অরিজিৎ মণ্ডল ও অনির্বাণ দে: বহরমপুর
যতদূর চোখ যাচ্ছে কেবল জনতা। সেই জনতা এসেছেন নদীভাঙনে বিধস্ত এলাকা থেকে, এসেছেন দাঙ্গায় বিপর্যস্ত মহল্লা থেকে।
শহর থেকে গ্রামের প্রান্তিকতম যুবজনতার সমাগমে সংগ্রামের উত্তাপ সারা রাজ্যে ছড়িয়েছে বহরমপুরের টেক্সটাইল কলেজ মোড়। শনিবার এখানেই হয়েছে ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশন।
মঞ্চ থেকে বার্তা এসেছে যে যারা বিশ্বে-দেশে-রাজ্যে বা এই মুর্শিদাবাদে ধর্মের উন্মাদনা ছড়ায়, যুদ্ধের উন্মাদনা ছড়ায় তারা জনতার শত্রু। কারণ তারাই কেড়ে নেয় কাজ, কেড়ে নেয় জমি। তারাই কেড়ে নিতে একজোটে কথা বলার অধিকার, কেড়ে নিতে চায় গণতন্ত্র। তাদের বিরুদ্ধেই চলবে লড়াই, একজোটে, হাত হাত মিলিয়ে।
ডিওয়াইএফআই রাজ্য ২০তম সম্মেলনকে ঘিরে বহরমপুরের নামকরণ হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মৃণাল সেন নগর। আর রবীন্দ্র ভবনে মঞ্চের নামকরণ হয়েছে মানব মুখার্জি, তরুণ মজুমদার মঞ্চ। রবীন্দ্র ভবন। সমাবেশ হচ্ছে বহরমপুর টেক্সটাইল নোড়ে।
মঞ্চে থেকেছেন ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এবং সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ডিওয়াইএফআই’র সর্বভারতীয় সভাপতি এএ রহিম, সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক এবং সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা। বক্তব্যও রাখেন তাঁরা।
থেকেছেন যুব আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে রেখে গ্রামে শহরে লড়াই জারি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
ছিলেন ‘যুবশক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক কলতান দাশগুপ্ত সহ যুব নেতৃবৃন্দ। ‘সংগ্রাম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য’ বিষয়ক পুস্তিকা প্রকাশ করেন সেলিম।
বহরমপুরে এদিন তীব্র গরম, রোদ। সেসব উপেক্ষা করেই এসেছেন মানুষ। গোটা সমাবেশে থেকেছেন পুরোটা। তাঁদের অনেকেই মহিলা। সরব তাঁদের অংশগ্রহণ। কান্দি, ধুলিয়ান, সমশেরগঞ্জ বা ফরাক্কার প্রান্তিক খেটে খাওয়া নাগরিকরা অনেকেই এসেছেন নিজেদের উদ্যোগে।
আদতে সমাবেশ হওয়ার জন্য চাওয়া হয়েছিল মাঠ। প্রশাসন রাজি হয়নি। তাতে জমায়েতে টোকাও লাগেনি। ফলে টেক্সটাইল কলেজ মোড়ের তিনটি রাস্তার প্রতিটিতে কার্যত পা ফেলার জায়গা থাকেনি। বারবার উঠেছে স্লোগান। মঞ্চের আহ্বান থেকে রাস্তা সাড়া দিয়েছে সরাসরি, বারবার।
মীনাক্ষী সারা রাজ্যে ডিওয়াইএফআই’র লাগাতার লড়াইয়ের কথা শুনিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘ছাব্বিশের নির্বাচনে গুন্ডারাজ খতম করতে হবে।’’ বলেছেন, ‘‘লড়াই খতম করতে যাদের জেলে ঢোকানো হয়েছিল, জেল থেকে বেরিয়ে তারা ডিওয়াইএফআই’র ঝান্ডা কাঁধে নিয়েই লড়াই করছে।’’
মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘সমাজ বদলানোর লড়াই করে ডিওয়াইএফআই। সমাজ বদলাতে হলে বদলাতে হবে রাজনীতির চেহারা। যে রাজনীতি লুটে খাওয়াদের পক্ষে তারাই গুণ্ডারাজ কায়েম করে, তারাই বিভাজনের কৌশলে লড়াইকে ভাঙতে চেষ্টা করতে। লড়াই হবে তার বিরুদ্ধে। শহীদ মইদুলরা সেই শিক্ষা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন।’’
জামির মোল্লা বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে দাঙ্গার সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের দায়ী করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আর সে কথা লুফে নিয়ে বিজেপি বলেছিল রাজ্যে রাজ্যে মার হবে পরিযায়ী শ্রমিকদের। এরা দুই শক্তিই ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে ভয় পায়। তাই দুই শক্তিই জনতাকে বিভাজনের পক্ষে।’’
জামির বলেছেন, ‘‘বড় মাঠে সমাবেশ করতে দেয়নি প্রশাসন কারণ ওরা ডিওয়াইএফআই-কে ভয় পায়। ওরা বামপন্থীদের ভয় পায়। ওরা গণতন্ত্রকে ভয় পায়। সেজন্য সমবায় থেকে ছাত্রসংসদ, আটকায় নির্বাচন।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে বামপন্থীরা শক্তি রাখে। সে জন্য ভোটের আগে তৃণমূল আর বিজেপি একযোগে উসকানি তৈরি করেছিল। সেজন্য এ জেলায় বারবার দাঙ্গা করানো হচ্ছে। সেজন্য দাঙ্গার সময় চার ঘন্টা পুলিশ থানায় বসে থাকে। নিহত হন বামপন্থী হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাস। সেজন্য দুই শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চাই।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘যারা ধর্ম নিয়ে বা যুদ্ধ নিয়ে উন্মাদনা তৈরি করছে তারাই কাজ, জমি কেড়ে নিচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার। ধর্মের নামে ভাগ করছে তারাই। তাই আরও বেশি মানুষকে এক করে জোট দৃঢ় করে চালাতে হবে লড়াই।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘ধর্মের কারণে নয়, মধ্য প্রাচ্যে অস্থিরতা মুনাফার জন্য। তার জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ। সেজন্যই আমরা গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে। ইজরায়েল-আমেরিকার হানাদারির বিরুদ্ধে। বিশ্বের দেশে দেশে হচ্ছে প্রতিবাদ। তার সঙ্গে শামিল থাকবে বামপন্থীরাও।’’
Comments :0