Editorial

বিনামূল্যে খাদ্য জুমলা

সম্পাদকীয় বিভাগ


কোনও দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং তার পরিচালনা যদি সে দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের জোগান দিতে না পারে, জনসংখ্যার একটা বড় অংশ যদি কর্মহীন বেকার থেকে যায় অথবা অতি নিম্ন মজুরির কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হয় তাহলে সেদেশে দারিদ্র্য ও বেকারী অনিবার্য হয়ে উঠবে এমনটাই দস্তুর। আর মানুষ যদি কাজই না পান তাহলে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করার সুযোগ থাকে না। তখন তাদের নিজের ও পরিবারের জন্য অন্ন সংস্থান কঠিন হয়ে পড়ে। নিরন্ন বা অর্ধান্নই অগণিত পরিবারের ভবিতব্য হয়ে দাঁড়ায়। নরেন্দ্র মোদীর সা‍‌ড়ে নয় বছরের শাসনে ভারত আজ ঠিক এমনই এক অবস্থায় এসে দাঁড়ি‍‌‍‌য়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের সামনে দু’টো রাস্তা খোলা। হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি করা অথবা দরিদ্র এবং খাদ্য সংস্থানে অপারগ মানুষদের জন্য সরকারের তরফ থেকে খাদ্য জোগান দেবার ব্যবস্থা করা। নরেন্দ্র মোদী নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন। তাই তিনি সচেতনভাবেই দ্বিতীয় রাস্তা বেছে নিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন আগামী দু-তিন বছরে তো নয়ই, এমনকি আগামী পাঁচ বছরেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে মানুষের অভাব দূর করা তাঁর কম্ম নয়। অতএব মহা রাজাধিরাজের মতো প্রজাবর্গের প্রতি দয়াশীল হয়ে তাদের আগামী পাঁচ বছর ধরে বিনামূল্যে খাদ্য দেবার কথা ঘোষণা করেছেন। হিন্দুত্ববাদের নেশা আর অতিরিক্ত রামভক্তির তাড়নায় তিনি সম্ভবত ভুলেই গেছেন এই দেশটা বা সরকারটা কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পদ নয়। ওটা দেশের জনগণেরই সম্পদ। খাদ্যটা নাগরিকদের অধিকার। সরকার বা মন্ত্রীর দয়ার দান নয়। খাদ্য নিরাপত্তা আইনে সেই অধিকার শুধু স্বীকৃত হয়নি, প্রতিটি ভারতবাসীকে খাদ্যের জোগান দেওয়া সরকারের দায় হিসাবেও চিহ্নিত।
দেশের মানুষ গরিব থাকবে, তাদের রোজগারের বন্দোবস্ত হবে না, আর সরকার তাদের খাবার ব্যবস্থা করবে এটা কোনও সভ্য সমাজের গ্রহণযোগ্য বিধান হতে পারে না। স্বঘোষিত বিশ্বগুরু এটাকেই নির্মম সত্য করে তুলেছেন। মানুষকে সচেতনভাবে গরিব রেখে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনও পরিকল্পিত আ‍‌য়োজন না করে তারা গরিবের ত্রাতা দাতাকর্ণ সাজতে চাইছেন। মোদীরা যদি সত্যি সত্যি দেশের উন্নতি চাইতেন, মানুষের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে চাইতেন তাহলে সাড়ে নয় বছর তা করে দেখানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তা হয়নি এবং আগামী পাঁচবছরেও তেমন কিছু হবার আশা নেই। অতএব পাঁচ বছর তিনি গরিবের ‘ভগবান’ হয়ে গদিতে বসে থাকতে চান। তাই ভোট প্রচারে গি‍‌য়ে খাদ্য দেবার বাসনা জানি‍‌য়েছেন।
যে আইনে দেশের ৮০ কোটি মানুষ মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল বা গম পান রেশ‍‌নে (৩/২টাকা কেজি দরে) সেই আইন তৈরি করে পূর্বতন সরকার। মোদী সেই পরিমাণ চাল/গমই দেবেন বিনামূল্যে নামমাত্র বাড়তি খরচ করে। আর এটাকেই এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে যেন মোদী কি না কি করে ফেলেছেন। আইন অনুযায়ী শহরের ৫০ শতাংশ এবং গ্রামের ৭৫ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আওতায় আসবেন। সেই মতো আগের সরকার ২০১১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে ৮০ কোটি মানুষকে মাসে ৫ কেজি খাদ্য দেওয়া শুরু করে। মোদী ২০১১ সালের জনগণনা করেননি। এতদিনে জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। অনুমান বর্তমান জনসংখ্যা অনুযায়ী ৯০ কোটি মানুষের খাদ্য পাওয়া উচিত। মোদী দিচ্ছেন সেই ২০১৩ সালের হিসাব মতো ৮০ কোটিকে। অন্তত ১০ কোটি মানুষকে বঞ্চিত করে বাহ্‌বা কুড়াতে চাইছেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment