সুদিন এলো বলে!
-
-
- Mar 03, 2021 13:14 [IST]
- Last Update: Mar 03, 2021 03:00 [IST]
নরেন্দ্র মোদীর সাধের উজ্জ্বলা প্রকল্পের আলো নিভে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সালে ঘটা করে চালু করেছিলেন প্রকল্পটি। গর্ব করে বলেছিলেন দূষণমুক্ত জ্বালানি পৌঁছে দেবেন প্রতিটি রান্নাঘরে। কয়লা, কাঠ ও অন্যান্য প্রচলিত জ্বালানির যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেয়ে মুখে হাসি ফুটবে মা-বোনেদের। সরকার বিনামূল্যে গরিব পরিবারে সংযোগ দেবে রান্নার গ্যাসের। ইতিমধ্যে রান্নার গ্যাসে ভরতুকি তুলে দেবার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। চালু হয়েছে দুরকমের মূল্য। একটা ভরতুকি দেওয়া কম দামের গ্যাস। অন্যটাও ভরতুকিহীন বেশি দামের অর্থাৎ বাজার দামের গ্যাস। সরকার যেহেতু গ্যাসে ভরতুকি বাবদ খরচ কমিয়ে ফেলতে চায় নীতিগতভাবে তাই ভরতুকি দেওয়া গ্যাসের নতুন সংযোগ পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। আবেদন করলে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে সমস্যা হলেও অনেকেই বাজার দরের গ্যাস সংযোগ নিতে থাকে। ফলে বাজার দরের গ্যাস সংযোগ বাড়তে থাকে। সরকারের ভরতুকি দেবার দায় কমে।
কিন্তু সরকার চায় দ্রুত ভরতুকি খাতে সরকারের ব্যয় কমাতে। সরাসরি ভরতুকি কমিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ালে সমালোচনার ঝড় উঠবে। তাই নতুন কৌশল নেওয়া হয়। মূল দাম থেকে ভরতুকি বাদ দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে দাম নেবার চলতি ব্যবস্থা বদল করে বলা হয় গ্রাহক বাজার দরেই সিলিন্ডার কিনবে। ভরতুকির টাকা সঙ্গে সঙ্গে জমা পড়বে গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। নতুন ব্যবস্থা চালু করার জন্য গ্রাহকদের লাইন দিতে হয় অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার যুক্ত করতে। যাদের আধার ছিল তারা আধার কার্ড করার জন্য ছুটলেন। আবার যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই তারা ছুটলেন অ্যাকাউন্ট খুলতে। কিন্তু অ্যাকাউন্ট খুলতে টাকা লাগে বলে একটা বড় অংশের গ্রাহক সমস্যায় পড়েন। চালু হল জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট।
প্রথম প্রথম নিয়মিত জমা পড়ছিল ভরতুকির টাকা। গ্রাহকের কাজ বাড়ল। প্রতি মাসে এক বা একাধিকবার ব্যাঙ্কে গিয়ে জেনে আসতে হতো টাকা এসেছে কিনা। না এলে মাথায় হাত। অভিযোগ জানাবার উপায় নেই। ব্যাঙ্ক বলে ডিলারের কাছে যাও। ডিলার বলে ব্যাঙ্কে যাও। এইভাবে চলতে চলতে শেষে শুরু হয় আসল খেলা। দ্রুত কমতে থাকে ভরতুকির পরিমাণ। এদিকে উজ্জ্বলা প্রকল্পের জন্য গরিব দরদি সেজে প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছল পরিবারগুলির কাছে আবেদন জানান তারা যেন স্বেচ্ছায় ভরতুকি ছেড়ে বাজার দরে গ্যাস কেনেন। কয়েক লক্ষ গ্রাহক সেই আবেদনে সাড়া দেন গরিব পরিবারে গ্যাস সংযোগ দেবার সুবিধার্থে।
দেখতে দেখতে উজ্জ্বলা প্রকল্পে ৮ কোটি গরিবের গ্যাস সংযোগ চলে যায়। বিপুল সংখ্যক পরিবারে গ্যাস সংযোগ দিয়ে এবং সব গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করে সরকার সাফল্যের ঢালাও প্রচার শুরু করে। আর পেছন থেকে দ্রুতগতিতে বাড়াতে শুরু করে গ্যাসের দাম। বিপরীতে কমতে থাকে গ্যাসে ভরতুকি। মোদী সরকার ক্ষমতাসীন হবার সময় ২০১৪ সালে সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪১৯ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৮২০ টাকা। বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তেমনি ২০১৩—১৪ সালে সরকার গ্যাসে ৫২ হাজার কোটি টাকা ভরতুকি দিলেও মোদী সেটা কমাতে কমাতে ২০১৯—২০ সালে ১২ হাজার কোটি টাকায় এনেছে। আরও কমিয়ে শূন্য করার লক্ষ্য এই সরকারের। বর্তমানে সিলিন্ডার প্রতি ভরতুকি ২০ টাকারও কম। দিল্লি সহ অনেক জায়গায় ভরতুকি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। দু’এক বছরের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। উজ্জ্বলা প্রকল্পে গরিব মানুষ সস্তায় গ্যাস পাবার কথা। কিন্তু কিনতে হচ্ছে ৮০০ টাকারও বেশি দাম দিয়ে। গরিব মানুষের সেই সামর্থ্য নেই বলে তারা বছরে ১২টার জায়গায় বড়জোর একটা সিলিন্ডার কিনছেন। এরপর সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। সুদিন এল বলে।