আজ ব্রিগেড
-
-
- Feb 28, 2021 12:11 [IST]
- Last Update: Feb 28, 2021 12:11 [IST]
আজ ব্রিগেড। জনতার মহাসমাবেশ। রাজ্য বিধানসভার প্রাক নির্বাচনী পর্বে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক মানুষ লাখে লাখে জমায়েত হয়ে দৃঢ় ও সোচ্চার কণ্ঠে জানিয়ে যাবেন এ বাংলা কোনও হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি বা স্বৈরাচারী আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্তদের আর কোনও জায়গা দিতে রাজি নয়। রাজনীতির পরিসরে খেউড় সংস্কৃতিও তারা বরদাস্ত করতে রাজি নন। সোজা কথা সোজাভাবেই তারা জানান দিতে চান: রাজনীতিতে থাকবে শুধু রাজনীতির বিষয়। মানুষের জীবনজীবিকার প্রশ্ন, শিক্ষার প্রশ্ন। সমস্ত ছেলে মেয়ে শিক্ষার সুযোগ পাবে কিনা, পেলে শিক্ষান্তে কাজের সুযোগ মিলবে কিনা ভোটের আগে স্পষ্ট করে বলতে হবে। ক্ষমতালোভীদের। নিশ্চয়তা দিতে হবে অর্থের অভাবে বাংলার একটি শিশুও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না। শিক্ষাগতযোগ্যতা এবং অন্যান্য কারিগরি দক্ষতা যাই থাকুক সেই অনুযায়ী তাদের প্রত্যেকের কাজের সংস্থান করতে হবে।
কৃষক আসবেন তাদের ফসলের ন্যায্য দামের নিশ্চয়তার দাবিকে হাজির করতে। খেতমজুর আসবেন তাদের জীবনধারণের উপযোগী মজুরির নিশ্চয়তার দাবিতে। নারীর সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে সোচ্চার কণ্ঠ শোনা যাবে মহিলাদের কণ্ঠে। শিক্ষক-অধ্যাপকরা আসবেন শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়কে সামনে রেখে। সকলের জন্য শিক্ষা ও সকলের জন্য কাজের দাবিতে সামনের সারিতে থাকবে ছাত্র-যুব সমাজ। শ্রমিক-কর্মচারীরা সম্মানজনক মজুরি, কাজের নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যহীনতা এবং অর্জিত অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে সোচ্চার হবেন। আসলে সমাজের সব অংশ থেকে ধর্ম-বর্ণ-জাত নির্বিশেষে মানুষ আসবেন ব্রিগেডকে মিনি বাংলার রূপ দিতে। ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের নতুন চেহারা দেখা যাবে ব্রিগেডে। শ্রমজীবী মানুষ ব্রিগেডের বুকে আর একটা ইতিহাস রচনা করবেন।
এবারের ব্রিগেড শুধু লাল ঝান্ডায় মোড়া থাকছে না। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে উদ্ধত এবং সাম্প্রদায়িক হিংসায় মানুষের ঐক্যকে চুরমার করে দেবার ভয়ঙ্কর শক্তিকে জনবিচ্ছিন্ন করতে বামপন্থীদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে জাতীয় কংগ্রেসও। থাকছে আইএসএফ’র মতো সদ্য আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক শক্তিও। এছাড়াও থাকছে গণতন্ত্রের পক্ষে ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে আরও অনেক দল ও সংগঠন। কোনও দল বা সংগঠনের বাইরে থাকা অগুণিত মানুষ আসবেন যারা চান দেশের বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে, সংবিধানকে রক্ষা করতে রাজনীতি থেকে ধর্মকে শতযোজন দূরে সরিয়ে ব্যক্তি পরিসরে সীমায়িত করতে। ফলে ব্রিগেড চেহারা নেবে বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক গৌরবের পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তাবাহক হিসাবে। এক মানবিক বাংলার পুনঃরুত্থানের স্বপ্ন দেখাবে এই ব্রিগেড।
গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে চোর-ঘুষখোর-তোলাবাজ-দুর্নীতির নজিরবিহীন শাসনে অতিষ্ঠ রাজ্যের মানুষ। তেমনি ধর্মীয় ফ্যাসিস্ত ও সাম্প্রদায়িক শক্তির দেশ শাসনেও মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। অর্থনীতি অতলে ডুবেছে। বেকারে দেশ ছেয়ে গেছে। শিল্প নেই। বিনিয়োগ নেই। কৃষকের সঙ্কটের কোনও সুরাহা নেই। কাজের নিরাপত্তা নেই, নেই মজুরিরও। অন্যদিকে বিত্তবানের সংখ্যা বাড়ছে। কর্পোরেট মুনাফা আকাশছোঁয়া। রাষ্ট্রীয় সম্পদ হস্তান্তরিত হচ্ছে কর্পোরেটের হাতে। জাতীয় সম্পদ হারিয়ে সরকার নিঃস্ব হচ্ছে কর্পোরেটের দাসত্ব করার জন্য। অন্যদিকে গণতন্ত্রের শ্মশান তৈরি হচ্ছে। সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বিরোধিতা বা প্রতিবাদকে দেশদ্রোহিতা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ধর্ম ও জাতের নিরিখে মানুষকে ভাগ করে একের বিরুদ্ধে অন্যকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে বাংলার বুকে বাঁচার নতুন আশা নিয়ে ব্রিগেডে আসছেন প্রায় প্রতিটি বুথ থেকে মানুষ। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষা এবং রুজির অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মূল সুর বেঁধে দেবেন তারা। বাংলা রক্ষা করার এই মহাসংগ্রামে আসুন বাকিরা সকলে শামিল হই।