জয়ন্ত সাহা- দিনহাটা
পুলিশ- প্রশাসন শাসক দলের হয়ে বসে ছিল ৪৮ঘন্টা। রবিবার সকাল ১১ টায় পার্টি অফিসে তৃণমূলের ঝুলিয়ে দেওয়া তালা ভেঙে ফের লালপতাকা উড়িয়ে দিনহাটার সিপিআই(এম) কর্মীরা বুঝিয়ে দিল, মন্ত্রী উদয়ন গুহ লালঝান্ডা নিকেশ করার যতই ফন্দি আটুক,অকুতভয় কর্মীরা সেসবের পরোয়া করে না।
বৃহস্পতিবার মাথাভাঙায় ডিওয়াইএফআইয়ের জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে মীনাক্ষী মুখার্জির সমাবেশের উপচে পড়া ভীড় দেখে সন্ত্রস্ত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন,‘‘চ্যালেঞ্জ রইলো মীনাক্ষী মুখার্জি দিনহাটায় এসে তার তেজ ও যোশ দেখিয়ে যাক এক বছরের মধ্যে।’’ এদিন পার্টি অফিস খুলে ফের লালপতাকা উড়িয়ে সিপিআই(এম) জেলা নেতা প্রবীর পাল বলেন, মীনাক্ষী মুখার্জিকে যোশ দেখাতে দিনহাটায় আসতে হবে না। এক বছর নয় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দিনহাটার পার্টি কর্মীরা তাদের তেজ ও জোশ দেখিয়ে দিল। পুলিশের আইসি, এসডিপিও আর মহকুমা শাসককে শনিবারই দিনহাটার সিপিআই(এম) নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল তৃণমূলের গুন্ডারা পার্টি অফিসে শুক্রবার ভাঙ্গচুর করে তালা ঝুলিয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কর্মীরা নিজেরাই নিজেদের অফিস খুলে ফের দলের কাজকর্ম ওই অফিস থেকেই শুরু করবে।
পুলিশ, প্রশাসন কেউ কোন ব্যবস্থা নেয় নি। রবিবার সকাল ১০ টা থেকেই পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হন সিপিআই(এম) কমীরা। পার্টির জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় ও অন্যান্য নেতৃত্ব প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের সামনে এসে হাজির হতেই তৃণমূলের লাগানো তালা ভেঙে পার্টি অফিসে ঢোকেন শ্লোগান দিয়ে। তার আগে পার্টির রক্তপতাকা উত্তোলন করেন জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়।
পার্টি অফিসেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনন্ত রায় বলেন,‘‘যারা লালপতাকার অপমান করেছে তাদের সাথে কোন আপোষ নয়। ফের এই অফিস থেকেই শুরু হবে মানুষের জন্য লড়াই। একজন মন্ত্রী বিরোধীদের কন্ঠরোধ করতে যে সন্ত্রাস করেছে তা রুখে দেবার ক্ষমতা লালঝান্ডার কমীদের আছে।’’ এদিন ফের অফিস খোলার পর দলকে যারা ভালোবাসেন তারা নিজেরাই এগিয়ে এসে নতুন চেয়ার টেবিল কিনে দলকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এরপর শুরু হয় ধিক্কার মিছিল। মিছিল দিনহাটা থানা অব্দি যায়। অনন্ত রায় সহ ৮ জনের প্রতিনিধি দল থানায় গিয়ে সাফ জানিয়ে আসে ২০১১ সাল থেকে ৮ বার এই অফিসে হামলা করেছে তৃণমূল। প্রতিবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নাম দিয়ে এফআইআর করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয় নি। এবার পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে পুলিশের বিরুদ্ধেই আদালতের দ্বারস্থ হবে পার্টি। এদিন যখন শহরের ২ নং ওয়ার্ডের প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন খুলে পার্টি কর্মীরা ফের অফিস নতুন করে সাজাচ্ছেন, তখন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ’র কনভয় পার্টি অফিসের সামনে দিয়ে হুটার বাজিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিল। মন্ত্রী গাড়িতে বসেই তাকিয়ে দেখে গেলেন, মন্ত্রীর চ্যালেঞ্জকে উপেক্ষা করে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই খুলেছে পার্টি অফিস। উড়ছে লালঝান্ডা।
এদিকে পার্টির জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় পার্টি অফিসে কর্মীদের মাঝে হাজির হতেই শুক্রবারের অফিস ভাঙ্গচুর ও তালা লাগানোর সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার মন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে মীনাক্ষী মুখার্জিকে হুমকি দেওয়ার কিছুক্ষন পরেই পার্টি অফিস থেকে ৫০০ মিটার দূরের মন্ত্রীর বাড়ির দিক থেকে দিনহাটা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সাবির সাহা চৌধূরি, রানা বনিক, পার্থ সাহা’র নেতৃত্বে ২৭/২৮ জনের একটি দল এসে প্রথমে ভাঙ্গচুর করে, পরে সঙ্গে নিয়ে আসা তালা অফিসের দুই গেটে ঝুলিয়ে দিয়ে ফের মন্ত্রীর বাড়ির দিকে চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য,ওরা পরিকল্পনা করেই ভাঙচুরের ছবি যাতে মিডিয়ার হাতে না যায় সেজন্য সঙ্গে তালা নিয়ে এসেছিল। এদিকে রবিবার সকাল থেকেই দিনহাটা শহরে খবর ছড়িয়ে গেছিল, তালা ভেঙ্গে সিপিআই(এম) কর্মীরা ফের তাদের অফিস খুলবে। বাধা দেওয়ার জন্য তৃণমূলীরা জড়োও হয়েছিল। কিন্তু পার্টি কমীদের লড়াকু মেজাজের সামনে তাদের আসার হিম্মৎ হয় নি।
Comments :0