France

ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে গণবিস্ফোরণ

বিশেষ বিভাগ ফিচার পাতা

সুমনা সিনহা 


গত গ্রীষ্মে ফ্রান্সের রাজনৈতিক পরিস্থিতির রোজনামচা যেখানে শেষ করেছিলাম, আজ এক বছর পর সেখান থেকে কলম ধরতে হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাম জোটের তুমুল লড়াইয়ের ফলে সংসদ নির্বাচনে যে জয় এসেছিল ২০২৪-এর জুলাইয়ে, তার স্বাদ রাতারাতি বাসি হয়ে গিয়েছিল। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনও দলই পায়নি। তবে বাম জোটের জয়কে স্বীকার করে, জনগণের রায়কে সম্মান জানাতে, বাম জোট প্রস্তাবিত প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করাটাই ন্যায়সম্মত ছিল।
সমস্যা হলো, ন্যায়বিচার, সততা, সম্মান, মর্যাদাবোধ এইসব শব্দগুলো রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁ-র অভিধানে বা চরিত্রে নেই। তাঁর সংখ্যালঘু রাজনৈতিক দল ‘লা রেপুবলিক আঁ মার্শ’, যাকে জনগণ ভোটে এবং গণআন্দোলনে নস্যাৎ করে দিয়েছে, সেই দল থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেছে নিলেন। একবার নয়, তিন তিনবার। মনে রাখা দরকার, ২০১৭ সালে প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে, তাঁর দুই দফায়, যা শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালে, এমানুয়েল মাক্রোঁ মোট সাতজন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেছেন। হয়ত নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙতে চান।      
গত বছর জুলাইয়ের নির্বাচনের পর, অলিম্পিক গেমস, গ্রীষ্মের ছুটি নিয়ে টালবাহানা করে দু’মাস কাটিয়ে, সেপ্টেম্বরে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে বসান মিশেল বার্নিয়ে-কে। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলল তাঁর জমানা। বার্নিয়ে পুরানোপন্থী, বিগত জমানার প্রৌঢ় দক্ষিণপন্থী। তাঁর গৃহমন্ত্রী ব্রুনো রতাইয় উগ্র দক্ষিণপন্থী, নাৎসি আমলের অমানবিক অত্যাচারী শুঁটকো অফিসারেরর মতো হাবভাব, ছোবল মারে প্রতিদিন অশ্বেতাঙ্গ আর মুসলমানদের উদ্দেশ্যে। সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি আবার আরেক দরের। দক্ষিণপন্থী দলের এই মহিলার ব্যক্তিগত বিপুল সম্পত্তি, প্রাসাদোপম বাড়ি, পোশাক ও গহনার বিপুল ভাণ্ডার নিয়ে তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, বই-মেলায় তালাচাবি মেরে দিলেন, সরকারি অনুদান বন্ধ করে দিলেন।  
এই দুই মন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতি মাক্রোঁ নিজে, একের পর এক জনবিরোধী অর্থনৈতিক নীতি আরোপ করে চলেছেন। যেমন অবসরের বয়স ৬৪ বছর পর্যন্ত বাড়ানো, কোটিপতিদের স্বার্থে সম্পদ-কর বাতিল, পরিষেবা এবং সংবাদ ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ, সরকারি ক্ষেত্রের ধ্বংস সাধন, স্কুল, হাসপাতাল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলির তহবিল ছাঁটাই, অভিবাসনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অভিবাসন আইন বাস্তবায়ন ইত্যাদি। দ্রব্যমূল্য এমন বেড়েছে যে, আগে যে দামে সারা মাসের বাজার হতো, এখন তাতে দু’-চার দিন চলে। বিদ্যুতের বিল আকাশছোঁয়া। মেট্রো’র টিকিটের দাম আগুন, রিজিওনাল রেলের টিকিটের দাম প্লেনের টিকিটের চেয়েও বেশি, ফাটকা বাজারে দাম চড়াচ্ছে। পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসের দাম এমন বেড়েছে, জাতীয় সড়কগুলোতে পদে পদে এমন টোল দিতে হচ্ছে যে মফস্বল আর গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শিক্ষক ছাঁটাই চলছে এমন যে স্কুলে বাচ্চাদের সামনে শিক্ষক প্রায় নেই, কোনও স্কুলে বাথরুম নেই, কোথাও ছাদ ফুটো জল পড়ে। ভাবা যায়, ফ্রান্সের বুকে ডাক্তারের অভাবে রুগী মারা যাচ্ছে, হাসপাতালে জায়গা নেই, সন্তানসম্ভবা জন্ম দিচ্ছেন রাস্তায়, এমার্জেন্সিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে রোগী হার্টফেল করছে! আর এসবের প্রতিবাদ করলেই চলছে স্বৈরাচারী দমন আর নিপীড়ন। সাংবাদিকদের বরখাস্ত করা, প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশ বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, নারীবাদীদের পিটিয়ে, অন্ধ করে দেওয়া এসবই এখন ফ্রান্সের রোজনামচা।
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হলেন ফ্রঁসোয়া বাইরু। এই বাইরু-চরিতমানস যত হাস্যকর ও লজ্জাজনক। মধ্য-দক্ষিণপন্থী, ‘পো’ শহরের মেয়র, এই হোমরাচোমরা লোকটির হাত চলে খুব। কথাবার্তা পছন্দ না হলে প্রকাশ্যেই চড়থাপ্পড় মেরে দেন এমনকি নাবালক শিশুদেরও। এর মধ্যে ২০২৩-এর শেষে খবরে আসে ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল বেথারামে অশ্লীল অত্যাচার ও কেলেঙ্কারির ঘটনা। ১৯৫০ থেকে ২০০০, পাঁচ দশক জুড়ে চলেছে এই বোর্ডিং স্কুলে নাবালক শিশু ও কিশোরদের উপর খ্রিস্টান মিশনারিদের বলাৎকার, মানসিক যন্ত্রণা, শারীরিক নির্যাতন! আর এই বোর্ডিং স্কুলের ঠিকানা খোদ ‘পো’ শহরে, যার মেয়র ছিলেন ফ্রঁসোয়া বাইরু। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও যিনি সেই শহরে নিয়মিত হেলিকপ্টার হাঁকিয়ে যান। বোর্ডিং স্কুলের নারকীয় ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পরে, সরকারি তদন্ত কমিশনের সামনে, সাংবাদিক বৈঠকে, ফ্রঁসোয়া বাইরু একের পর এক মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন– ‘আমি কিছুই জানি না’, ‘আমি জানতাম না’, ‘যখন জেনেছিলাম তখনও সবটা জানতাম না’, ‘আমি যখন জেনেছিলাম তখন কোনও প্রমাণ পাইনি’ ইতাদি। নাটকীয় মোড় আসলো যখন বাইরু’র নিজের মেয়েই ভাষ্য দিলো, সে নিজেই এই অত্যাচারের ভুক্তভোগী, কিন্তু বাবা তার কথার গুরুত্ব দেননি। কিন্তু মাক্রোঁপন্থীরা এতই নির্লজ্জ যে আজ পর্যন্ত নিজেদের দায়িত্ব স্বীকার করেনি!  
মাক্রোঁ’র নিজের এবং মাক্রোঁপন্থীদের একের পর এক দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে এখন। আদালত রিপোর্ট দিলো, মাক্রোঁ প্রাইভেট কাউনসেলিং কোম্পানিদের পিছনে অঢেল টাকা ঢেলেছে দেশের বাজেট ও অর্থনীতির সিদ্ধান্ত নির্ধারণে। কোনও মন্ত্রীর স্ত্রী কোনও প্রাইভেট কাউন্সেলিং কোম্পানির বা ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর; এক মন্ত্রী ইস্তফা দিলেন তো পরদিন প্রাইভেট ফিনানসিয়াল কোম্পানিতে দায়িত্ব পেলেন, সেই আবার মাক্রোঁর অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা। 
আর সাংবাদিক জগতের তো কথাই নেই! আত্মীয়স্বজন নিয়ে এক বিশাল জাল ছড়ানো, যাদের কেউ কেউ আবার সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত। সমস্ত বড় মিডিয়া গ্রুপ, যেমন বহুজাতিক কোম্পানির মালিক কোটিপতি ভ্যাঁস বোলোরে বেশ কয়েকটি চরম দক্ষিণপন্থী টেলিভিশন এবং রেডিও নিউজ চ্যানেল এবং সংবাদপত্র দখল করে আছেন। ল্য মঁদ পত্রিকার মালিক কোটিপতি জাভিয়ে নিয়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্নোগ্রাফির ব্যবসা চালানোর। তিনি প্রাইভেট টেলিফোন কোম্পানি ‘ফ্রি’-র মালিক, মিডিয়াওয়ান এবং আরও মিডিয়া ও হোল্ডিং-এর মালিক। কোটিপতি বের্নার আর্নো বিখ্যাত ফ্যাশন কোম্পানি লুই ভুইতঁ-র মালিক। মাক্রোঁ যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন, তাঁর স্ত্রী হাইস্কুলের শিক্ষিকার দামি দামি পোশাকগুলো ছিল সব লুই ভুইতঁ-র। গত বছর নির্বাচনের পরে জানা গেলো বের্নার আর্নো নিজে ফোনে মাক্রোঁ’র ওপর চাপ দিয়েছেন যাতে বাম জোটের কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত না করা হয়, যেন চরম দক্ষিণপন্থী দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হয়। 
রাজারানির দরবারে ধনী বণিকরা প্রভুদের এরকমই উপঢৌকন দিতেন। মাক্রোঁ এবং তাঁর স্ত্রী ব্রিজিত মারি-ক্লোদ মাক্রোঁ’র চালিসাও সুবিধের নয়। স্বাধীন মিডিয়া অব ইনভেস্টিগেশন  প্রকাশ করল, ১৪ বছরের স্কুলের ছেলে মাক্রোঁর সাথে প্রেম হয়েছিল তার স্কুলের ড্রামা টিচার, বিবাহিতা ৩৫ বছরের ব্রিজিত-এর। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে জনগণের সামনে মাক্রোঁর উজ্জ্বল ভাবমূর্তি প্রচারের জন্যে, খোদ ল্য মঁদ পত্রিকার মালিক, কোটিপতি জাভিয়ে নিয়েল ব্যাপক প্রচার শুরু করল, যার একটা বড় অংশই মিথ্যা। ব্রিজিত মাক্রোঁর পোশাকআশাক, সাজসজ্জা, মেকআপ, হেয়ারড্রেসিং সব মিলিয়ে লাখো লাখো ইউরো প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে পাবলিক ফান্ড থেকে, ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্ট্যাটাস’ হিসাবে। যত প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, তাদের সারা জীবনের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমাদের মানে ফ্রান্সের জনগণের। বাড়ি, গাড়ি, ড্রাইভার, মাসে ৩০-৩৫ হাজার ইউরো পেনশন আজীবন আসবে আমাদের ট্যাক্স আর পাবলিক ফান্ড থেকে। এছাড়া আছে শিল্পপতিদের কর বাতিল, ফলে যা ঘাটতি হচ্ছে, জনগণের উপর চাপাচ্ছে, পাবলিক সার্ভিস অর্থাৎ সরকারি পরিষেবাকে রক্তশূন্য করে দিচ্ছে। কোটি কোটি ইউরো জাতীয় ঋণ, শোধ করবে কে? কোটিপতিদের ওপর কর না চাপিয়ে, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও সর্বহারাদের শোষণ চলছে।  
বাইরু-র উপর সাধারণ মানুষ রাগে টগবগ করছিলো বেথারাম বোর্ডিং স্কুলের অত্যাচার ও কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই। তা সীমা ছাড়িয়ে গেলো যখন তিনি ঘোষণা করলেন যে, দুটো সরকারি ছুটির দিন বাতিল করা হবে। এই দু’দিন মানুষ শুধু কাজ করবে তাই নয়, সেই টাকা যাবে জাতীয় ঋণ শোধ করতে।
গ্রীষ্মের ছুটির শেষেই শুরু হলো আলোচনা, ১০ সেপ্টেম্বর দেশ জুড়ে গণআন্দোলন ধর্মঘট হবে। বহু মানুষ ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের প্রসঙ্গও তুললেন। রাগ, ক্ষোভ যখন বিস্ফোরণের অবস্থায়, বাইরু ঘোষণা করলেন যে সোমবার ৮ সেপ্টেম্বর তিনি আস্থা ভোট ডাকবেন তাঁর পদের জন্যে। এই অবস্থায় গত কয়েক মাস ধরেই সমাজতান্ত্রিক পার্টি পালটি খেয়ে আছে সরকারে পদ পাওয়ার জন্যে, মাক্রোঁ প্রধানমন্ত্রী করবে এই আশায়। বাম জোটের সাথে, ফ্রঁস অ্যাঁসুমিসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। জঁ-লুক মেলঁশঁ’র দল ফ্রঁস অ্যাঁসুমিস, কমিউনিস্ট পার্টি এবং গ্রিন পার্টি একসাথে লড়ছে। প্রতিরোধ চলছে। সাধারণ মানুষ সক্রিয় হয়ে আছে। বাম সংবাদপত্র লিউমানিতে, মিডিয়াপার্ট, ব্লাস্ট, স্ট্রিট প্রেস অব ইনভেস্টিগেশন ইত্যাদি স্বাধীন মিডিয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বৈরাচারী শাসন আর শোষণ এবং চরম দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সোশ্যাল মিডিয়া এর প্রতিধ্বনি করছে । 
৮ সেপ্টেম্বর সারাদিন চলল বক্তৃতা, জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন জঁ-লুক মেলঁশোঁ, পরবর্তী প্রজন্মের নেতা-নেত্রী ক্লেমঁস গেতে, মানুয়েল বম্পার, মাতিল্দ পানো, আলমা দ্যু ফুর প্রমুখ। বিকেলে ভোটে ৫৭৩ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫৫৮ ভোট জন দিলেন। ফল ১৯৪ ভোট বাইরুর পক্ষে, ৩৬৪ বিরুদ্ধে। সন্ধ্যেবেলায় বাইরু পদত্যাগ করলেন। 
ফ্রঁসোয়া বাইরু এবং তার সরকারের পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পরে, এমানুয়েল মাক্রোঁ তাঁর সংখ্যালঘু রাজনৈতিক দলের, নিজের পেটোয়া, চরম দক্ষিণপন্থীদের কাছের লোক, সেবাস্তিয়াঁ লকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের ঘোষণা করেন। যে কোনও মূল্যে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য দক্ষিণপন্থী এবং চরম দক্ষিণপন্থীদের সাথে হাত মিলিয়ে আছে মাক্রোঁ। 
১০ সেপ্টেম্বর আন্দোলন শুরু হলো মাক্রোঁর বরখাস্তের দাবিতে। সারা দেশজুড়ে - প্যারিস, মার্সেই, মঁপেলিয়ে, বর্দো, লিঁয়, তুলুয সহ উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিমের সব ছোট বড় শহরের রাস্তা জুড়ে শুধুই মানুষের ঢল; আমাজন, কারফুর-এর মতো বড় বড় কোম্পানির সামনে পিকেট, শহর মফস্বল গ্রামাঞ্চলের রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবরোধ। স্লোগানে স্লোগানে আকাশ কাঁপছে, মিছিলের শুরু আর শেষ একসাথে দেখা যায় না, স্কুল, হাইস্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়-এর তরুণ তরুণীরা গান করে, কবিতা পড়ে, নাচের তালে তালে মিছিলে চলেছে সারা দেশ জুড়ে। পুলিশ তৈরি ছিল, গৃহমন্ত্রী ব্রুনো রতাইয় ৮০ হাজার পুলিশ নামাবে বলে হুমকি দিয়েছিল, তারা লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, ধরপাকড় করলেও চারিদিকে শান্তিপূর্ণ মিছিল চলল। 
কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ইয়ান ব্রোসা বলেছেন, ফ্রান্সের জনগণ মাক্রোঁর রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে বার বার, সেই পরিপ্রেক্ষিতে সেবাস্তিয়াঁ লকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা মানে জনগণের রায়কে নস্যাৎ করা, কদর্য অপমান করা। মানুষ বুঝতে পেরেছে যে শুধু ব্যাপক গণআন্দোলনই এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে। সেবাস্তিয়াঁ লকর্নু যদি মাক্রোঁপন্থী রাজনীতিই দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় আরোপ করতে চান, তাহলে বাইরু-র মতো তাঁকেও আমরা পদত্যাগ করতে বাধ্য করব। ছাত্র শিক্ষক কর্মচারী শ্রমিক কৃষক সহ সর্ব অংশের মানুষ এবং ট্রেড ইউনিয়নকে দেশব্যাপী গণআন্দোলনে নামতে হবে, আন্দোলনকে আরও বিশাল, আরও শক্তিশালী করতে হবে।
প্যারিসের রাস্তায় তাঁর কমরেডদের সাথে মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে জঁ-লুক মেলঁশোঁ ‘তুমুল সংবর্ধনা’ পেলেন। জনগণ স্লোগান তুললো - জঁ-লুক প্রেসিডেন্ট! জঁ-লুক প্রেসিডেন্ট! তিনি হেসে হাত নেড়ে এগিয়ে গেলেন। শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নয়, বাম আন্দোলন এখন দাবি তুলছে সব সমস্যার মূল মাক্রোঁর পদত্যাগ চাই।
বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ তোমা পিকেতি বলছেন, “বহুজাতিক কোটিপতিদের একটা শ্রেণি বিগত শতাব্দীর রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার অভিজাত সম্প্রদায়ের মতো স্বার্থপর আচরণ করছে, যারা শেষমেশ সমাজে তাদের অংশের অবদান দিতে বাধ্য হবে। অনেকগুলি দিক বিচার করে বলা যায় যে ফ্রান্সের বর্তমান পরিস্থিতি বিপ্লবের প্রাকমুহূর্তের মতো” 
সংগ্রাম এই সবে শুরু, আগামী দিনের অপেক্ষায়, নতুন সূর্যের আশায় ।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন