Meyeder Brigade

মেদিনীপুরে মেয়েদের ব্রিগেডে উঠে এলো নিরাপত্তা, অধিকার ও নারী স্বাধীনতার

জেলা

গরীব মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়েদের ক্ষোভের অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ছড়ালো 'মেয়েদের ব্রিগেড' সভায়। বক্তাদের বক্তব্যর মধ্যেই একের পর এক গৃহবধূ সহ স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা প্রশ্নের মধ্যেই গ্রাম বাংলার নগ্ন চেহেরার দমবন্ধ পরিবেশ, শিক্ষা-স্বাস্থ্যর ভেঙে পড়া করুন দৃশ্য, নারী নির্যাতন সহ ধর্ষনের ঘটনা এবং থ্রেট কালচারে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় কী অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে একের পর এক গ্রাম মদ ও জুয়ার ঠেকে পরিনত হয়েছে। তার প্রতিকারে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার দাবির রসদ তুলে ধরলেন।
দাসপুর থানার সোনাখালিতে এক অর্ডিটোরিয়াম মেয়েদের ব্রিগেড সভায় সমাগম নজর কাড়া। হল ছাপিয়ে রাস্তায় এমনি খোলা ব্যালকনির ছাদে বস্তা ত্রিপল পেতে নিজেদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হওয়ার শপথ নিলেন। দাবি তুললেন চাইনা এমন ভাতা। চাই নারী নিরাপত্তা, স্বনির্ভর হওয়ার পদক্ষেপ ও ১০০ দিনের কাজ। গ্রামে কাজ নেই বলে তাঁদের বাড়ির পুরুষরা, কারোর বাবা, দাদা আজ ঘরছাড়া গ্রাম ছাড়া হয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হয়েছেন। ভয়ে ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় মহিলারা মেয়েরা গ্রামে থাকেন। থ্রেট কালচারের এমন পরিবেশে দমবন্ধ অবস্থায় গ্রামের মদের ঠেক এড়িয়ে মদ্যপ বাহিনীর দাপটের কাছে নীরব থাকতে হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের সোনাখালি, ডেবরা ব্লকের আলোককেন্দ্র এবং মেদিনীপুর শহরে বিদ্যাসাগর হলে সকাল, দুপুর ও বিকাল মিলিয়ে তিনটি স্থানে মেয়েদের ব্রিগেড সভা সংগঠিত হয়।
মেয়েদের নিরাপত্তা, অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য, রাজ্য জুড়ে মেয়েদের ওপর হিংসা ও যৌন হয়রানি, দলবদ্ধ ধর্ষনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি না দেওয়ায়, তা বেড়ে চলা রুখতে এবং প্রতিকারে সহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রসারে সহায়তা করতে মহিলাদের অংশগ্রহন এবং তাতে আইনি সহায়তার লক্ষে এমন তিনটি কর্মশালা হয়। বক্তা ছিলেন এসএফআই নেতা দীধিতি রায়, আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জি এবং চিকিৎসক সুদক্ষিনা দাস।
ডেবরা এবং মেদিনীপুর শহর দুই সভায়ও মহিলা সহ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অংশ গ্রহন নজর কাড়ে। দাসপুরের সভায় উঠে আসে গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলি বন্ধ চিকিৎসক না থাকায়। দাসপুরের গ্রামীন হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে কিছুই পাওয়া যায় না। নোংরা আবর্জনার স্তূপের মাঝে স্বাস্থ্য পরিষেবার নামে রোগীকে রেফার চিঠি। আর ঘাটাল মহকুমা নামে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। কেবল  প্রসূতি বিভাগ ছাড়া আর কোনও বিভাগেই নাম মাত্র সপ্তাহে দুই দিন চিকিৎসা মেলে। তাতেও বাইর থেকে স্যালাইন ওষুধ কিনেন দিতে হয় রোগীর পরিবারকে।
স্কুল গুলিতে বিষয় ভিত্তিক সব শিক্ষক নেই। আবার কোথাও পঞ্চম  থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত কোনো বিষয়ে একজন শিক্ষকই রয়েছেন। সরকারী  শিক্ষার এমন করুন দশা তুলে ধরেন স্কুলের মেয়েরা। প্রশ্ন তোলেন এরাজ্যে ধর্ষকদের শাস্তি দিতে পারে না কেনোও মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সিকিউরিটির ঘেরাটোপে থাকেন। তাহলে আমরা মহিলারা কী সন্ধ্যার আগেই ঘরে ঢুকে পড়বো। এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ হোক দাবী তুললেন মেয়েরা।
সভা থেকে আইনি সহায়তা কেন্দ্র  চালু, কর্মরত মহিলাদের শিশুদের জন্য ক্রেশ তৈরি করা, মহিলাদের জন্য পাবলিক টয়লেট, পাড়ায় নারী নিরাপত্তার সমস্যা থেকে গার্হস্থ্য হিংসা, আত্মসুরক্ষা, ক্যাম্পাস থেকে রাজপথ ছাত্রীসহ সমস্ত নারীর স্বাধীন-নিরাপদ জীবনের অধিকার নিশ্চিত করতে মহিলারা আর থ্রেট কালচারের কাছে মাথানত করতে নারাজ। একত্রিত হয়ে ভয়ভীতির রাজনীতি মুক্ত পরিবেশ গড়তে মেয়েদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের পথ নতুন মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার শপথ নিলেন মেয়েরা।

Comments :0

Login to leave a comment