Editorial Bomb Making Crackers Factory

বোমা তৈরির ‘বাজি কারখানা’

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Bomb Making Crackers Factory


একদিকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল ক্যারাভ্যানে ভাইপো সাংসদের রাজকীয় জেলা পরিক্রমা, অন্যদিকে দলীয় নেতার বোমা কারখানায় বিস্ফোরণে নিরীহ মানুষের মৃত্যু। পঞ্চায়েত নির্বাচনের (অবশ্য লোকসভা নির্বাচনের আগে যদি পঞ্চায়েত নির্বাচন করা হয়) আগে এটাই অন্যতম প্রধান বাস্তবতা। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার গ্রামে ভরদুপুরে বোমা তৈরির কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১০ জনের দেহ দগ্ধ, ক্ষতবিক্ষত ও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। কারখানায় কর্মরত ১৭-১৮জনের মধ্যে বাকিরা কমবেশি জখম। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মালিক আহত হলেও সপরিবারে পলাতক। অনুমান পার্শ্ববর্তী ওড়িশায় গা-ঢাকা দিয়েছে বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে বেআইনি বাজি কারখানা বলা হয়েছে। নবান্নে বসে মুখ্যমন্ত্রী সেই কথাই বলেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েত তৃণমূলের হলেও মুখ্যমন্ত্রী অস্বীকার করেছেন রাজনৈতিক দায় এড়াবার জন্য। এমনকি কারখানার মালিক কৃষ্ণপদ ওরফে ভানুও যে শাসক দলের দাপুটে নেতা সেটাও অস্বীকার করা হয়েছে। একটা অপদার্থ সরকারের অপদার্থ পুলিশের অপদার্থতা আড়াল করতে এমন কত কীই না করতে হয়!


বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন জেলায়, বি‍‌শেষ করে মেদিনীপুরে এমন অন্তত এক ডজন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সব ক্ষেত্রেই হয় বোমা বানাতে গিয়ে অথবা মজুত বোমায় বিস্ফোরণ হয়েছে। যথারীতি প্রশাসন তথা সরকারের তরফ থেকে বেআইনি বাজি কারখানা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি ভাষ্য এবং বিস্ফোরণের সংখ্যা থেকে এটা স্পষ্ট যে রাজ্যে ‘বেআইনি বাজি কারখানা’র ছড়াছড়ি। নিশ্চয়ই সব বেআইনি কারখানায় বিস্ফোরণ হয় না বা হয়নি। সামান্য কয়েক শতাংশ ক্ষেত্রেই হয়েছে। তাহলে যে বিপুল সংখ্যক বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কখনো কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কেন? কেন সেগুলি পুলিশ বন্ধ করে দেয়নি? মালিক দলের নেতা বলে নাকি দলের প্রয়োজনে সেখানে বোমা তৈরি ও মজুত করা হয় বলে? কোনও আইনি কারখানায় বিস্ফোরণের কথা শোনা যায় না। তাহলে কি ধরে নিতে হবে আইনি কারখানায় সর্বোন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে বিস্ফোরণের সম্ভাবনাই নেই। অথবা এই রাজ্যে আইনি কোনো কারখানাই নেই। যা আছে সবটাই বেআইনি। বাজি কারখানার আড়ালে সেখানে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের উপকরণ বোমা তৈরি করা হয়। সবটাই সরকারের জ্ঞাতসারেই হয় পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। তাই একটা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও এবং নিরীহ মানুষের জীবনহানি হলেও পুলিশি অভিযান চালিয়ে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করার কোনও ঘটনা ঘটেনি। আসলে এরাজ্য থেকে যদি বেআইনি বাজি তৈরি কারখানা তথা বোমা তৈরির কারখানা নির্মূল করে দেওয়া হয় (পুলিশ চাইলে সেটা পারে) তাহলে নির্বাচনে সন্ত্রাস করে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেবার সুযোগ কমে যায়। তাই তৃণমূলের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের স্বার্থে বেআইনি বাজি কারখানার রমরমা অপরিহার্য।


প্রসঙ্গত যেখানেই এমন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে সেখানেই দেখা যায় সেই কারখানার মালিক তৃণমূলের নেতা বা ঘনিষ্ট। অর্থাৎ তৃণমূলের ঘরের লোক ছাড়া এরাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানা চালানো যায় না। আবার আইনি কারখানা হলে সেখানে বোমা বানানো মুশকিল। অতএব বেআইনি বাজি কারখানা নির্মাণে ঢালাও ছাড়পত্র আছে। তবে তার প্রধান শর্ত হলো আতশ বাজি তৈরি হোক বা না হোক শাসকদলের চাহিদা মতো বোমা তৈরি, মজুত ও সরবরাহ করতে হবে। বস্তুত এই অলিখিত গোপন শর্তেই রাজ্যে বোমা শিল্প জোরদার চেহারা নিয়েছে।
এগরার ঘটনার পর জেলার পুলিশ সুপার সাংবাদিক সম্মেলন করে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো বলছেন বেআইনি বাজিকারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে। অপদার্থ না হলে একথা বলা যায় না। একথা বলার আগে তাঁর কৈফিয়ত দেওয়া উচিত ছিল এমন বেআইনি কারখানা তৈরি হলো কি করে এবং চলছেই বা কি করে? সুপার কি অফিসে বসে ঘোড়ার ঘাস কাটেন আর জনগণের করের টাকায় মোটা বেতন নেন। মুখ্যমন্ত্রীও অবলীলায় একই কথা বলছেন। যেন বেআইনি কারখানা বিস্ফোরণ হলে এবং মানুষ মরলে সরকারের কোনও দায় নেই। যদি এমনটাই হবে তাহলে পুলিশ মন্ত্রীর চেয়ারে তিনি বসে আছেন কোন অধিকারে। অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রীর অপদার্থ পুলিশ হবে তাতে আশ্চর্য কি!

Comments :0

Login to leave a comment