কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন ভাঙতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী: মিশ্র
-
-
- Nov 22, 2020 13:01 [IST]
- Last Update: Nov 22, 2020 13:01 [IST]
নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ২১ নভেম্বর— বামপন্থীদের আন্দোলন থেকে বিজেপি’কে রক্ষা করতে এরাজ্যে তৃণমূলের সক্রিয়তা উল্লেখ করে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র বলেছেন, উনিই (মুখ্যমন্ত্রী) বিজেপি’কে ডেকে এনেছিলেন, উনিই রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারবেন না। আমরা বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়ব, ২৬ নভেম্বর ধর্মঘট হবেই। মুখ্যমন্ত্রী জোর করে ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা করলে, শান্তি ভাঙলে তার জন্য দায়ী হবেন মুখ্যমন্ত্রীই।
শনিবার সন্ধ্যায় বেহালা চৌরাস্তায় এবং হাজরা মোড়ে সিপিআই(এম)’র ডাকে দুটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয় ধর্মঘটের সমর্থনে। বেহালায় সূর্য মিশ্র এবং হাজরা মোড়ে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ভাষণ দেন। বেহালার জনসভায় সূর্য মিশ্র বলেন, কেউ কেউ বলে মোদী আর মুখ্যমন্ত্রীকে এক করে দেখবেন না। আরে বাবা, গান্ধী হত্যাকারী আরএসএস পরিচালিত দল বিজেপি যারা দেশে সরকার চালাচ্ছে, তার সঙ্গে এরাজ্যের তৃণমূলকে সমান বলব কেন? ইনি তো খুচরো। কিন্তু ইনিই বিজেপি’কে ডেকে এনেছেন এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইতে প্রতি পদে বাধা দিচ্ছেন, এটাই বাস্তব। রাজ্যে গণতন্ত্র ধ্বংস করে, দুশোর বেশি বামপন্থী কর্মীকে হত্যা করে সাড়ে নয় বছর ধরে সরকার চালাচ্ছেন। ধর্ম, ভাষা, জাতির নামে মানুষকে বিভাজনে সাহায্য করেছেন। শুধু তাই নয়, আমরা যখনই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি ইনি হামলা করেছেন। সাম্প্রতিক সময়েই কলকাতা শহরের ওপরে আমাকে সহ বামপন্থী নেতৃত্বকে দু’বার পুলিশ গ্রেপ্তার করে লালবাজারে নিয়ে গিয়েছিল, কারণ আমরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছিলাম। আমাদের বুকে যে প্ল্যাকার্ড ঝোলানো ছিল তাতে কেন্দ্রের কাছে দাবি লেখা ছিল, সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল এরাজ্যের পুলিশ। এবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্মঘটকেও যে মুখ্যমন্ত্রী সমর্থন করবেন এমন আশা আমাদের নেই। কিন্তু ভাঙার চেষ্টা করলে অশান্তির জন্য উনিই দায়ী থাকবেন।
মমতা ব্যানার্জির শাসনে রাজ্যে যে বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে তাকেই রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। এই সম্পর্কে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে মিশ্র বলেছেন, তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কিন্তু মোদী উত্তর প্রদেশ কিংবা গুজরাটে কেমন সুশাসন চালাচ্ছেন? উনিই বা কোন মুখে তৃণমূল বিরোধিতার কথা বলেন? প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেই মুখের কথার প্রতিযোগিতা করছেন, কিন্তু জনগণকে বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য কিছুই করছেন না। দু’জনেই ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেটা বাস্তবায়িত হয়েছে? কেউ পেয়েছেন নাকি ১০ কেজি করে খাদ্যশস্য? প্রধানমন্ত্রী অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন থেকে চাল ডাল তেল পেঁয়াজ বাদ দিয়ে দিয়েছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী আলুর দামটুকুও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি, যার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করার প্রয়োজন হয় না।
প্রকৃত বিকল্প হিসাবে বামপন্থীদের দেখিয়ে মিশ্র বলেছেন, সরকার দায়িত্ব পালন করছে না বলেই আমাদের কর্মীদের ক্যান্টিন চালাতে হচ্ছে, করোনা সচেতনতার প্রচার করতে হচ্ছে। তাতেও বাধা, এমনকি রক্তদান শিবিরেও তৃণমূল হামলা চালিয়েছে।
২৬ নভেম্বরের ধর্মঘটকে সফল করার আহবান জানিয়ে তিনি রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, আপনি তৃণমূল বিজেপি কিংবা যে কোনও দলেরই সমর্থক হোন না কেন ধর্মঘটের দাবিগুলির দিকে তাকিয়ে দেখুন। এগুলি তো সাধারণ মানুষেরই দাবি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এই মন্দার থেকে বেরোতে হলে লোকের হাতে টাকা দিতে হবে, বিনাপয়সায় খাদ্যশস্য দিতে হবে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে, কেবল তাহলেই মন্দা কাটিয়ে বেরোনো সম্ভব হবে। এই দাবিতে ধর্মঘটকে মানুষ সমর্থন করবে না? মানুষ মাথা না ঘামিয়ে চুপ করে বসে থাকবে? কখনোই নয়। যারা কর্মনাশা বলে ধর্মঘটের বিরোধিতা করছে তাঁরা জেনে রাখুন, কেন্দ্রের যে নীতিতে দেশের ১৫ কোটি লোক কাজ হারিয়েছেন, একদিন কাজ বন্ধ রেখেই সেই নীতির বিরুদ্ধে মানুষ লড়াই করবে। এবারের ধর্মঘটের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই ধর্মঘট সারা দেশে নতুন আন্দোলনের শুরু ঘটাবে।
এদিন হাজরা মোড়ের জনসভায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন, করোনা মহামারীর সময় দেশের সরকারের যখন লড়াই করার কথা ছিল রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে, তখন মোদী সরকার সেই লড়াইটা না করে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। লকডাউনের সময় মানুষকে কর্মহীন করেছে, ক্ষুধার্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের চরম বিপদে ফেলেছে। আর এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করোনাকে পাশবালিশ করে ঘুমোতে বলেছেন।
সেলিম বলেন, ১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরেই এরাজ্যের মিডিয়াকে ব্যবহার করে প্রচার শুরু হয়ে গেছে ২১-এ বিজেপি আসবে। ২১-এর আগে তো ২০, সেটা ভুলে গেলে চলবে? সেই ২০ সালে মহামারীর বিপদের সময় মানুষের জন্য এরা কী করেছে? একুশে আইন এনে মানুষের কণ্ঠরোধ করেছে, আর যখন মানুষকে এককাট্টা করে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রয়োজন, তখন মানুষকে ধর্মের নামে ভাগ করে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করেছে, দেশের বিপদ বাড়িয়েছে।
ধর্মঘটের সমর্থনে অনুষ্ঠিত হাজরার এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম) নেতা গৌতম গাঙ্গুলি। বেহালার জনসভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টি নেতা কেষ্ট সরকার, এছাড়াও ভাষণ দেন শমিতা হর চৌধুরি এবং গোপাল বারিক।