ব্যাঙ্ক পুঁজিও কর্পোরেটের হাতে
-
-
- Nov 22, 2020 14:01 [IST]
- Last Update: Nov 22, 2020 14:01 [IST]
নরেন্দ্র মোদীর কল্যাণে পুঁজি ও সম্পদের বেপরোয়া কেন্দ্রীভবনের অভিযান এবার ব্যাঙ্ক ক্ষেত্র তথা আর্থিক ক্ষেত্রকেও গ্রাস করতে চলেছে। বিশ্বে এখন অর্থ ও সম্পদ বৈষম্যের শীর্ষস্থানীয় দেশ ভারত। দেশের মোট সম্পদ মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি ও পরিবারের হাতে তুলে দেবার ক্ষেত্রে সাফল্যের সর্বকালীন রেকর্ড তৈরি করেছেন মোদীরা। সাধারণ মানুষকে ধর্মের ও জাতপাতের আফিম খাইয়ে বুঁদ করে রেখে এবং উগ্র দেশপ্রেমে নাচিয়ে সকলের অলক্ষ্যে দেশের যাবতীয় সম্পদ আম্বানি-আদানিদের ঘরে মজুত করার ব্যবস্থা হয়েছে। একদিকে প্রভাবশালী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে দুর্বল করে এবং বেসরকারিকরণ করে কর্পোরেটের হাত যেমন শক্ত করা হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে সস্তায় পর্যাপ্ত পুঁজির জোগান দিয়ে, করছাড় দিয়ে, ঋণমকুব করে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে দু’হাতে মুনাফা লোটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রকে দুর্বল করে আম্বানিদের একচেটিয়া রাজত্ব কায়েমের ব্যবস্থা হচ্ছে। টেলিকম ক্ষেত্রকেও তুলে দেওয়া হচ্ছে আম্বানিদের হাতে। হালে খুচরো ও অনলাইন বিপণনের রাশও তুলে দেবার ব্যবস্থা হচ্ছে আম্বানিদের হাতে। দেশের বিমানবন্দরগুলি চলে যাচ্ছে আদানিদের হাতে। জলবন্দরগুলির নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছে তারা। এইভাবে একটার পর একটা শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রের একচেটিয়া বা সিংহভাগ দখলে চলে যাচ্ছে মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি তথা গুটিকতক শিল্পপতিদের হাতে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘আত্মনির্ভর অর্থনীতি’র ফানুস উড়িয়ে আসলে দেশের অর্থনীতির ওপর কর্পোরেটের পূর্ণ কর্তৃত্ব করার অধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এতদিন শিল্প-বাণিজ্য ও পরিষেবা ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া জোরদার করা হলেও, আর্থিক ক্ষেত্র কর্পোরেট আওতার বাইরেই ছিল। সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতো ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক ক্ষেত্র। এবার ব্যাঙ্ক, বিমা সহ সমস্ত আর্থিক ক্ষেত্রেই কর্পোরেট মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে উঠে পড়ে লেগেছে সরকার। রঘুরাম রাজন বা উর্জিত প্যাটেলকে দিয়ে একাজ সম্ভব হচ্ছিল না বলে একজন ইতিহাসে এমএ পাশ বশংবদ আমলাকে বসানো হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে। শক্তিকান্ত দাসকে দিয়ে দেশের ব্যাঙ্ক পুঁজির নিয়ন্ত্রণ শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেবার সুপারিশ করানো হয়েছে। দেশের বৃহৎ কর্পোরেট মালিকরাই ব্যাঙ্কের মালিকানা দখল করে জনগণের কষ্টার্জিত সঞ্চয় নিজেদের মুনাফার স্বার্থে ব্যবহার করবে।
এতকাল ভারতে কোনও কর্পোরেট বা শিল্প মালিককে ব্যাঙ্ক খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি ছিল ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার না থাকলে খোলা যাবে না। এই বিধিনিষেধ তুলে শিথিল করার পরিকল্পনা হয়েছে। তেমনি শিল্পপতিরা ব্যাঙ্কের মালিকানা দখল করে ব্যাঙ্কে জনগণের আমানত নিজেদের ব্যবসা ও মুনাফার কাজে ব্যবহারেরও ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ শুধু শিল্প পুঁজিই নয়, এবার ব্যাঙ্ক পুঁজিও চলে যাবে বৃহৎ শিল্পপতিদের দখলে। দেশের প্রাকৃতিক, খনিজসম্পদ যেমন চলে যাচ্ছে কর্পোরেটের হাতে, তেমনি আর্থিক ক্ষেত্রের কর্তৃত্বও যাচ্ছে তাদের হাতে। কর্পোরেট একচেটিয়া কর্তৃত্ব কায়েম করে মোদীরা সরকারকে কর্পোরেটের অনুগত করে ফেলার ব্যবস্থা করছেন।