Editorial

হিজিবিজি সম্মেলন

সম্পাদকীয় বিভাগ


করোনা অতিমারীর দৌলতে দু’বছর বন্ধ থাকার পর যথারীতি মহাসমারোহে ফিরে এসেছে বিশ্ব বাংলা শিল্প মোচ্ছব। সরকারি তহবিল থেকে জনগণের করের টাকা খরচ করে এমন তাক লাগানো ইভেন্টের আয়োজন করে জনগণের কি লাভ হচ্ছে কারো জানা নেই। খোদ সরকারের কাছে তেমন কোনও তথ্য আছে কিনা সেটাই স্পষ্ট নয়। তবে বিস্তর ভাষণ আছে, প্রতিশ্রুতি আছে, দাবি আছে। তার সঙ্গে আছে উচ্চাঙ্গের ধাপ্পাবাজি। শুরু হয়েছিল সেই ২০১৫ সালে। মাঝে দু’বছর বাদ দিলে এবার সপ্তম। প্রতি বছরই দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের ঢালাও আমন্ত্রণ জানানো হয়। যত আমন্ত্রণ তার সিকিভাগও আসেন না। বিদেশি বলতে দূতাবাসের দু’একজন। আয়োজনের  জাঁকজমকে, খানাপিনায় কোনও ঘাটতি থাকে না। লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন মানে সরকারি কোষাগার। প্রতিবছর এই সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকে কত মৌ হলো এবং তাতে কত টাকা লগ্নি হতে পারে তার ঘোষণা। এবারও তার অন্যথা হয়নি। যথারীতি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ১৮৮টি মৌ-তে ৩.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা। গত বছরও বলা হয়েছিল ৩.৪২ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির কথা। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা যোগ করলে গত মোট ৬টি সম্মেলনে লগ্নির প্রস্তাব এসেছে ১৩.৭২ লক্ষ কোটি টাকা। মজার ব্যাপার হলো কোনও সম্মেলনেই বলা হয় না আগের সম্মেলনগুলির ক’টা প্রস্তাব বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে, কত টাকা তাতে বিনিয়োগ হয়েছে এবং কত কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এই তথ্য সততার সঙ্গে করায় সমস্যা আছে। কারণ তাতে গোটা ব্যাপারটাই যে ধাপ্পা আর বুজরুকি তা ধরা প‍‌ড়ে যাবে। সম্মেলনে আসা বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকরা সেজন্যে খাতিরে বা মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করতে এটা করবে সেটা করবে বলে থাকেন। সরকার সেসবগুলিকে যোগ করে ঘোষণা করে বিনিয়োগ প্রস্তাব রূপে। আদতে তার ৯৫ ভাগও বাস্তবে ঘটে না। আবার একই কুমিরছানা বিভিন্ন বছরে দেখানো হয়। যেমন, তাজপুর বন্দর, দেউচা ইত্যাদি প্রথম সম্মেলন থেকে টানা ব্যাট করে যাচ্ছে।
রাজ্য সরকার রূপায়ণের হিসেব না দিলেও রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব পলিসি অ্যান্ড প্রমোশন রিপোর্ট বলছে ২০১৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বিনিয়োগের লিখিত প্রস্তাব এসেছে সর্বমোট ৫৭ হাজার কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার বাকি সবটাই ভাঁওতা। তেমনি লিখিত প্রস্তাব আসা মানেই বিনিয়োগ বা প্রকল্প রূপায়ণ নয়। প্রস্তাব দিয়েও পরে অনেকে পিছিয়ে যায় বা ঝুলিয়ে রাখে। ‘মৌ’ মানে যদি লিখিত প্রস্তাব হতো, আর লিখিত প্রস্তাব মানে প্রকৃত বিনিয়োগ বা রূপায়ণ হতো তাহলে এতদিনে রাজ্যের চেহারা বদলে যেত। ঘরে ঘরে এত বেকার থাকতো না। শিক্ষার এই হাল হতো না। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন অসহায়তা থাকতো না। আর রাজ্য থেকে দলে দলে বেকার ছেলেরা কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিত না।  ১২ বছর আগে যখন রাজ্যে ছিল মাত্র ৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক এখন সেটা ৫০ লক্ষ ছাড়িয়ে কোটির পথে দ্রুত এগচ্ছে। মানুষের দুর্দশা আর প্রত্যাশাকে পুঁজি করে এমন ধাপ্পা তৃণমূলের পক্ষেই সম্ভব। এটা তাই শিল্প সম্মেলন নয়, বাৎসরিক শিল্প ধামাকা। বিজিবিএস নয় হিজিবিজি সম্মেলন।

Comments :0

Login to leave a comment