মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের চা শ্রমিকদের প্রত্যাশা অপূরনীয়ই থেকে গেল। চলতি বছরের গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে দফায় দফায় বৈঠকের পরে এখনও চূড়ান্ত হয়নি পার্বত্য বাগিচা শ্রমিকদের বোনাস। এবারের উত্তরবঙ্গ সফরে দার্জিলিঙের ম্যালে চা শিল্প নিয়ে অনেক গল্প কথা শোনানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন পাহাড়ের চা বাগানের শ্রমিকদের পাট্টা সমস্যারও নাকি সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু বোনাস ও বোনাস সংক্রান্ত দীর্ঘ আন্দোলনে থাকা পাহাড়ের লক্ষাধিক বাগিচা শ্রমিকদের দাবি প্রসঙ্গে কোন কথা বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। 
শারদোৎসব ও দীপাবলী উৎসব পেরিয়ে যাবার পরে গত ৬ নভেম্বর কলকাতার সভার দিকে তাকিয়ে ছিলেন পাহাড়ের লক্ষাধিক শ্রমজীবি মানুষ। মালিকের অনমনীয় মনোভাবের কারণে পাহাড়ের চা বলয়ের শ্রমিকদের বোনাসের কোন ফয়সলা না হওয়ায় হতাশ হতে হয়েছে পাহাড়ের চা শ্রমিকদের। তবে মালিকপক্ষের অনুপস্থিতির কারণে উৎসবভাতা মীমাংসায় সভা ভেস্তে গেলেও পাহাড়ি শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জেদ আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, পরবর্তী বোনাস সংক্রান্ত বৈঠক হবে আগামী ১৬ নভেম্বর। চলতি বছরের উৎসবের মরশুম শেষ হলেও এখনও ন্যায্য ও সম্মানজনক হারে উৎসব ভাতা না মেলায় ক্ষোভ বাড়ছে পাহাড়ের বিস্তীর্ন চা বলয়ের শ্রমিকদের মধ্যে। যদিও শুরু থেকেই উৎসবভাতা পাহাড়ের বাগিচা শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছিলো মালিকপক্ষ। মালিকের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী অবস্থান কোনভাবেই মেনে নিতে রাজি নন পার্বত্য এলাকার চা বলয়ের শ্রমজীবি মানুষেরা। শ্রমজীবি মানুষের দাবি একটাই ন্যায্য ও সম্মানজনক হারে উৎসবকালীন ভাতা এক কিস্তিতে দিতে হবে মালিককে। 
চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়ন সহ আটটি শ্রমিক সংগঠনের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাহাড়ের বাগিচা শ্রমিকদের বোনাস ফয়সলায় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতার বৈঠকে যোগদানের আগে চা শ্রমিকদের দরবারে হাজির হয়ে দফায় দফায় গণ স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চলেছে। প্রায় ৫০ হাজার চা শ্রমিকের কাছে পৌঁছে গিয়ে গন স্বাক্ষর সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে নিয়ে কলকাতায় সভায় যোগ দিয়েছিলেন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বোনাস সমস্যার নিষ্পত্তি হবে এই আশায় বুক বেঁধেছিলেন পাহাড়ি শ্রমজীবি মানুষ। কিন্তু সরকার ও মালিক কথা রাখেনি। শ্রমিকদের আশা বিফলে গেছে।  
দীর্ঘদিন ধরে শুধুমাত্র সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে আছে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন। চা শ্রমিকদের পেনশন, গ্র্যাচুয়িটি বাবদ বহু বকেয়া টাকা পড়ে রয়েছে। এমনকি সরকার ঘোষিত অন্তর্বর্তী মজুরির টাকাও শিল্প ক্ষেত্রে সব অংশের শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে লাগু হয়নি। উপেক্ষিত রয়েছে উত্তরবঙ্গের বহু মিশ্র জনজাতির চা শ্রমিকদের বাসস্থানের জমির অধিকারের দাবি। মুখে চা শ্রমিকদের বসবাসের জন্য জমির পাট্টা দেবার ভরসা দেওয়া হলেও, পূজিপতিদের হাতে চা বাগানের জমি তুলে দেবার যোগসাজসে মেতে উঠেছে সরকার। চা শ্রমিকদের ওপর দৈনন্দিন বেড়ে চলেছে কাজের চাপ। রয়েছে সরকারি বঞ্চনাও। রূপায়ন হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড়কে ঘিরে শিল্পস্থাপন ও কর্মসংস্থানের কোন একটি প্রতিশ্রুতিও। বোনাস ইস্যু সহ সমস্ত অবহেলা ও বঞ্চনার মোকাবিলা করতে চা বলয়ের বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে রাস্তার আন্দোলনে পা বাড়াতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন পাহাড়ের সমস্ত অংশের শ্রমজীবি মানুষ।
Tea Worker’s Bonus
চূড়ান্ত হয়নি বোনাস, ক্ষোভ বাড়ছে পাহাড়ের বিস্তীর্ন চা বলয়ে
 
                                    
                                
                                    ×
                                    ![]() 
                                
                                                         
                                         
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0