সরকারি কাজ আটকে আছে, ঘুরিয়ে হলেও স্বীকার মমতার
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Nov 20, 2019 10:30 [IST]
- Last Update: Nov 20, 2019 10:30 [IST]
গঙ্গারামপুর ও কোচবিহার, ১৯ নভেম্বর— ‘‘কাজ না হলে কিসের খতিয়ান দিচ্ছেন?’’ নিজের সরকারের অফিসারদের এই প্রশ্ন করেছেন মমতা ব্যানার্জি।
গঙ্গারামপুরের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী
মঙ্গলবার এই কথা বলেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের কাজের
হিসাবে বিস্তর ‘জল’ মেশানো হয়, এতদিন এই অভিযোগ
করতেন মানুষ, বিরোধী নেতারা। এবার খোদ
মুখ্যমন্ত্রীই তা স্বীকার করে নিয়ে জেলাশাসক সহ অন্যান্য অফিসারদের ওই প্রশ্ন
করেছেন।
একইসঙ্গে স্পষ্ট, কাজ হচ্ছে না। যা দাবি করা হচ্ছে নবান্ন থেকে, তা গ্রামেগঞ্জে সত্যিই নয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের কাজ কেন আটকে? জাতীয় সড়কের কাজ কেন এগচ্ছে না? একশো দিনের কাজেও হচ্ছে না। কাজ না হলে মানুষ আমাকে ধরবে।’’
মমতা ব্যানার্জির ধমকের মুখে দক্ষিণ
দিনাজপুরের জেলা শাসক বলেছেন, সদস্যরা বারবার
দলবদল করছেন। ফলে জেলা পরিষদে প্রায় অচলাবস্থা। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপি’র দিকে
এই লাগাতার হেলে পড়ার কোনও উত্তর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ছিল না। তাই তিনি বলেছেন, ‘‘সাত দিনের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলুন।’’
কোচবিহার থেকে এদিন সকালে
গঙ্গারামপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তারজন্য তড়িঘড়ি হেলিপ্যাড
তৈরি হয়েছিল। সোমবার কোচবিহারে তিনি দলীয় সভা করেছিলেন। মদনমোহন মন্দিরে পুজো
দিয়েছিলেন। তারপর পৌরসভার একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন।
এদিনও মমতা ব্যানার্জি এনআরসি এবং
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন(সিএবি) সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘রাজ্যে এনআরসি কিংবা সিএবি হবে না। আমাদের রাজ্যে যাঁদের রেশন কার্ড আছে, যাঁরা কোনও ব্যবসা কিংবা অন্য কিছু করেন, যাঁদের সন্তানরা এখানে স্কুলে পড়েন, যাঁরা সরকারি কোনও প্রকল্পের সুবিধা পান তাঁদের কোনও চিন্তা
নেই। তাঁরা সবাই নাগরিক।’’
বিজেপি’র সমালোচনা করার
তাগিদে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় ওরা বাঙালিদের উদ্বাস্তু এবং যাঁরা উদ্বাস্তু নন, তাঁদের মধ্যে ভাগ করার চেষ্টা করছে।’’ কিন্তু
উদ্বাস্তুদের প্রশ্নে এত দরদ দেখালেও তাঁর সরকার এই সংক্রান্ত দপ্তরটির আলাদা উপস্থিতি
রদ করেছে। মিশিয়ে দিয়েছে অন্য দপ্তরের সঙ্গে। সোমবার কোচবিহারে দলীয় কর্মীসভায় উদ্বাস্তুদের জমির নিঃশর্ত দলিল দেওয়ার কাজ তার হাত দিয়েই শুরু হয়েছে বলেও
বলতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। এও দাবি করেন, সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনির অধিকার দিয়েছেন তিনিই।
মঙ্গলবার গঙ্গারামপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রশাসনিক বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে
বাস্তুহারাদের নিঃশর্ত দলিল দেওয়ার তথ্য ছিল। যা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে
রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরেও গত
আট বছরে এই দপ্তরের কাজে বিশেষ কোনও অগ্রগতি ঘটেনি। শহরের এই কলোনি বাসিন্দাদের
১টাকা লিজ পাট্টা দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চালু করেছিল বামফ্রন্ট সরকার, এই সরকার তা দিচ্ছে না। সম্মিলিত কেন্দ্রীয়
বাস্তুহারা পরিষদ শুধু কোচবিহার জেলারই ১৮৪টি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের হাতে
নিঃশর্ত দলিল তুলে দেওয়ার দাবিতে গোটা আন্দোলন করেছিল। এই আন্দোলনের চাপে ১৮৪টির
মধ্যে মাত্র ১২টি উদ্বাস্তু কলোনিকে নিঃশর্ত দলিল দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি একটি
বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। অথচ বাকি উদ্বাস্তু কলোনিগুলির
কী হবে, তা নিয়ে কোনোরকম উত্তর
দিতে পারছেন না এই দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা। এহেন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী করা এই
দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে এদিন জানান ইউসিআরসি’র কোচবিহার জেলার সম্পাদক
মহানন্দ সাহা। তিনি বলেন, ১৯৫০সাল থেকে উদ্বাস্তু মানুষের জমির অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে সম্মিলিত
কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ। এই আন্দোলন করতে গিয়ে ৮৪ জনকে প্রাণ পর্যন্ত দিতে
হয়েছে।