কৃষকদের সংহতিতে রাত জাগছে কলকাতাও
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Jan 22, 2021 10:01 [IST]
- Last Update: Jan 22, 2021 10:01 [IST]
কলকাতা, ২১ জানুয়ারি— কবিতায়-গানে-নাটকে-স্লোগানে রাত জাগছে কলকাতা। দিল্লির চলমান কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে প্রহরীর মতো সহস্র চোখে বিনিদ্র রাত ধর্মতলায়।
লেনিন মূর্তির পাশে ওয়াই চ্যানেলের অস্থায়ী শামিয়ানার নিচে টানা তিন দিনের ধারাবাহিক অবস্থান মঞ্চ কার্যত হয়ে উঠেছে শাসকের রাজনীতির বিরুদ্ধে শোষিতের প্রত্যাঘাতের অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম। শুধু কৃষক বা খেতমজুররাই রাত জাগছেন না, রাত জাগছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা, শিক্ষক-অধ্যাপকরাও। রাত জাগছে হারমোনিয়াম, বেহালা, গিটার, বাঁশি। রাত জাগছেন সলিল চৌধুরি থেকে নির্মলেন্দু চৌধুরি। রাত জাগছেন সফদার হাসমি থেকে উৎপল দত্ত।
বুধবার রানি রাসমণি রোডে উপচে পড়া সংহতি সমাবেশের পর সন্ধ্যা থেকেই ওয়াই চ্যানেলের শামিয়ানা হয়ে উঠেছে একফালি সিঙ্ঘু-টিকরি-পলওয়াল। কৃষি আইন বাতিল করতে হবে— সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিপুর বা পলওয়াল সীমান্তের সহস্র তাঁবুর মতোই সমস্বরে বলছে ধর্মতলাও। বুধবার সারা রাত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সারা দিন, দিন পেরিয়ে আরও একটি রাত চলছে অবস্থান। খেতি থেকে কারখানা, স্কুল-কলেজ থেকে অফিস-আদালত, সংহতিতে গর্জে উঠছে অভিন্ন লড়াইয়ের সবকটি ফ্রন্ট। একসাথে।
বুধবারের রাত জাগা ওয়াই চ্যানেলে বৃহস্পতিবার ভোরে যেন নতুন উদ্যম। গ্রাম-মফস্বল-জেলা থেকে নতুন সহযোদ্ধারা এসে ভিড় জমিয়েছেন সাতসকালেই। দিল্লির কৃষক আন্দোলনে সংহতি জানিয়েই শুধু থেমে থাকছে না ওয়াই চ্যানেলের অবস্থান মঞ্চ, ছাত্র-যুব-মহিলা-শ্রমিক-কর্মচারীর নিজস্ব দাবিদাওয়া জুড়ছে মূল দাবির সঙ্গে। খোলা সড়কে লাগাতার রাত জেগে দোর্দণ্ডপ্রতাপ কেন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে পিছাতে বাধ্য করেছে কৃষক আন্দোলন। জানান দিয়েছে, লড়াই থেকে শিক্ষা নাও, শাসকের বিরুদ্ধে আগুয়ান প্রতিটি ফ্রন্টকে সমবেত করো, প্রত্যাঘাত ফিরিয়ে দাও। কৃষি আইন বাতিলের দাবির ফেস্টুনের পাশেই অবস্থান চত্বরে শ্রম কোড আইন বাতিলের সোচ্চার পোস্টার। জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের স্লোগান নিয়ে হাজির ছাত্র-ছাত্রীরা। আগামী নবান্ন অভিযানের আমন্ত্রণের বার্তা নিয়ে যুবরাও। বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির জমজমাট সন্নিবেশ তিন দিনের ওয়াই চ্যানেল।
অল ইন্ডিয়া কিষান সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র পশ্চিমবঙ্গ শাখার আহ্বানে অবস্থান মঞ্চে জেলা থেকে আসা কৃষক-খেতমজুরের সঙ্গেই রাত জাগছেন, দিন কাটাচ্ছেন চটকলশ্রমিক থেকে নির্মাণশ্রমিক, পরিবহণশ্রমিক থেকে আইসিডিএস কর্মীরাও। বৃহস্পতিবার দিনভর সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃত্বের বক্তব্যের সঙ্গেই সন্ধ্যা থেকে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সারা রাত সংগ্রামের গান, কবিতা, নাচ, নাটক, সিনেমা।
এদিন অবস্থানে বক্তব্য রাখেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র, সিআইটিইউ রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু, সারা ভারত কৃষকসভার নেতা ভক্তরাম পান, এআইকেকেএমএস’র রেনুপদ হালদার, আরওয়াইএফ’র বিজন মৈত্র, এআইএসকেএস’র মিহির পাল, টিউসিসি’র গনেশ রাম, বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের অনিমেষ মিত্র, এসবিআই স্টাফ অ্যসোসিয়েশনের গৌতম নিয়োগী, এআইইউটিইউসি’র অলোক ঘোষ প্রমুখ।
বৃহস্পতিবারের ধর্মতলায় গান গেয়ে শোনান শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, মোশারফ হোসেন, আকাশ চক্রবর্তী, শতদল। আবৃত্তি করেন গীতা অধিকারী, কাকলি চ্যাটার্জি। চলছে গণনাট্যের নাটক, চলছে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীও। এদিনের অবস্থান মঞ্চে বিএসএনএল কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষে ওমপ্রকাশ সিং ও শিশির রায় পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদারের হাতে ৫০হাজার টাকা তুলে দেন। সিআইটিইউ’র হুগলী জেলা কমিটির সম্পাদক অসিত মুখার্জি ২০হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন অমল হালদারের হাতে। কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এদিনই সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার কবরডাঙা মোড়ে গণচেতনা’র উদ্যোগে একটি সভায় বক্তব্য রাখেন অমল হালদার ও তুষার ঘোষ। গণচেতনা’র পক্ষ থেকে কৃষক আন্দোলনের সাহায্যার্থে ৫০হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে অমল হালদারের হাতে।