মলয়কান্তি মণ্ডল▫️ রানিগঞ্জ ▫️
মাটি ও প্রকৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে জুড়ে রয়েছে জল, জমি এবং জঙ্গল। কর্পোরেট আগ্রাসনের মুখে দেশ জুড়ে বিপদের মুখে মাটি এবং পরিবেশ। এই আবহের মধ্যেই দেশের ২৮ টি রাজ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে সাইকেলে সফর করে মাটি এবং পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিলেন কয়লাখনি অধ্যুষিত জামুড়িয়ার কাঁটাগড়িয়ার বাসিন্দা সৌমেন এবং লক্ষ্মী মারান্ডি। পথে থেমে কখনও পথচলতি খুদেদের পরিবেশ রক্ষার পাঠ দিয়েছেন , কখনও অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন গাছ লাগানোর উপকারিতা।
ভাষা কোথাও বাধা হয়নি। গুগল, ইণ্টারনেটের সাহায্য যেমন নিয়েছেন তেমনই প্রত্যন্ত এলাকায় ছবি, পোস্টার,স্টিকার বিলি করেছেন ঐ দম্পতি। এ হেন সাইকেল যাত্রা দেখে অভিভূত স্থানীয়রাই আগামী পথের দিশা বলে দিয়ে যাত্রীদ্বয়কে সাহায্যও করেছেন।
এক বছরের বেশি সময়ে প্রায় ১৮০ দিন দেশজুড়ে বিভিন্ন পরিবারে তাঁদের খাওয়া এবং থাকার ব্যবস্থা করেছেন ভিনরাজ্যের মানুষ। পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিয়ে এত পরিবারের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অন্যরকম পাওয়া বলছেন তাঁরা।
শুক্রবার রানিসায়ের মোড়ে সৌমেন মাণ্ডি ও লক্ষ্মী মাণ্ডিকে সংবর্ধনা জানালেন আমরাসোতা পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় হেমব্রম, দশরথ কোড়া। সম্বর্ধনা গ্রহণ করে ঐ দম্পতি জানালেন, ছত্রিশগড়ে বেপরোয়াভাবে জঙ্গল ধ্বংস হচ্ছে। সারা দেশ জুড়েই বিপন্ন পরিবেশ। রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে খোলামুখ খনির কারণে কৃষিব্যবস্থা বিপন্ন। চোখের সামনে প্রকৃতির বিপদ দেখেই বছর ঊনত্রিশের সৌমেন প্রকৃতি বাঁচাতে প্রচারের কথা তাঁর সহধর্মিণী লক্ষ্মীকে জানাতেই তিনিও রাজি হন সাইকেলযাত্রায়। গত বছর ২৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৮,০০০ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেলে ঘুরে সবুজায়নের বার্তা দিয়েছেন তাঁরা। দিল্লী, উজ্জয়নী , রাজস্থান থেকে দক্ষিণ ভারতের ২৮ টি রাজ্য ঘুরে তাঁদের অভিজ্ঞতায় চোখে পড়েছে কোথাও জলাশয় বুজিয়ে গড়ে উঠছে আবাসন আবার কোথাও বেপরোয়াভাবে নদী এবং অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে খনিজ উত্তোলন। কর্পোরেট সংস্থার অনিয়ন্ত্রিত মুনাফার আকাঙ্খার সামনে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, প্রকৃতি এবং আঞ্চলিক জনজীবন।
উন্নয়ন এবং শিল্প স্থাপনের নামে পরিবেশ ধ্বংস করে কর্পোরেট সংস্থার লুঠের থাবা সারা দেশ জুড়েই বিস্তৃত হচ্ছে। আসানসোল থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করে জাতীয় পতাকা সঙ্গে নিয়ে পরিবেশ রক্ষার শপথ ছড়িয়ে দিলেন দেশের প্রান্তরে প্রান্তরে ।
Comments :0