তৃণমূলের মুখেরাই এখন বিজেপি’র মুখ: সুজন চক্রবর্তী
-
-
- Jan 23, 2021 04:38 [IST]
- Last Update: Jan 23, 2021 04:38 [IST]
বেশ কিছুদিন দলের মধ্যে দর কষাকষি করার পরে শেষপর্যন্ত মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন বনমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি। শুক্রবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে এখনও তিনি তৃণমূল দল ছাড়েননি। বিজেপি তাঁকে দলে স্বাগত জানিয়ে রেখেছে। আর তৃণমূল নেতারা এলোমেলো বলতে শুরু করেছেন। কেউ তাঁকে দুএকটা ঝোড়ো পাতার সঙ্গে তুলনা করেছেন, আর কেউ আবার তাঁকে এখনও দলের গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মী বলে উল্লেখ করেছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে ইতিমধ্যেই তাঁর নাম মন্ত্রীতালিকা থেকে বাদ দিতে রাজ্যপালের কাছে সুপারিশ করেছেন।
হাওড়ার তিন বিধায়ক যে দল ছেড়ে বিজেপি’র পথে তা তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝতেই পেরেছিলেন। এরমধ্যে লক্ষ্মীরতন শুক্লা ইতিমধ্যেই তৃণমূল ছেড়েছেন, তবে এখনও বিজেপি’তে সরাসরি যোগ দেননি। বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াকে তৃণমূল এদিনই বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছে। বৈশালী ডালমিয়াও আগাম ইঙ্গিত দিয়ে চলেছিলেন বিজেপি’তে যাওয়ার। অবশ্য তিনি বরাবরই বিজেপি’র অনুমোদনেই তৃণমূলে অবস্থান করছিলেন, সেটা অনেকেই জানায় ওয়াকিবহাল মহল এতে বিস্মিত হয়নি। তৃণমূল বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছে বনমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জিকে নিয়ে। শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দল ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে বেসুরো কথা বলছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তিনি দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যাতে দল না ছাড়েন তার জন্য তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে শান্ত করার জন্য নানা আশ্বাস দিচ্ছিলেন। সেসবে কোনও কাজই হলো না। শুক্রবার তিনি পদত্যাগ করে খোলাখুলি দলে তাঁকে অবহেলার কথা বলেছেন, তাঁকে না জানিয়ে তাঁর দপ্তর পরিবর্তনে অপমানের কথাও বলেছেন।
তৃণমূলের একদল নেতা এখনও চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে রাজীব বিজেপি’তে না যান। কিন্তু কুণাল ঘোষের মতো আরেকদল নেতা রাজীবকে এখনই ‘বেইমান’ হিসাবে চিহ্নিত করে বলতে শুরু করে দিয়েছেন, ভোট এলেই ক্ষোভের কথা মনে পড়ে? এতদিন মন্ত্রীপদে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল না? অন্যদিকে বিজেপি নেতারা রাজীবকে স্বাগত জানিয়েছেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, রাজীব বিজেপি’তে এলে স্বাগত।
এদিকে, বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেছেন, একমাসে তিনজন পদত্যাগ করলেন। আরও করবে। সরকার বুঝতে পারছে কী চলছে? এটা সরকার চলছে নাকি? লুটেরাদের সরকার চলছে। একটাই পোস্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট। বেসুরো গোটা দলটাই ছিল, এখন একটা একটা করে তার কাটছে। এই তৃণমূল ঠেকাতে পারবে না বিজেপি’কে, আমাদেরকেই ঠেকাতে হবে। তৃণমূলের মুখগুলোই এখন বিজেপি’র মুখ। তৃণমূলের লুটেরারাই এখন বিজেপি’র লুটেরা। ওরা পরস্পরের বিরোধী কীভাবে হবে?
তৃণমূল এবং বিজেপি দুই পক্ষ থেকেই যেভাবে বামপন্থী ভোটারদের টানার জন্য বামপন্থীদের সাহায্য চাইছে সেই সম্পর্কে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ভোটের মুখে রামনাম। শুভেন্দু অধিকারীও বামেদের সাহায্য চাইছেন, সৌগত রায়ও বামেদের সাহায্য চাইছেন। যে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘পূর্ব মেদিনীপুরে লাল ঝান্ডা খুঁজে পাওয়া যাবে না’, সেই শুভেন্দু অধিকারীর মুখে এখন উলটোকথা। গুঁতো খেলে বেড়াল গাছে ওঠে। তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই জেতার জন্য এখন বামেদের সাহায্য চাইছে। মানুষ বলছে, দুটোকেই হারাতে হবে, বিকল্প বামেরাই।
গোলি মারো স্লোগান দিয়ে হুগলীর বিজেপি কর্মীদের গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, হুগলীতে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু তৃণমূলের মিছিলে যারা এই স্লোগান দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?
চক্রবর্তী বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের দাবি একটাই, শুধু ভাষণ দিলে হবে না। প্রত্যেক মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করুন, পরিবেশ তৈরি করুন।
মুখ্যমন্ত্রীর ট্যাব দেওয়ার ঘোষণা সম্পর্কে সুজন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা ট্যাব পেলে আমরা খুশিই হব। কিন্তু পাবে তো? ৯০০ কোটি টাকা লাগবে, এই ফান্ড অনুমোদন করা হয়েছে? বিধানসভাকে এড়িয়ে কীভাবে অর্থবরাদ্দ করল সরকার? আমি বিধানসভায় ২০১৬ সালে প্রস্তাব দিয়েছিলাম ছাত্র-ছাত্রীদের ল্যাপটপ দেওয়া হোক। তখন করেনি কেন? এখন ভোটের জন্য মনে পড়ছে?