Editorial Soldiers killed Repetition

পুনরাবৃত্তি

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Soldiers killed Repetition


চার বছর আগে পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলায় ৪০ জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনা থেকে নরেন্দ্র মোদীরা যে কোনও শিক্ষাই নেয়নি তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল পুঞ্চ জেলার রাজৌরি সেক্টরে ফের সেনা কনভয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাঁচ জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনা থেকে। যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটা পাক সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে মাত্র দুই-তিন কিলোমিটার ভেতরে। এই অঞ্চলটি সেনাবাহিনী বা গোয়েন্দাদের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস প্রবণ। এটা অনুপ্রবেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এর আগে এই অঞ্চলে অনেকবার সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন একটি জায়গা দিয়ে সেনাদের নিয়ে যাবার আগে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থাদি নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছিল বলে মনে হয় না। যদি হয়েও থাকে তবে বুঝতে হবে তাতে যথেষ্ট গলদ ছিল। আর সে‍‌ই ফাঁক দিয়েই সন্ত্রাসবাদীরা ঢুকে পাঁচ জওয়ানকে খতম করে দিয়েছে। অপর একজনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।


জায়গাটি ঘন জঙ্গলে ঘেরা। প্রবল বৃষ্টি সহ খারাপ আবহাওয়ার কারণে দৃশ্যমানতা ছিল অত্যন্ত কম। এমন পরিস্থিতি যখন বেশি সতর্কতা ও নজরদারি জরুরি ছিল তখন হেলায় তা অবহেলা করা হয়েছে। সেই গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার মূল্য জীবন দিয়ে চোকাতে হয়েছে পাঁচ জওয়ানকে। ঘটনা ঘটে যাবার পর হামলাকারীদের সন্ধানে যে তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার সিকিভাগও যদি আগে করা হতো তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না। এই ঘটনা আরও একটি বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা ঘটা করে প্রচারের যে ঢাক পিটিয়ে থাকেন তা নিতান্তই অন্তঃসারশূন্য। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপ মোটেই কমেনি। যথারীতি সেনা-পুলিশ জওয়ানদের মরতে হচ্ছে। নিয়মিতই শোনা যায় জঙ্গি হানার ঘটনা। সেনাবাহিনীর অভিযানে বা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কখনো জওয়ান বা কখনো জঙ্গি অথবা কখনো উভয়ের মৃত্যুর খবর থেকে এমনটা দাবি করা যায় না কাশ্মীর ভালো আছে, শান্তিতে আছে। 

বরং এমন অভিযোগ শোনা যায় জঙ্গি দমনে সাফল্যের সূচক বাড়াতে দেদার খুন-জখম হয়ে যাচ্ছে নিরীহ কাশ্মীরিরা। সরকার পুলিশ ও সেনার শক্তির জোরে কাশ্মীরকে শান্ত করতে চাইলেও বাস্তবে অশান্তির উর্বর ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যাচ্ছে। অস্ত্র আর সেনা দিয়ে যে নাগরিক স্বস্তি ও সামাজিক আস্থা ও সম্পর্ক গড়া যায় না তা হিন্দুত্ববাদী মেধা দিয়ে উপলব্ধি করা যায় না। মোদী-শাহরা ভেবেছিলেন ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার ও মর্যাদা কেড়ে নিলে এবং পূর্ণাঙ্গ একটি রাজ্যকে ভেঙে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল বানিয়ে বন্দুকের নলের মুখে কেন্দ্রীয় শাসন চাপিয়ে দিলে সন্ত্রাসবাদীরা ভয়ে পালিয়ে যাবে বা নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করবে। বাস্তবে যে তেমনটা হয় না সেটা তাদের বোধের মধ্যেই আসেনি। মাঝখান থেকে কাশ্মীরের মানুষের জীবন-জীবিকা, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হলো। মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার থেকে পদে পদে বঞ্চিত করা হলো। জঙ্গি দমন করতে গিয়ে মোদীরা এমন পদক্ষেপ নিলেন তাতে জঙ্গি কার্যকলাপ তো কমলোই না মাঝখান থেকে বিপন্ন জীবন ‍‌অনিবার্য হয়ে উঠলো কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের।


রাজৌরি সেক্টরের যেখানে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখানেই বালাকোট সেক্টর। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এই বালাকোটেই পুলওয়ামার ঘটনার বদলায় নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল। মোদী দাবি করেছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনী বোমা মেরে সন্ত্রাসবাদীদের সব ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এমন দাবিও করা হয়েছিল যে জঙ্গিদের কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এইভাবে পাক বিরোধী উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারে ঝড় তুলে গত লোকসভা নির্বাচনে বড় জয় হাসিল করা হয়েছিল। গত চার বছরের অভিজ্ঞতা বলে দিচ্ছে জঙ্গি দমনে ও কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মোদী সরকার ব্যর্থ।


 

Comments :0

Login to leave a comment