকে ভূষিত করেন
তৃণমূলনেত্রী। দেড় দশকের মুখ্যমন্ত্রিত্বে এই আগ্রাসী ভূমিকা, কর্পোরেটদের অপার সমর্থন, মিডিয়ার আত্মসমর্পণ, গুজরাটে
স্বর্গরাজ্যের মতো উন্নয়নের টানা তুমুল প্রচার, ঢালাও অবাস্তব প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি মধ্যবিত্ত ও যুবক অংশের মধ্যেও প্রভাব
ফেলে। চরম হিংসাত্মক মৌলবাদী গর্জনের মধ্যে মুসলিম ছাড়াও খ্রিষ্টান ও দলিতদের
বিরুদ্ধে গুজরাটে বিংশ শতাব্দীর শেষে বিজেপি রাজত্বের সময় থেকে আক্রমণ চাপা পড়ে
যায়। এটা অপ্রতিরোধ্য করা হয় মোদী রাজত্বের নতুন আখ্যান। আধুনিক মিডিয়া-প্রযুক্তি
ও সোশ্যাল মিডিয়ার পূর্ণ ব্যবহার আরএসএস-বিজেপি’ই ভারতে প্রথম শুরু করে, কর্পোরেটদের কাঁড়ি কাঁড়ি বিশাল অর্থ তাতে ব্যবহৃত হয়। মোদীর
দ্রুত লাফে লাফে উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে কর্পোরেট শক্তির পূর্ণ মদতও তাঁর পেছনে।
স্বাধীন ভারতে একজন ব্যক্তিত্বে প্রধানমন্ত্রী বানাবার জন্য গোটা কর্পোরেট শক্তি
তাদের সব শক্তি-সামর্থ্য, মিডিয়া, অর্থ কাঠামো দিয়ে প্রকাশ্যে নেমে পড়ার কোনও ঘটনা কখনই
ঘটেনি। এই প্রথম। ধান্দাবাজ ব্যবসায়ী, পুঁজিপতি ও কর্পোরেটরা মোদী ও গুজরাটকে ঘিরে ভিড় জমাতে থাকে, জোরজবরদস্তি রাজত্বে অবাধ সুযোগ তাদেরই। মুম্বাইকে ছাড়িয়ে
গুজরাট আগে ধান্দার ব্যবসায়, শিল্পে। এরকম তারা
চায় গোটা ভারতে— এরকম, একজন সর্বশক্তিমান
ব্যক্তিকে (‘বিকাশ পুরুষ’) তারা চায় দেশের সর্বময় ক্ষমতার সিংহাসনে। ২০১৪ সালের
আগে তিনবছর ধরে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রচার আরএসএস-বিজেপি’র হাতের মুঠোয়।
কংগ্রেস দল আমলই পায়নি কর্পোরেট মহল থেকে। দেশের আর্থিক মন্দায় হিমশিম খাচ্ছে তখন
দিশাহারা মনমোহন সরকার। সে জায়গায় মন্দা-আক্রান্ত জার্মানিতে হিটলারী নির্বাচনী
প্রচারের মতো আকাশচুম্বী প্রতিশ্রুতিতে ভাসিয়ে দিল মোদী এবং তার সঙ্ঘ পরিবার।
বিদেশ থেকে সব কালো টাকা উদ্ধার করে দেশের কালোবাজারি অর্থ এক ঝটকায় দখল করে
প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষমতায় আসার পরেই ম্যাজিকের মতো
ঢুকিয়ে দেওয়া, বছরে ২ কোটি বেকার যুবকের চাকরি—
এরকম কত কী! হিটলারের এরকম প্রতিশ্রুতিতে জার্মানির নির্বাচনে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল
যুবকরা। গোটা একচেটিয়া পুঁজিপতিদের মহল ও হিটলারী ফ্যাসিবাদ গাটছড়া বেঁধে
শাসনতন্ত্র গড়ে তোলে। দিনকে রাত করার প্রচার হয় অহরহ। এভাবে জেতার পরেই শুরু হয়
হিটলারী ধ্বংসযজ্ঞ, যুদ্ধ শিল্প বাড়িয়ে
তোলার জন্য বেশ কিছু বেকার যুবক কাজ পায় নজিরহীন মানবধ্বংস অভিযানের মধ্যে। সরকারে
এসেই সব ক্ষমতার অধীশ্বর হয় হিটলার ও তার ফ্যাসিস্ত বাহিনী। দুনিয়ার একচ্ছত্র
কর্তৃত্ব,
আত্মনির্ভরতা, উন্নয়ন ও জার্মান গৌরব প্রতিষ্ঠার নামে সমূলে ধ্বংস করা হয় গণতন্ত্র।
ফ্যাসিবাদের ভয়ঙ্কর রূপ দেখল গোটা দুনিয়া, রক্তস্রোতে ভাসল ইউরোপ। আবার আরএসএস’র তাত্ত্বিক গুরু ও নেতারা
হিটলার-মুসোলিনীর এসব ফ্যাসিস্ত নৃশংসতায় আকৃষ্ট হয়, তাদের বেসরকারি ফ্যাসিস্ত ব্ল্যাক সার্ট, ব্রাউন সার্ট বাহিনী সরকারের বিরোধিতা ও সমালোচনাকে ধ্বংস করার জন্য নৃশংসতা
চালিয়ে যায়। আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভা তাদের ফ্যাসিস্ত লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে
প্রত্যক্ষ শিক্ষা নিতেও যায় হিটলার, মুসোলিনীর কাছে। যুবকদের ফ্যাসিস্তকরণ, ‘প্রাচীন স্বর্ণযুগ’র রূপকথা প্রচারের রাজনৈতিক ব্যবহার ইত্যাদি শেখা
মুসোলিনীর কাছে; ইহুদিদের মতো একটা অভ্যন্তরীণ শত্রু
বাছাই,
তাণ্ডব বাহিনীর হিংসা ও প্রচার কাজ হিটলারের কাছে। এখনও
সঙ্ঘ পরিবারের আদর্শ ফ্যাসিবাদ, সেই ধাঁচে গড়ে
তোলার চেষ্টা হয় সংগঠন, রাষ্ট্রক্ষমতায়
মোদী আসার পর বহুগুণে তা বর্ধিত, দেশজুড়ে
সম্প্রসারিত— সরকারি যন্ত্র ও বেসরকারি বাহিনী দিয়ে।
আরএসএস এবং কর্পোরেটদের প্রতিনিধি
নরেন্দ্র মোদীকে সর্বজ্ঞানী ও জিনিয়াস বলে তুলে ধরার চেষ্টা মিডিয়ায়, এমনকি সুপ্রিম কোর্টের একজন সদ্য-অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি
পর্যন্ত সেই সারিতে লাইন দিয়েছেন। তবে আত্মসুখে ও বিলাসে বিভোর থাকতে মোদী
ভালোবাসেন। তার নজির ছ’বছরে অনেক, কোথাও খুঁজতে হয়
না। কর্পোরেট লুটও চলবে, দিনদুপুরে ডাকাতিও
হবে,
সরকারি ও ভোঁতা হুঙ্কারও চলবে। লাভ জিহাদ, ঘরে ফেরানো, দলিত দলন, গো-রক্ষা, গান্ধী-হত্যার গৌরব প্রচার ইত্যাদির প্রতি সরকার ও সঙ্ঘ
পরিবারের বিরোধিতা থাকবে না, সমর্থনই থাকবে, একআধটু লোক দেখানো বিক্ষিপ্ত আদুরে সমালোচনার টোকা হবে
মাত্র। সংসদ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে, কত হাজার কোটি টাকা খরচ হবে ইয়ত্তা নেই — হিন্দুত্বের সংসদ ভবনের ‘নতুন
কীর্তিস্তম্ভ’ হবে। কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দল এতে সায় দেয়নি, তার তোয়াক্কাও করেন না মোদীরা, যেমন সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রেরও নিয়মনীতির তোয়াক্কা
করেন না। অর্থ, পেশি, সরকারি তদন্ত সংস্থা, বেসরকারি ঝটিকা
বাহিনী ইত্যাদি যখন যেভাবে দরকার হয় ব্যবহার করা; আদালত, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসনকে আজ্ঞাবহ করে তোলা এবং বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ
করে রাখার কাজে অনেকখানি এগিয়ে গেছে মোদী সরকার।
মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্বের গুজরাট যদি
হয় হিন্দুত্বের প্রথম গবেষণাগার, তবে যোগীর
মুখ্যমন্ত্রিত্বের উত্তর প্রদেশকে বলা যায় দ্বিতীয় গবেষণাগার। দু’দশক পরে
বিজেপি-আরএসএস’র একচ্ছত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর্বের প্রথম গবেষণাগার। এজন্যই
মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে যোগী নামধারী গেরুয়া বসনের আদিত্যনাথকে যার
বিরুদ্ধে কাঁড়ি কাঁড়ি গুরুতর ফৌজদারী অভিযোগের মামলা ঝুলছিল, যে যোগীর শাসনের ভয়াবহতার সাফল্যে মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলার ১৯ বছর বয়েসি দলিত তরুণীর ওপর দলবদ্ধ ধর্ষণ, সরকারি উদ্যোগে সমস্ত তথ্য লোপাট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়
বিজেপি শাসন নির্ভেজাল মানে কী! এরকম ঘটনা সাড়ে তিনবছরে অসংখ্য, এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী যোগীর কোনও লুকোছাপাও নেই। ধর্ষকরা
যোগীর ঠাকুর সম্প্রদায়ের এবং বিজেপি ঘনিষ্ঠ। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বেঞ্চ সরকার ও
প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংবিধানের ২১ ও ২৫ ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকারের গুরুত্ব লঙ্ঘন
হয়েছে বলে বর্ণনা করে অপরাধী ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যস্থা গ্রহণের রায় দেয়।
স্বৈরতন্ত্রীদের কে মানে আদালতের রায়। বরং মুখ্যমন্ত্রী নিজে সমালোচকদের
চক্রান্তকারী, নৈরাজ্যবাদী, জাত ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংগঠন ও দেশবিরোধী বলে প্রচার
করে চলেছেন, ব্যবস্থাও নিয়েছেন। বিচারের প্রয়োজন
নেই,
বিবেচনার অর্থ নেই, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে সন্দেহ হলেই খুন করার অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে
যোগী শাসনে। এরকম ঘটনা ও অভিযান হয়েছে বছর খানেক পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ৭ হাজার।
বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্তদের সংঘর্ষে’র নামে খুন করে দেওয়া হচ্ছে, কোনও বিচার নেই। ‘ফ্রন্টলাইন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রথম
সারির আরএসএস কর্মীর কথায়, ‘‘এসব খুনের জন্য
তলায় হিন্দুত্বের শক্তি ও সমর্থকদের প্রচণ্ড জোর বেড়েছে। ভূমিপূজার মতো ঘটনা তাকে
আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে। এ সমস্ত কিছুই মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। সঙ্ঘ
পরিবারের ভেতরে এখন কথাবার্তা উঠছে যে, মোদীর জায়গায় সবচাইতে সম্ভাব্য ব্যক্তি হয়ে উঠছেন যোগী আদিত্যনাথ।’’ সরকারি
ক্ষমতা ব্যবহার করে যথেচ্ছ গুন্ডামির মাধ্যমে সব বাধা প্রশাসনিক বুলডোজার দিয়ে
গুঁড়িয়ে দেওয়ার কত আস্ফালন! যেমন পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর বীভৎসতা, তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলনের ওপর আক্রমণ, ২০১৭ সালের আগস্টে গোরক্ষপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে
অক্সিজেনের অভাবে ৭০ জন শিশুমৃত্য, অসুস্থ শিশুদের রক্ষায় নিজস্ব উদ্যোগে ব্রতী ডাঃ কাফিল খানকে দেশদ্রোহিতার
আইনে গ্রেপ্তার ও হয়রানি, দলিতদের ওপর
নির্যাতন এরকম ঘটনা অসংখ্য এবং এগুলিই বিজেপি শাসনের আসল চেহারা। তৃণমূলী বর্বরতা
রাজত্বকে হেসেখেলে উড়িয়ে দেবে বিজেপি এই প্রচারে অসহায় মানুষকে টানতে চাইছে।
এই বিজেপি’র সঙ্গে প্রথম হাত মিলিয়ে
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে লড়েছে এবং কেন্দ্রে বাজপেয়ী সরকারে মন্ত্রিত্ব করেছে
তৃণমূল। এখান থেকেই আরএসএস-বিজেপি’র সঙ্গে চিরকালীন অচ্ছেদ্য মিতালী তৃণমূলের।
এখন ভোটের খাতিরে ছায়াযুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের; হাঙ্গামা করে বলীয়ান হতে চায় বিজেপি এবং পালটা কাজ করে তৃণমূল এভাবে প্রচারে
উভয়েই যোগসাজশে ভেসে থাকতে চাইছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গে, মৌলিক অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার প্রশ্নে, শ্রমিক-কৃষক ও সমস্যা জর্জরিত মানুষের প্রতি মিথ্যা
প্রতিশ্রুতি দান ও দীর্ঘকাল ধরে কর্পোরেটপ্রেমী হয়ে নির্দয় আচরণ— দুর্নীতি পরায়ণ
অপরাধীদের নেতা বানানো, হরদম উভয় দলে
অনায়াস খুশিমতো আগমন-প্রস্থান ইত্যাদি নির্বাচনমুখী পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বাছাই
করার জন্য দেখিয়ে দিচ্ছে— যোগীর রাজত্বের মতো ফ্যাসিস্ত বর্বরতা দিয়ে শাসনে শাসিত
হতে কোন মুখ এরাজ্যে মানুষের পছন্দ হিন্দুরাষ্ট্রের প্রবক্তা বিজেপি’র, না তৃণমূলের একই বর্বর রাস্তার পথিক। এটাকেই প্রচারের
দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মিডিয়াকে, ঘটনা ও প্রতিদিন
ঘটানো হচ্ছে সেইভাবে— যাতে প্রকৃত ও বিশ্বস্ত বিকল্প বাম ও গণতান্ত্রিক সেকুলার
বিরোধীদের সম্মিলিত শক্তির দিকে মানুষের স্বাভাবিক গতিকে রোধ করার যায়। জন বিরোধী
চক্রান্ত বোঝার ও আসল মিত্র চেনার এই তো মোক্ষম সময়।