Editorial

চিচিং ফাঁক

সম্পাদকীয় বিভাগ


ইদানিং প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন তাঁর আমলে ব্যাঙ্ক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ব্যাঙ্কগুলির বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যে বিপুল অনাদায়ী ঋণভারে জর্জরিত ছিল সেগুলিও নাকি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। অতি সম্প্রতি প্রচারের সামনে আসছে ব্যাঙ্কের ঋণ দেবার গতি বেড়েছে। অর্থাৎ ঋণের চাহিদা হু হু করে বাড়ছে। উপরোক্ত সব দাবি ও প্রচারগুলিকে এক করলে দাঁড়ায় দেশের অর্থনীতি সঙ্কট কাটিয়ে উচ্চমাত্রার বিকাশের পথে পা বাড়িয়েছে। যাচাই করে দেখা যাক মোদীর দাবি ও গোদী মিডিয়ার প্রচারের বিষয়গুলিকে।
ভারতের ব্যাঙ্ক ক্ষেত্রে সবচে‌য়ে বড় সমস্যা ছিল অনাদায়ী ঋণ। বড় বড় ক‍‌র্পোরেট সংস্থাকে প্রকল্প যাচাই না করে দেদার ঋণ দেওয়া হয়েছিল সরকারের অঙ্গুলিহেলনে। যে প্রকল্পের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে তাতে খরচ না করে টাকা সরানো হয় অন্য খাতে। ফলে টাকা ফেরতের সম্ভাবনা ক্রমশ বিলীন হয়ে যায়। কেউ কেউ বিপুল টাকা নিয়ে দেশ থেকেই পালিয়ে যায়। এইভাবে অনাদায়ী ঋণের বোঝা বেড়ে নতুন করে ঋণ দেবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ব্যাঙ্কগুলি। অনেকে শাসকের ঘনিষ্ঠ হবার সুবাদে ঋণ শোধের সামর্থ্য থাকলে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ শোধ করেনি। এই অবস্থায় যখন সরকারের করণীয় ছিল ঋণ আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, তা না করে কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছে পাওনা ১৪ লক্ষ কোটি টাকা মকুব করে দেয়। ঋণ মকুব করে দেবার ফলে ব্যাঙ্কের খাতায় আর অনাদায়ী ঋণ নেই। অর্থাৎ ব্যাঙ্কগুলি এখন বোঝা মুক্ত। মাঝখান থেকে সরকারি মধ্যস্থতায় ব্যাঙ্ক জনগণের আমানতের ১৪ লক্ষ কোটি টাকা চলে গেছে মোদীর বন্ধু কর্পোরেটের পকেটে।
দীর্ঘদিন ধরে কর্মসংস্থান তৈরি না হবার ফলে মানুষের আয় হ্রাস অর্থনীতিতে নেতিবাচক চাপ ফেলেছে। করোনাকালে‍‌ সেটা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। করোনার পর আয়হীন মানুষের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বাড়েনি। মানুষের সঞ্চয়ের হার তলানিতে পৌঁছে যায়। এই অবস্থার মধ্যে প্রচার চলছে ব্যাঙ্কের ঋণদানের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। অর্থাৎ অর্থনীতির গতি বাড়ছে। কিন্তু রহস্য ফাঁস হয়ে যায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে। তাতে দেখা যায় কর্পোরেট ঋণের চাহিদা না বাড়ায় ব্যাঙ্কগুলি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে খুচরো ঋণ অর্থাৎ ব্যক্তিগত ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড ঋণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ঋণ নিরাপত্তাহীন এবং অতিমাত্রায় ঝুঁকি বহুল। কারণ এ‍‌ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে কোনও কিছু বন্ধক রাখা হয় না। সম্প্রতি বাজারে যে কেনার প্রবণতা বেড়েছে সেটা এই ঋণের টাকায়। আয় না বাড়ায় মানুষ নগদে কিনতে পারছে না। ঝুঁকি নিয়ে ঋণের টাকায় জিনিস কিনছে। এই প্রবণতা নতুন করে ব্যাঙ্কে বিপদ ডেকে আনতে পারে সেই আশঙ্কায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই খুচরো ঋণদানের ক্ষেত্রে বাড়তি শর্ত আরোপ করেছে। অর্থাৎ খুচরো ঋণে লাগাম পরানো হয়েছে। তার জেরে পরদিন শেয়ার বাজারে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাগুলির শেয়ার দর পড়তে থাকে।

Comments :0

Login to leave a comment