Editorial

বিশ্বগুরু বেকায়দায়

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


কানাডার মাটিতে খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারত-কানাডার সম্পর্ক যেমন দ্রুত অবনতি ঘটছে তেমনি এই প্রশ্নে আমেরিকা ভারতের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন। এই খুনের ঘটনায় ভারত সরকারের হাত আছে বলে নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডু। যদিও ভারত সরাসরি সেই  অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ট্রুডু হাল ছাড়ার পাত্র নন। তারপরও তিনি একাধিকবার একই  অভিযোগ তুলে তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। এই বার্তার প্রত্যুত্তরে ভারত কী বলেছে বা আদৌ কিছু বলেছে কিনা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে ভারত কানাডাকে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য বলে অভিহিত করে পরিস্থিতি আরও জটিল ও ঘোরালো করে দিয়েছে।
সত্য হোক বা মিথ্যা হোক ট্রুডু ভারতের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন সেটা ভয়ানক এবং গুরুতর। ভারতের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের অতীত কোনও নজির নেই। তেমনি কানাডার মাটিতে কোনও হত্যাকাণ্ডে অন্য কোনও দেশ জড়িয়ে থাকলে সেটা তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত। সেটা তারা কোনও অবস্থাতেই মানবে না। নিঃসন্দেহে বিদেশ নীতির প্রশ্নে ঘোরতর সঙ্কটে পড়েছে মোদী সরকার। সাম্প্রতিককালে যে দেশের সঙ্গে সব‍‌চেয়ে বেশি মিত্রতা ও ঘনিষ্টতা বাড়ানোয় অগ্রাধিকার দিয়েছেন মোদীরা সেই আমেরিকাই কানাডার পাশে দাঁড়িয়ে ভারতকে তদন্তে সাহায্য করার জন্য ভারতের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে।


ভারতের ‍‌বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলার আগে একাধিকবার নাকি কানাডার তরফে ভারতকে জানানো হয়েছিল। এমনকি স্বয়ং ট্রুডুও নাকি মোদীকে বিষয়টি অবগত করান। অভিযোগ ভারত নাকি তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন শোনা যাচ্ছে যে তথ্যের ভিত্তিতে কানাডার এই অভিযোগ সেটা নাকি মিত্র দেশ থেকে  পাওয়া। আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে গঠিত ‘ফাইভ আই’ জোট। এই দেশগুলি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য নিজেদের মধ্যে নিয়মিত আদান-প্রদান করে। অনুমান করা হচ্ছে আমেরিকার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই নাকি কানাডা এই গুরুতর অভিযোগ তু‍‌লেছে ভারতের বিরুদ্ধে। অন্য দেশগু‍‌লিও ট্রুডু এই অভিযোগে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেশিরভাগ দেশই কানাডার পক্ষে রয়েছে। ভারতের পক্ষে কেউ কথা বলছে না। মোদীর বিশ্বগুরু ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে বিজেপি যে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছিল সেটা যে জোরালো ধাক্কা খেয়েছে সন্দেহ নেই। পরিস্থিতি যদি ঠিকঠাক সামাল দেওয়া না যায় তাহলে গোটা বিশ্ব ভারতকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করবে। সেই সুযোগে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও সরব হবে।


উগ্র জাতীয়তাবাদী মানসিকতার শিকার হয়ে নিজেদের সর্বশক্তিমান ভাবতে শুরু করেছেন মোদীরা। কথায় কথায় পাঁচ ট্রিলিয়ন অর্থনীতি হবে, বি‍‌শ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে, ২০৪৭ সালের মধ্যে পশ্চিমী দুনিয়ার মতো উন্নত দেশ হবে, এমন বাগাড়ম্বর উচ্চাশায় বিশ্বগুরু হবার স্বপ্ন দেখেন মোদী। ভাবছেন চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার  সঙ্গী হলে খোদ আমেরিকাকে  ব্যবহার করবেন নিজেদের স্বার্থে। আমেরিকা পাশে থাকলে দুনিয়া সমীহ করবে ভারতকে। বাস্তবে যে তেমন হবার নয় আমেরিকা সেটা বুঝিয়ে ‍‌দিচ্ছে। কানাডাকে ছেড়ে আমেরিকা মোদীর হাত ধরে নাচবে না। বরং মার্কিন স্বার্থে মোদীদের নাচাবে।  প্রয়োজন ফুরালে ঝেড়ে  ফেলেও  দেবে। জোট‍‌ নিরপেক্ষ ঐতিহ্যের জমিতে গড়ে ওঠা ভারত ‍ কোনোভাবেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের শরিক হতে পারে না। মোদীদের সেটা বোঝা উচিত।

Comments :0

Login to leave a comment