দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের অবসান চাই
-
-
- Oct 07, 2020 10:42 [IST]
- Last Update: Oct 07, 2020 03:00 [IST]
বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে এক বিজেপি নেতার হত্যার ঘটনা আবার সামনে এনেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কীভাবে দুষ্কৃতীদের রাজত্ব চলছে। যে অঞ্চলে ওই ঘটনা ঘটেছে সেখানে অনেকদিন ধরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেখানে রাজ্যের ও কেন্দ্রের শাসক দলের তরফে দুর্বৃত্তদের ব্যবহার করে অশান্তি চালানো হচ্ছে। এলাকার দখলদারি কায়েম করতে এই দুর্বৃত্তদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তৃণমূলের শাসনে এই এলাকায় ক্রমশ অপরাধীদের প্রতাপ বেড়েছে। জমি লুট, বেআইনি নির্মাণ, কারখানায় নৈরাজ্য, চটকল শ্রমিকদের ওপরে অত্যাচার, তোলা আদায়ের মৃগয়াক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলে ভাঙন ঘটে একাংশ বিজেপি’তে চলে যাবার পরে সংঘাত শুরু হয়েছে। এই এলাকায় সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা বাঁধানো হয়েছে। এক মাসের বেশি সময় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রাণ গেছে। রাজ্য প্রশাসন কোনও কার্যকরী হস্তক্ষেপও করতে ব্যর্থ হয়েছে। বারংবার আনুগত্যের বদলে পৌরসভার চরিত্র বদলেছে, দুষ্কর্মের চরিত্র একই রয়েছে। তৃণমূল থেকে বিজেপি, বিজেপি থেকে তৃণমূলে যাতায়াত অবাধে চলছে। তার ফলাফল খুনোখুনিতে গড়াচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের অপরাধী কারা, তা খুঁজে বের করা পুলিশের দায়িত্ব। কিন্তু দুই দলের দুর্বৃত্ত-সঙ্গ অত্যন্ত স্পষ্ট। তা শুধু বারাকপুরে নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই। তৃণমূলের রাজত্বে বামপন্থী কর্মীদের খুন করা হয়েছে, ঘরছাড়া করা হয়েছে। অগুন্তি অফিস পুড়িয়ে, ভেঙে দেওয়া হয়েছে; দখল করা হয়েছে। ইউনিয়ন দখল করা হয়েছে অস্ত্রের জোরে। স্বাভাবিক রাজনৈতিক কাজকর্ম করতে দেওয়া হয়নি। সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে লক্ষাধিক বামপন্থী কর্মীকে। ভোট লুটের মহোৎসব চলেছে। সরকারি অর্থ লুটের অবাধ ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের নেতারা প্রকাশ্যে খুন করার হুমকি দিয়েছেন, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বস্তুত দুষ্কৃতীরাই তৃণমূলের নেতা হয়েছেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার গঠনের পরে ধীরে ধীরে এদেরই একটি অংশ বিজেপি’তে নাম লিখিয়েছে। কেউ কেউ সাংসদ, বিধায়ক বনে গেছেন। এখনও মাঝখানে বসে আছেন অনেকে। এরই ফলাফল হচ্ছে আরও হিংসা, খুনোখুনি।
এই রাজ্য কোথায় গড়াচ্ছে? রাজ্যে উন্নয়নের পোস্টার-বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ, কিন্তু অর্থনীতিতে ক্রমেই অধোগতি। রাজ্যে শিল্প নেই, চালু শিল্পও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শহরে কাজ নেই, গ্রামেও কাজ নেই। লক্ষ লক্ষ রাজ্যান্তরী হচ্ছে। তরুণতর প্রজন্মের মধ্যে গভীর হতাশা তৈরি হয়েছে। কৃষক সঙ্কটে। গরিব মানুষের আয় ক্রমশ কমছে। এমন একটা কিছু এরাজ্যে হচ্ছে না যা দেখে আশার সঞ্চার হতে পারে। প্রশাসনের কাজ মুখ্যমন্ত্রী-বন্দনা। মুখ্যমন্ত্রীর কাজ আপন বন্দনা। এই সময়ে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে, এ তো স্বাভাবিক।
এখন একটি অন্য প্রবণতাও রয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমনে অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। এই অসন্তোষ সক্রিয় প্রতিবাদেরও চেহারা নিচ্ছে। এখন আর যা খুশি করে পার পেয়ে যাবার পরিস্থিতি নেই। দুষ্কৃতীরা চোখ রাঙাবে আর মানুষ পিছিয়ে যাবেন, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। অনেক জায়গাতেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মানুষ ঘিরে ধরেছেন, লুট করা টাকার হিসাব চেয়েছেন। আরও চাইবেন। বিজেপি চেষ্টা করবে এই অসন্তোষের সুযোগ নিতে। তৃণমূলের নেতারাও বিজেপি’র বেশ ধরে আশ্রয় খুঁজবেন। এই সময়ে ব্যাপকতম মানুষের সংঘবদ্ধ প্রতিবাদকে তীব্র করতে হবে। এক দুষ্কৃতী দলের বদলে অন্য দুষ্কৃতী দল নয়, চাই জনস্বার্থবাহী শক্তি যারা এরাজ্যকে ফিরিয়ে আনতে পারে শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের পথে।