প্রতারক হইতে সাবধান

প্রতারক হইতে সাবধান

সম্পাদকীয় বিভাগ

এরাজ্যের ১০০ শতাংশ মানুষই হয় সরাসরি অথবা পরোক্ষে বিদ্যুতের গ্রাহক বা বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী। নির্দিষ্ট মাশুলের বিনিময়েই তারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন দৈনন্দিন পারিবারিক প্রয়োজনে। এদের সকলের অজান্তে পেছন থেকে তাদের পিঠে ছুরি মেরে দিয়েছে সাধু সেজে থাকা মমতা ব্যানার্জির সরকার। দেশজুড়ে ভোটপর্ব চলার ফাঁকে গোপনে কাউকে কিছু না জানিয়ে কোনোরকম সরকারি বিজ্ঞপ্তি বা ঘোষণা ছাড়া চটজলদি বিদ্যুতের মাশুল এক ধাক্কায় অন্তত তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। রাজ্যবাসীর বিরুদ্ধে এমন প্রতারণা, এমন বেইমানির নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। ভোটের আগে মাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ভোট শেষের আগেই গ্রাহক পিছু ৫০০টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত মাশুল আদায়ের মসৃণ ব্যবস্থা সেরে ফেলা হয়েছে সুচতুরভাবে। জনগণের পকেট কাটার এমন উচ্চাঙ্গে ধূর্ততার নাটের গুরু অসতার প্রতীক মিথ্যাবাদী মুখ্যমন্ত্রী। এরপরও তিনি ভোট ভিক্ষে করতে গিয়ে নির্লজ্জের মতো জনদরদি সাজার অভিনয় করেন। এহেন প্রতারকদের ঘৃণা ছাড়া আর কিইবা জনগণের দেবার থাকতে পারে?
কোনও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, তা সে সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক, বিদ্যুতের মাশুল বাড়াতে চাইলে আগে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হয়। কর্তৃপক্ষ সবদিক বিবেচনা করে অনুমোদন দেয় বা বাতিল করে। এক্ষেত্রে তেমন কোনও প্রক্রিয়ায় খবর সাধারণ মানুষের গোচরে আসেনি। সংবাদমাধ্যমও এই প্রশ্নে কার্যত নীরব। লক্ষণীয় এই মাশুল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি সাধারণভাবে মাশুল না বাড়িয়ে কৌশলে স্ল্যাব পরিবর্তন করে বাড়তি মাশুল আদায়ের ব্যবস্থা হয়েছে। আগে যেমন সাতটি স্ল্যাব ছিল এখনো সেটাই রাখা হয়েছে। কিন্তু আমূল বদলে ফেলা হয়েছে প্রতি স্ল্যাবে ইউনিটের সীমা। এই সীমা সাতটি স্ল্যাবেই ৩৮ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। তার ফলে এখন আগের মতো বিদ্যুৎ খরচ হলেও মাশুল গুনতে হবে দ্বিগুন থেকে তিনগুণ বেশি। আর হিসাব কষে এমন এক মোক্ষম সময়ে এই পরিবর্তন করা হয়েছে যখন মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ। এবার  নজিরবিহীন অস্বাভাবিক তাপ প্রবাহের কারণে অন্য বছরের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ খরচ করতে হচ্ছে। ফলে গচ্চা দিতে হচ্ছে অনেক বে‍‌শি।
বাম আমলে এরাজ্যে সরকার ভরতুকি দিয়ে গরিব, নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তদেরও কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করত। ছিল ক্রশ সাবসিডির ব্যবস্থাও। অর্থাৎ উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে কিঞ্চিত বেশি হারে মাশুল নিয়ে সেই অর্থে গরিবদের কম দামে বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় এসে ধাপে ধাপে সেই ব্যবস্থা তুলে দিয়েছেন। শুধু ভরতুকি তুলে দেননি মাশুল বাড়াতে বাড়াতে গোটা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে মাশুল আদায় করছেন। অথচ বর্তমানে দিল্লি সহ একাধিক রাজ্যে ন্যূনতম একটা সীমা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেবার ব্যবস্থা চালু আছে। চলতি লোকসভা নির্বাচনের ইশ্‌তেহারে কংগ্রেস সহ ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বিভিন্ন শরিক দল ন্যূনতম সীমা পর্যন্ত বিদ্যুৎ মাশুলে ছাড় দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অথচ তৃণমূল নিজেদের ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দাবি করলেও উলটো পথে হাঁটছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল বিজেপি’র অনুসারী, ইন্ডিয়ার নয়।

Comments :0

Login to leave a comment