আশ্চর্য বৈপরীত্য
-
-
- Jan 08, 2021 02:41 [IST]
- Last Update: Jan 08, 2021 02:41 [IST]
সংখ্যালঘু হিন্দুদের শতাধিক বছরের পুরানো একটি মন্দিরে সংখ্যাগুরু মুসলিম মৌলবাদীরা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করার পর ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ পুলিশের বিরুদ্ধে শুধু কড়া পদক্ষেপই নেয়নি, একইসঙ্গে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করে দেবার নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি পুনর্নির্মাণের জন্য খরচ আদায় করতে বলেছে হামলাকারী ও ধ্বংসকারীদের কাছ থেকে। আর সংখ্যালঘু মুসলিমদের পাঁশ শতাধিক বছরের পুরানো একটি মসজিদ তথা ঐতিহাসিক স্থাপত্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠিত উদ্যোগ নিয়ে সংখ্যাগুরু হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারে কাজটি অন্যায় বিবেচিত হলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম শাস্তির নির্দেশ দেয়নি। উলটো সকল অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন— এতদিনের পুরানো একটি স্থাপত্য এভাবে ধ্বংস করা ঠিক হয়নি। ভেঙেই যখন ফেলেছে তখন আর কি করা যাবে। ক্ষমা ঘেন্না করে দেওয়াই ভালো। শুধু এখানেই দৌড় থামায়নি বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সুপ্রিম কোর্ট। ধ্বংস করে দেওয়া মসজিদের সমস্ত জমিটাই হস্তান্তরিত করে দিয়েছে মসজিদ যাদের উদ্যোগে ভাঙা হয়েছে সেই সংখ্যাগুরু হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে। সেই জমিতে তারা রামমন্দির নির্মাণ করবেন। অর্থাৎ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটা বৈধতা পেয়ে গেছে। ফলে অপরাধীদের সাজা পাবার কোনও প্রশ্ন নেই। উলটে মসজিদের জমি ধ্বংসকারীদের হাতে তুলে দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে এক খণ্ড জমি মুসলিমদের দেওয়া হয়েছে নতুন একটি মসজিদ বানানোর জন্য। লক্ষণীয়, দুর্বল গণতান্ত্রিক ও ইসলামিক রাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এমন একটি নজিরবিহীন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে একমাসও সময় লাগেনি। অথচ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে ২৭ বছর।
উভয় ক্ষেত্রে ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে পুলিশের উপস্থিতিতে। চোখের সামনে ইমারত ধ্বংস হলেও উভয় ক্ষেত্রেই পুলিশ বাধা দেয়নি। পাক সুপ্রিম কোর্ট এই অপরাধে পুলিশের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে পুলিশের দায়িত্ব পালন না করা অপরাধ হিসাবে গণ্যই হয়নি। মন্দির ধ্বংসের ঘটনায় বিশ্বের কাছে পাকিস্তান লজ্জিত বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাক সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় গোটা বিশ্বের কাছে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতের সম্মান ভূলুণ্ঠিত হলেও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের তার কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। পাক সুপ্রিম কোর্টের আরও নির্দেশ, গোটা পাকিস্তানো যেখানে যত মন্দির বা গুরুদ্বার আছে, তাতে পূজা অর্চনা বা উপাসনা হোক বা না হোক, তার খতিয়ান তৈরি করতে হবে। দেশে যেখানে যত মন্দির গুরুদ্বারের জমি বেদখল হয়েছে তা উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিতে হবে। দখলদারদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে এমন কিছুই শোনা যায়নি।
বৈপরিত্যের এই ছবিটা বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। একটা গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের কাছ থেকে যযাপ্রত্যাশিত ছিল সেটা মেলেনি। অথচ দুর্বল গণতন্ত্রের ইসলামিক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সেই প্রত্যাশা পূরণ করে দিয়েছে। পাকিস্তান সম্পর্কে এমনটা কেউ সাধারণভাবে প্রত্যাশা করে না। অনুরূপ ঘটনা প্রতিবেশী মুসলিম প্রধান বাংলাদেশেও বহুবার ঘটেছে। মুসলিম মৌলবাদীদের আক্রোশে হিন্দু ধর্মস্থান নষ্ট হলে সরকারই তা মেরামতির দায়িত্ব পালন করেছে। এটাই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্তব্য। সকল নাগরিকের সমানাধিকার রক্ষার সাথে সাথে সকল ধর্মাবলম্বীর ধর্মাচরণের অধিকারও রক্ষা করতে হয়। রাষ্ট্র না করলে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।