Editorial Shinde Government

শিন্ডে সরকারের নৈতিক বৈধতা নেই

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Maharashtra


দলীয় রাজনীতি ও মতাদর্শের সঙ্গে সহমত পোষণকারী ব্যক্তিদের বাছাই করে বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপালের পদে বসিয়ে এবং তাদের সুকৌশলে অপব্যবহার করে নির্বাচিত সরকার ভেঙে বা বিরোধী দলের বিধায়ক কিনে পেছনের দরজা দিয়ে অনৈতিক পথে ক্ষমতা দখলের প্রয়াস সম্পর্কে কড়া সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রায় এক বছর আগে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্রের শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেসের জোট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে শিবসেনার দলছুট বিধায়কদের সামনে রেখে বিজেপি’র সরকার গঠনে বিজেপি’র পরামর্শে রাজ্যপালের ভূমিকা বে-আব্রু করে দিয়েছে আদালত। পরিষ্কার করে দিয়েছে উদ্ধব সরকারকে বিধানসভায় শক্তি প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে অন্যায় কাজ করেছেন। সরকার আস্থা হারিয়েছে বা সংখ্যালঘু হয়ে গেছে এমন কোনও প্রমাণপত্র রাজ্যপালের কাছে ছিল না। তিনি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে খেয়াল খুশি মতো কাজ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে আস্থা ভোট গ্রহণের কোনও সঙ্গত বা যুক্তিযুক্ত কারণ তখন ছিল না। কেন্দ্রীয় শাসকদলের প্রভাবে বা চাপে রাজ্যপাল অতি সক্রিয়তার সঙ্গে রাজনৈতিক অনধিকার চর্চা করেছেন। সংবিধান বা আইন কেউ-ই রাজ্যপালকে সেই অধিকার দেয়নি। রাজ্যপালের ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতিতেই উদ্ধব ঠাকরের সরকার চলে গিয়ে সেখানে দলছুট একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠীকে সামনে রেখে বিজেপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মহারাষ্ট্রের বর্তমান সরকারকে নৈতিকতা ও সংসদীয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিচারে বৈধ সরকার বলা যেতে পারে না। অতএব এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ করে সরে যাওয়া উচিত। নতুন করে জনগণের রায় নিয়ে নতুন সরকার গঠন করা উচিত। অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট ও শিন্ডে সরকারের অপসারণে সিলমোহর দেয়নি।


মহারাষ্ট্রের বিগত বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি বৃহত্তম দল হলেও সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এই অবস্থায় বিজেপি’র চরিত্র অনুযায়ী বিরোধী দলের বিধায়ক কিনে সরকার গড়ার চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেনি। কিন্তু সফল না হওয়ায় গোপন খেলা শুরু হয় রাজ্যপালকে ব্যবহার করে। চেষ্টা হয় ফাদনবিশের নেতৃত্বে আগে সরকার গঠন করে পরে রাজনৈতিক ও সরকারি প্রভাব বাড়িয়ে দল ভাঙানোর খেলায় সফল হতে। সেটাও বিফল হবার পর বিরোধী তিন দল জোট করে উদ্ধবের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। বিরোধীরা সরকার তৈরির পরও হাল ছাড়েনি মোদী-শাহরা। তলে তলে ষড়যন্ত্র চলতেই থাকে সরকার ভাঙার খেলার। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা একনাথ শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করার টোপ দিয়ে দল ভাঙানোর খেলায় অবশেষে সফল হয় বিজেপি। শিন্ডের নেতৃত্বে শিবসেনার সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়করা বিদ্রোহ ঘোষণা করায় সঙ্কটে পড়ে বিরোধীদের জোট সরকার। এই সময় রাজনৈতিকভাবে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠেন রাজ্যপাল। বিজেপি’র নেতা ফাদনবিশ এবং কিছু নির্দল বিধায়ক রাজ্যপালের কাছে উদ্ধব সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বলে দাবি করলেও বিক্ষুব্ধ শিন্ডে গোষ্ঠী এমন দাবি করেনি যে তারা উদ্ধব সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিচ্ছে। ফলে উদ্ধব সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। রাজ্যপাল বিজেপি’কে খুশি করতে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আস্থা ভোটের নির্দেশ দেন যা ছিল ভ্রান্ত, বেআইনি, অনৈতিক। আস্থা ভোটের আগেরদিন উদ্ধব পদত্যাগ করার ফলে সরকারের পতন ঘটে। পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়ে বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়।


সাংবিধানিক বেঞ্চ তাদের রায়ে স্পষ্ট বলে দিয়েছে কোনও রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের কোনও অধিকার নেই। রাজ্যপাল কোশিয়ারি সেকাজ করেছেন। বিক্ষুব্ধ শিন্ডেরা কি করবেন সেটা তাদের দলই ঠিক করবে। তারা তো রাজ্যপালকে বলেনি তারা দল ছাড়ছেন বা সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছেন। আস্থা ভোটের দাবিও তারা করেনি। তাহলে আগ বাড়িয়ে রাজ্যপাল তড়িঘড়ি আস্থা ভোটের নির্দেশ দিলেন কেন? একেই সুপ্রিম বলেছে রাজনীতির ময়দানে রাজ্যপালের ঢুকে পড়া এবং দলীয় রাজনীতিতে নাক গলানো। এটা শুধু কোশিয়ারির ক্ষেত্রে সত্য নয়। কমবেশি সব রাজ্যের রাজ্যপালদের ক্ষেত্রে সত্য। মোদী-শাহ’রা বেছে বেছে তাদেরকেই রাজ্যপাল পদে বসায় যারা তাদের হাতে গড়া পুতুলের মতো কাজ করবে। রাজ্যে রাজ্যে অবৈধ পথে ঘৃণ্য উপায়ে ক্ষমতা দখলই যাদের একমাত্র লক্ষ্য তারা আর যাই হোক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুসারি হতে পারে না। নীতি নৈতিকতা, গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে জলাঞ্জলি দিয়েই তারা লক্ষ্যপূরণে ব্রতী হয়। রাজ্যপাল নিয়োগ হয় তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই।

Comments :0

Login to leave a comment