unity against religious fundamentalism and terrorism

ধর্মীয় মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চাই মানুষের ঐক্য

রাজ্য কলকাতা

অচিন্ত্য মল্লিক
আলোচনার শুরুতে ধর্মের উদ্ভব সম্পর্কে মার্কসবাদী ব্যাখ্যা সংক্ষেপে উল্লেখ করা প্রয়োজন। আদিম যুগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে মানুষের কোনও ধারণা না থাকায় একটা অসহায়তা বোধ গড়ে ওঠে। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণার জন্ম নেয়। পার্থিব শক্তিগুলি অতিপ্রাকৃত শক্তির রূপ ধারণ করে, আর এর থেকেই ধর্ম সম্পর্কে আদিম ধারণার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে, শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অসহায়তা বোধ আরও তীব্র হয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই আন্দোলন করতে না পারার ফলে অসহায়তা বোধ থেকে ধর্ম মানুষের মধ্যে শিকড় গেড়ে বসে। 
মার্কস বলেছেন, ধর্ম মানুষকে তৈরি করেনি, মানুষই ধর্ম তৈরি করেছে। মানুষ তৈরি করেছে সমাজ, রাষ্ট্র। আবার এই সমাজ এবং রাষ্ট্র, দুনিয়া সম্পর্কে মানুষের চেতনাকে উলটে দেয়। আর এর জন্য ব্যবহৃত হয় ধর্ম। মার্কসের ভাষায় ‘এই রাষ্ট্র, এই সমাজ সৃষ্টি করে ওলটানো জগৎ চেতনা। এই ওলটানো জগৎ চেতনার সাধারণ তত্ত্বই হলো ধর্ম।’ 
মার্কসের বিখ্যাত উক্তি এক্ষেত্রে আমরা স্মরণ করতে পারি- ‘‘ধর্ম হলো জনগণের জন্য আফিম।’ কিন্তু এই উক্তিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে ভুল হয়ে যাবে । তিনি বলেছেন, ‘‘ধর্ম হলো নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, হৃদয়হীন জগতের হৃদয় ঠিক যেমন আত্মাবিহীন পরিবেশের আত্মা। ধর্ম হলো জনগণের জন্য আফিম ।’’ ধর্মের জগৎ বাস্তব জীবনের বিপরীত জগৎ ।
মার্কসের ধর্ম সম্পর্কে মূল কথা হলো—
-ধর্ম হলো বাস্তব জীবনের দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
-ধর্ম হলো অসহায় নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়।
-ধর্ম নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাস।
-ধর্ম হলো হৃদয়হীন জগতের হৃদয় ।
বাস্তব জীবনের দুঃখ-কষ্টের প্রতিকারের কোনও পথ না পেয়ে ধর্মের মধ্যেই মানুষ পরিত্রাণের পথ খোঁজে।

ধর্মীয় মৌলবাদ

ধর্মীয় মৌলবাদ বলতে আমরা কি বুঝি ? ধর্মীয় মৌলবাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি? ধর্মীয় মৌলবাদের মূল লক্ষ্য হলো নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টি করা, হিংসার পরিমণ্ডল গড়ে তোলা। সংখ্যাগুরু মৌলবাদী কার্যকলাপের তীব্রতার ফলে সংখ্যালঘুদের মধ্যে একটা নিরাপত্তাবোধের অভাব তৈরি করে আর এই নিরাপত্তাবোধের অভাব থেকেই সৃষ্টি হয় সংখ্যালঘু ধর্মীয় মৌলবাদ। সংখ্যাগুরু এবং যে কোনও সংখ্যালঘু মৌলবাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন— মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতিকে ধবংস করে বিভাজন সৃষ্টি করা। আমাদের দেশেও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রতিষ্ঠা ও ক্রিয়াকলাপ উপরোক্ত বক্তব্যের সত্যতাকেই প্রমাণ করে। ধর্মীয় মৌলবাদের লক্ষ্য শুধু মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করাই নয়— ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রের তারা বিরোধী, একথা তারা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করতে দ্বিধা করে না ।
আমাদের দেশে হিন্দু মৌলবাদী শক্তি আরএসএস’র প্রতিষ্ঠা ১৯২৫ সালে। আরও আগে ১৯২০ সালে সাভারকার রচিত ‘হিন্দু কে’ গ্রন্থে হিন্দুত্ববাদের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘আমাদের হিন্দুত্বের সাথে হিন্দুধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। হিন্দুত্ব আমাদের রাজনৈতিক প্রকল্প (Political Project)। আমাদের লক্ষ্য হলো সামরিক বাহিনীর হিন্দুত্বকরণ, হিন্দুত্বের সামরিকীকরণ। বর্তমান সময়ে আমরা আমাদের দেশে যা প্রত্যক্ষ করছি তা এরই প্রতিফলন। 
পরবর্তীতে দ্বিতীয় আরএসএস প্রধান এম এস গোলওয়ালকার একটি বই লেখেন। ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত এই বইটির নাম ছিল, ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইন্ড’। হিন্দুরাষ্ট্র নিয়ে ফ্যাসিস্তদের যে মূল বক্তব্য সেটিই আছে বইটিতে। এই প্রেক্ষাপটেই এর দু'বছর পরে ১৯৪১ সালে ২৬ আগস্ট প্রথম মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন ‘জামাত-ই ইসলামি’র আত্মপ্রকাশ ঘটে মৌলানা আবুল আলা আল মাওদুদির নেতৃত্বে পাঠানকোটে এক সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে। দেশ বিভাগের পরে মাত্তদুদি পাকিস্তানে চলে যান এবং তীব্রভাবে মুসলিম মৌলবাদের ধারাবাহিক প্রচার সংগঠিত করে চলেন এই উপমহাদেশে।
সংখ্যাগুরু মৌলবাদ ও সংখ্যালঘু মৌলবাদের পথ, লক্ষ্য এবং মতাদর্শের কোনও ফারাক নেই- যা তারা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করে। আরএসএস’র প্রধান গোলওয়ালাকারের মতই জামাত-ই ইসলামির প্রধান মাওদুদি গর্বের সাথেই উল্লেখ করেন, হিটলার তাদের আদর্শের প্রতীক। আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছে, একইভাবে মাওদুদি মুসলিম জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার অর্থ জনগণকে ভুল পথে পরিচালনা করা— একথাও মাওদুদি উল্লেখ করেন। দুই ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিরই লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষা করা।

সন্ত্রাসবাদ এবং তার উৎস

জামাত-ই ইসলামি-র রাস্তা ধরেই আইসিস (ISIS), জৈশি মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা সহ নানা নামে পাকিস্তান সহ এই উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন গড়ে ওঠে। যেমনভাবে আরএসএস’র আদেশের ভিত্তিতে হিন্দু মহাসভা, বজরঙ দল সহ বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে যাদের কার্যকলাপকে সন্ত্রাসবাদী বললে বেশি বলা হবে না। বাবরি মসজিদ ধ্বংস কিংবা গুজরাট গণহত্যা অথবা বর্তমান সময়ে বুলডোজার হামলা, গৌরী লঙ্কেশদের মতো মুক্তমনা মানুষদের এবং খ্রিস্টান যাজকদের হত্যালীলাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বলা অসঙ্গত নয়। পাকিস্তান সরকার যেমন সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেয়, আমাদের দেশে এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও সরকারি মদতেই এসব সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সংগঠিত হয়েছে।
আগেই আলোচিত হয়েছে, দু’ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনই সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষা করে এসেছে। ফলস্বরূপ, এই সব ধরনের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তাই নয়, সাম্রাজ্যবাদ প্রয়োজনবোধে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন গড়ে তোলে। আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদা গড়ে তুলতে আমেরিকার ভূমিকা সর্বজনবিদিত। যে ওসামা বিন লাদেনকে আমেরিকা তৈরি করল, তাদেরই হাতে আমেরিকার ‘ট্যুইন টাওয়ার’ ধবংস হয় শেষ পর্যন্ত।

পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা

গত ২২ এপ্রিল মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় কাশ্মীরের পহেলগামে ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু ঘটে। সন্ত্রাসবাদীদের নিকেশ করা এবং এদের মদতদাতা পাকিস্তান সরকারকে শিক্ষা দিতে ভারতের কাছে সামরিক পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল, ভারতের এই পদক্ষেপকে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং সর্বস্তরের মানুষ সমর্থন করেছে। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরের সমস্ত দল-মত-ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ পথে নেমে ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষায় এবং সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, ধর্মঘট করেছেন। ভারতের ইতিহাসে এটা ইতিবাচক দিক।
সামরিক অভিযানের পরে আমাদের রাজ্যের বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ান পুণম কুমার সাউ মুক্ত হয়েছেন। দেশের সরকারের দাবি অনুযায়ী ৯টা সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধবংস হয়েছে, নিহত হয়েছে শতাধিক সন্ত্রাসবাদী। দেশের মানুষের দাবি, সমস্ত সন্ত্রাসবাদীদের মদত বন্ধ করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
ভারতের সামরিক অভিযান এবং ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে আমেরিকার হস্তক্ষেপে? প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। এখন বলছেন সংঘর্ষ বিরতিতে আমেরিকার কোনও ভূমিকা নেই। কিন্তু ঘটনা প্রবাহে তো কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। ভারত কিংবা পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণার তিন ঘণ্টা আগে ট্রাম্প এই ঘোষণা করেন কীভাবে? উত্তর নেই। ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি অনুযায়ী ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ নিয়ে তৃতীয় পক্ষের প্রবেশাধিকার নেই। তাহলে সেই চুক্তি লঙ্ঘন করা হলো কি? এমন কি মার্কিন বিদেশ সচিব জানিয়েছেন, দুই দেশ নিরপেক্ষ জায়গায় আলোচনায় বসবে। কোথায় আলোচনা হবে তাও তারাই ঠিক করে দিচ্ছে কেন? উত্তর আসেনি। ট্রাম্প কার্যত বলেছেন, দু’দেশকে তিনি ধমকে দিয়েছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে না হলে দু’দেশেরই অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। এমনকি অতি সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের ‘হাজার বছরের’ সমস্যা তিনি মিটিয়ে দেবেন। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির স্বার্থসিদ্ধি হয়ে গেছে, যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ কিংবা বাণিজ্য যুদ্ধে ইতিমধ্যেই আমেরিকা ধাক্কা খেয়েছে চীনের পালটা শুল্ক বৃদ্ধির ঘটনায়। ফলে তার বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে আপাতত তাকে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা স্থগিত রাখতে হয়েছে। 
পহেলগামের ঘটনা ঘিরে ভারত পাকিস্তানের সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু বজায় রাখা হয়েছে যুদ্ধ উন্মাদনা। এই সময়ের কিছু ঘটনা যা দেশে ঘটে চলেছে সেই ঘটনাবলীকে সংখ্যাগুরু মৌলবাদ এমনকি সন্ত্রাসবাদ বললেও অত্যুক্তি হবে না। কাশ্মীরের যে সমস্ত ছেলে-মেয়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পড়াশুনো করতে এসেছে, তাদের ওপর হামলা সংগঠিত হচ্ছে। এসএফআই আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা থেকে তাদের তুলে নিয়ে এসে দিল্লির আশ্রয় শিবিরে থাকার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। দেশের কিংবা সংশিষ্ট রাজ্য সরকার নীরব। কেন? কাশ্মীরীরা দেশের শত্রু?
আরও তিনটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতেই পারে এ প্রসঙ্গে। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি এবং তাঁর কন্যা সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন আরএসএস বিজেপি নেতারা। প্রধানমন্ত্রী নীরব। দ্বিতীয়তঃ ভারতের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন মধ্য প্রদেশের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী বিজয় শাহ। মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত এফআইআর হয়েছে। এবং তৃতীয়ত যে নৌসেনা অফিসার বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে নিহত হন তাঁর স্ত্রী হিমাংশীকে পর্যন্ত হিন্দুত্ববাদীরা রেহাই দেয়নি। তাঁর অপরাধ স্বামীকে হারিয়ে শোকাহত অবস্থাতেও বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদীরা ধর্ম বিচার করে খুন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু, দেশজুড়ে কাশ্মীরি আর মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। একথা বলার জন্য তাঁকেও কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছে আরএসএস, বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী বা শাসক দল নীরব দর্শক কেন? উত্তর কে দেবে? এসব কিছুর পরেও স্বজনহারা পর্যটকদের পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন মহল থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে তা হলো কেন ২২ এপ্রিল পহেলগামে কোনও নিরাপত্তাবাহিনী ছিল না? সরকার তারও কোনও উত্তর দেয়নি। এমনকি সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে আলোচনার দাবিতেও কর্ণপাত করেনি।
প্রকৃত অর্থেই দেশের শাসকদল এবং মিডিয়াকুলকে ব্যবহার করে এক উগ্র জাতীয়তাবাদ গড়ে তুলতে চাইছে। মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্কটকে ভুলিয়ে দিয়ে জাতীয়তাবাদে ভাসিয়ে দিতে চাইছে। এই সময়ের মধ্যে যা সামনে এসেছে তা হলো, হিন্দুধর্ম ব্যবসায়ীরা যুদ্ধোন্মাদনাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি করতে চাইছে "পাকিস্তানের এজেন্ট" বলে। কিন্তু পাকিস্তানি এজেন্ট হিসাবে চিহ্নিত হয়ে ধরা পড়েছে যে জ্যোতি মালহোত্রা সে তো হিন্দু। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে একটি ধর্মকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা তাহলে যুক্তিসম্মত হয় কী করে?
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘‘জাতীয়তাবাদ এমনই একটা ভাষা— যা এক জাতিকে অন্য জাতির শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে টিকিয়ে রাখে। এক অন্ধতা ও উগ্রতা তৈরি করে, যা শেষ পর্যন্ত মানবিক মূল্যবোধকে ধবংস করে। জাতীয়তাবাদ হলো ‘ক্ষমতার ভাষা’ যা মানবিকতাকে পদদলিত করে।’’

সন্ত্রাসবাদের বিরোধী লড়াই

সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ধর্মীয় মৌলবাদ এবং সন্ত্রাসবাদকে সৃষ্টি করে ও মদত দেয়, তা আগেই উল্লেখিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব পুঁজিবাদ ধান্দার পুঁজিবাদ (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) দুনিয়াজুড়ে আধিপত্য করছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে বিভাজন যত বাড়বে ধান্দার পুঁজিবাদ অর্থাৎ লুটেরা পুঁজিবাদের লুটের রাস্তা তত বেশি চওড়া হবে। সেই কারণেই সে ধর্মীয় মৌলবাদ এবং তার থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়। ধান্দার ধনতন্ত্রের অবাধ সর্বগ্রাসী লুটের ফলে দেশে সর্বস্তরের মানুষের জীবনে সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বাড়ছে মানুষের জীবন-যন্ত্রণা। জনজীবনের সঙ্কটের বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে ঠেকাতে পৃথিবীর দেশে দেশে গড়ে উঠছে অতি দক্ষিণপন্থী শক্তি যা নয়া ফ্যাসিবাদের নগ্ন আক্রমণ সংগঠিত করছে। আমাদের দেশের সরকার পরিচালনায় রয়েছে ফ্যাসিস্ত মনোভাবাপন্ন আরএসএস’র রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি। স্বভাবতই আমাদের দেশে নয়া ফ্যাসিবাদী আক্রমণ তীব্র হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই ধর্মীয় মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির তৎপরতা বাড়ছে। এই প্রেক্ষিতে মানুষের রুটি-রুজির সংগ্রামকে প্রসারিত করতে নয়া ফ্যাসিবাদী শক্তি আরএসএস ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাথে সাথে সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধেও সংগ্রামকে পরিচালিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নয়া ফ্যাসিবাদী শক্তি আরএসএস ও বিজেপি-কে পরাস্ত করতে এবং ধর্মীয় মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্ত ক্ষেত্রেই লড়াই জারি রাখতে হবে। এরজন্য সর্বস্তরের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতেই হবে।

Comments :0

Login to leave a comment