চিন্ময় কর, ঘাটাল
ঘাটাল ব্লকের ১২টা গ্রামপঞ্চায়েত সহ ৭টি ওয়ার্ডে বন্যার জল এখনও রয়েছে। সেই বানভাসি ঘাটাল শহরে কুল ভাঙা লালা ঝান্ডার স্রোতে সামিল হলেন কৃষিজীবী মানুষ। কেউ এলেন ডিঙি নৌকা চালিয়ে, আবার বহু গ্রাম নৌকা ভাড়া করে সামিল হলেন সারা ভারত কৃষক সভা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ৩৯ তম সম্মেলনের বণাঢ্য মিছিলের উত্তাপ নিতে। কথা হচ্ছিল প্রসাশ্ত সরকার, কানাই ভূঁইয়ার সাথে। জল যন্ত্রনার মুক্তি চাইছে ঘাটাল মহকুমার মানুষ। গত চার মাসে ৬ বার বন্যা। এর জন্য দায়ী তৃণমূল সরকারই। জুন মাসে প্রথম বন্যায় মহকুমার তিনটি নদীর ২৮টি স্থানে পাড় ভাঙে। সেই পাড় মেরামত না করায় আরও ৫ বার বন্যা হলো। ক্ষোভ উগরে দিয়ে মিছিলে সামিল মানুষ বলেন, "যে সরকার ভেঙে পড়া বাঁধ মেরামত করতে পারে না। তারা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান করবে তা আর কেউ বিশ্বাস করে না। এটা মমতার সরকার ও তার মাটি মাফিয়াদের নদী গর্ভের মাটি লুটের প্রকল্প।"
সব গ্রামে কৃষক সভা, ঘরে ঘরে কৃষক সভা বার্তায় এবং কৃষি ও কৃষক বাঁচাও এবং দেশ বাঁচাও লড়াই জোরদার করার শপথে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে উচ্ছেদ হওয়া বর্গাদার, পাট্টাদারদের জমি পুনরুদ্ধারে আপোষহীন লড়াইয়ের বার্তায় সারা ভারত কৃষক সভা ৩৯ তম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন সূচনা হয় ঘাটাল শহরে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। শহরের কুশপাতা মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে ঘড়ি মোড়ে শেষ হয়। মূলত ঘাটাল মহকুমার ৫টি ব্লকের কৃষক এই কর্মসূচীতে সামিল হয়। মিছিল শেষে ঘড়ি মোড় সংলগ্ন মাঠে উদ্বোধনী সমাবেশ হয়। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব ভক্তারাম পান ও জেলা সম্পাদক মেঘনাদ ভূঁইয়া।
ঘাটাল শহরের টাউন হলে সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব ভক্তারাম পান। তিনি বলেন, "এক সময় লাঙ্গল যার জমি তার সেই শ্লোগানে উত্তাল হয়েছিল কৃষিজীবি মানুষ। পরিবর্তনের জমানায় এখন আমূল পরিবর্তন হয়ে হাজির হয়েছে উচ্ছেদ হওয়া পাট্টাদার ও বর্গাদারদের জমি পুনরুদ্ধার সহ রেকর্ড আদায় করার দাবী। কৃষককের ফসলের লাভজনক দাম সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিপূরণের দাবী আদায়। কৃষিতে প্রয়োজন ভর্তুকি সহ বিদ্যুত মাসুল বাতিল। নইলে দেশের কৃষি ও কৃষককে বাঁচানো যাবে না।"
প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে জেলা সম্পাদক মেঘনাদ ভূঁইয়া বলেন, "ভারতবর্ষে মাটিতে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঙ্কার ভারতীয় পন্যের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ভারত বর্ষের কৃষক সমাজ সহ কৃষি ক্ষেত্রকে দেউলিয়া করার আগ্রাসন পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ সহ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কূটনীতিক ও রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার তীব্র প্রতিবাদ সহ সমালোচনা করেন কৃষক নেতৃত্বরা।
কৃষি ও কৃষককে সংকটের কারনে আজ গ্রাম গুলি পরিযায়ী গ্রামে পরিনত। এই সংকট আড়াল করতে ধর্মীয় বিভাজন, জাতি বিদ্বেষ, বুলডোজার, এসআইআর-সহ একাধিক বিষয়ের বিরুদ্ধে লাগাতার চেতনা বৃদ্ধির কাজ এবং আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মসূচি ঘোষনা করেন।
ধর্মীয় মেরুকরণ, সংবিধান-গণতন্ত্র-যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, জাতপাত বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আক্রমণের প্রতিবাদে জনমত প্রতিষ্ঠার কাজে গুরুত্ব আরোপ করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। তৃণমূলের রাজত্বে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঋণের দায়ে ১২৯ জন কৃষকের আত্মহত্যা ঘটনা প্রমান করে জেলার কৃষি ও কৃষক আজ বিপন্ন।
Comments :0