Editorial

দুর্নীতির তদন্তে শ্লথতা চলবে না

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে বিপুল দুর্নীতি এখন প্রকাশ্যে। আপাতত জেলে আটক রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সহ একাধিক পদাধিকারী, দুর্নীতি চক্র চালানো এজেন্ট। তেমনই কয়লা পাচার, গোরু পাচারের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেখানেও আটক হয়েছেন রাজ্যের শাসক দলের নেতা সহ বেশ কয়েকজন। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই তদন্ত যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে হচ্ছে তো? 
প্রশ্ন তুলেছে আদালতই। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার কলকাতা হাইকোর্ট, সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারপতিরা তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যে গতিতে তদন্ত হচ্ছে, তাতে তদন্তের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারপতি বলেছেন, যারা নিয়োগ দুর্নীতিতে টাকা তুলেছে তা জানা গেছে। কিন্তু সেই টাকা তারা কাকে দিয়েছে তা এখনও সামনে আনতে পারছে না কেন তদন্তকারীরা? তদন্তের বৃত্ত সম্পূর্ণ হচ্ছে না। 


এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনেও রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে কোনও না কোনও ব্যক্তির নাম সামনে আসছে, তাঁদের জেরা হচ্ছে, কেউ জেরার পরে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য জানা যাচ্ছে। কিন্তু মাকড়সার জালের মতো এই চক্রের চক্রব্যুহে তদন্তকারী সংস্থাই পড়ে যাচ্ছে না তো? এই দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ রহস্যভেদ নিশ্চয়ই সহজ কাজ নয়। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই টাকা তোলা এবং তার বাঁটোয়ারা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে হয়েছে। সুতরাং সেই টাকা কোথাও পাচার হয়ে গেছে, শিখণ্ডি সংস্থার মাধ্যমে কোনও ব্যবসায় বিনিয়োগ হয়েছে। এমনকি বিদেশেও পাচার হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সকলেই পার্থ চ্যাটার্জির মতো টাকার বান্ডিল জড়ো করে রাখেননি। যত কঠিনই হোক এই মহা দুর্নীতির শিকড় এবং শিখর ছোঁয়া তদন্ত সংস্থার দায়িত্ব। এই তদন্ত যদি কালক্ষেপের কারণে বানচাল হয়, যদি দীর্ঘসূত্রিতার কারণে প্রমাণের জোর কমে তাহলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। 


শুধু কর্মদক্ষতাই নয়, এখানে রাজনীতির প্রশ্নও উঠবে। কেননা এই দুর্নীতি করেছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, সাধারণ প্রতারকরা নয়। রাজ্যের শাসক দলের নেতারা পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতি, গোরু-কয়লা পাচারকাণ্ডে। অনেকেই আবার এই দু’ধরনের দুর্নীতিতেই যুক্ত। এখন যদি কেন্দ্রীয় সংস্থার কাজে শ্লথতা থাকে তাহলে ন্যায়সঙ্গত প্রশ্ন উঠবে তা কি সচেতন ভাবেই করা হচ্ছে? তাদের ওপরে চাপ তৈরি হচ্ছে? হলে, কেন হচ্ছে? এ কি রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে কেন্দ্রের শাসক দলের সমঝোতারই ইঙ্গিত? 


অপরাধীরা তদন্ত ও বিচারে বাধা দেবার যথাসাধ্য চেষ্টা চালাবে, এ তো স্বাভাবিক। সময় যত গড়াবে তত প্রমাণ লোপ হবে। আইনি জটিলতার মধ্যে তদন্তকে জড়িয়ে দেবার চেষ্টা চলবে। তদন্তের গতি শ্লথ করে দেবার জন্য নানা কায়দা হবে। সে-সব যে হচ্ছে তা-ও কিন্তু মানুষ চোখে দেখছেন। আইন এড়িয়ে তো তদন্ত হবে না, বিচারও হবে না। কিন্তু আইনের সামনে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যকে জোরের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব তদন্তকারীদের। সেই কাজ ঠিকভাবে না হলে জনমনের অসন্তোষ আরও ব্যাপক চেহারা নেবে।

Comments :0

Login to leave a comment