Editorial Brijbhushan

ব্রিজভূষণ কেন জেলের বাইরে?

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Brijbhushan


উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে আরএসএস-বিজেপি’র কাছে একটি অপরিহার্য নাম ব্রিজভূষণ শরণ সিং। বিজেপি’র এ‍‌ই দাপুটে সাংসদ যেমন তেমন লোক নন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ‍‌তিনি আরএসএস’র অতি প্রিয়পাত্র। এহেন কীর্তিমান সাংসদকেই নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা সসম্মানে বসিয়ে রেখেছেন ভারতীয় রেসলিং ফেডারেশনের মাথায়। দাপট ও প্রভাবের সুবাদে এবং দলের ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রশ্রয়ে তিনি পদে বছরের পর বছর ধরে বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয় ঐ পদকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিবেচনা করে গোটা ফেডারেশনকে ব্যক্তিগত জমিদারি বানিয়ে ফেলেছেন। মোদী-শাহ’দের হাত মাথার উপর থাকায় তিনি নিশ্চিত হয়ে গেছেন পদে বসে যত খুশি কুৎসিত আচরণ করলেও ট্যাঁ ফোঁ করার দু’সাহস কেউ দেখাবে না। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। গত সাত-আট বছর ধরে দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কুস্তিগিরদের সঙ্গে তাঁর আচরণ কদর্যতার সব সীমা লঙ্ঘন করে গেছে। বিশেষ করে মহিলা কুস্তিগিরদের সঙ্গে তার আচরণ কোনও সভ্য সমাজে কল্পনার অতীত। এহেন ব্রিজভূষণরাই আরএসএস-বিজেপি’র গৌরব, মোদী-শাহ’দের নয়নের মণি। ছোট থেকে সব বয়সের মহিলা কুস্তিগিররাই ছিল তার বিকৃত যৌন লালসার শিকার। সুযোগ পেলেই তাদের শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্তা করতে তিনি ছাড়তেন না। নানা অছিলায় মেয়েদের শরীরের বি‍‌শেষ বিশেষ জায়গায় হাত দেওয়া ছিল তাঁর অভ্যেস। ভয়ে আতঙ্কে মুখ খোলার বা প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না কোনও কুস্তিগিরের। পাছে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ হারাতে হয়।


এইভাবে দিনের পর দিন যৌন হেনস্তা ও বিকৃত লালসার শিকার হতে হতে যখন দেওয়ালে পিঠ প্রায় ঠেকে গেছে তখন সব ভয় দূরে সরিয়ে তারা প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। গত জানুয়ারিতে এমন প্রতিবাদের মুখে ব্যবস্থা গ্রহণের সরকারি আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। অলিম্পিক পদকজয়ী বক্সার মেরি কমের নেতৃত্বে তদন্ত হলেও তার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি। অগত্যা মহিলা কুস্তিগিররা বাধ্য হয়ে আপন সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার তাগিদে দিল্লির যন্তরমন্তরে অনির্দিষ্টকালীন অবস্থান শুরু করেছেন। তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক পদক জয়ীরাও। প্রথমে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কোনো রকমের এফআইআর নিতে অস্বীকার করে অমিত শাহ’র দিল্লির পুলিশ। পরে সুপ্রিম কোর্টের ধমকে এফআইআর নিতে বাধ্য হয়।


গত ২৩ এপ্রিল থেকে ধরনা-অবস্থান চললেও সরকারের তরফে ন্যূনতম কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক অর্জন করে যারা বিশ্বের দরবারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে তাদের অপমান অমর্যাদা-অসম্মানে কিছু যায় আসেনি মোদী সরকারের। ব্রিজভূষণকে আড়াল করতে কুস্তিগির‍‌দের পাত্তাই দেওয়া হয়নি। তারা মশগুল কর্ণাটকের ভোটে। দিল্লির রাজপথে পড়ে আছে দেশের মেয়েরা। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’  স্লোগান দেওয়া খোদ নরেন্দ্র মোদী প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে যাবার পরও প্রয়োজনবোধ করেননি তাঁরই দলের সাংসদ দ্বারা যৌন হেনস্তার শিকার বেটিদের নিয়ে মন্তব্য করতে। উলটে অমিত শাহ’র পুলিশ রাতে অন্ধকারে গিয়ে অবস্থানকারীদের তুলে ফের হেনস্তা করেছে মদ্যপ অবস্থায়।


অবশ্য গেরুয়াবাহিনী ও তাদের লেজুড়রা নীরবতা পালন করলেও তাদের পাশে দাঁড়ি‍‌য়েছে কংগ্রেস, সিপিআই (এম ) এবং আপ। এসএফআই কর্মীরা কার্যত পাহারা দিচ্ছে অবস্থানকারীদের। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশি হামলার শিকার হয়েছে। আরএসএস আদর্শে মোদীরা যত নারী বিদ্বেষী হোন না কেন কুস্তিগিরদের সমর্থনে এবং ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারি ও কঠোর সাজার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে গোটা দেশ। সর্বশেষ দেশজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। প্রতিদিনই ধরনাস্থলের ভিড় বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসছেন। মহিলাদের প্রতি এমন যৌন অনাচার দেশে সভ্য জনমত সহ্য করবেন না। আরএসএস-বিজেপি’র নেতা হলেই যৌন হেনস্তার অধিকার জন্মায় মোদী-শাহ’দের এহেন বিধান মানুষ আর সহ্য করবেন না।

Comments :0

Login to leave a comment