resentment Ladakh

লাদাখ ফুঁসছে

সম্পাদকীয় বিভাগ

ক্ষোভে ফুঁসছে লাদাখ। সেই ক্ষোভ সহনশীলতার সীমা অতিক্রম করে সম্প্রতি আছড়ে পড়েছে রাস্তায়। লাদাখের মানুষ মনে করছেন দিল্লির সরকার কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব, অধিকারহীন করে ফেলেছে। লাদাখের অধিবাসীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, মতামতের কোনও মূল্য নেই। তাদের শাসিত হতে হচ্ছে বহিরাগত আমলাদের দ্বারা। আর সেই বহিরাগত আমলারা নির্দেশ পালন করছেন দিল্লির সরকারের। অর্থাৎ লাদাখের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। সাড়ে চার বছর আগে ৩৭০ ধারা বাতিল করে পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়ে রাজ্যটিকে দু’টুকরো করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। তারই একটি লাদাখ। জম্মু-কাশ্মীরও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলেও তার বিধানসভাকে এখনো বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। অবশ্য কবে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য হিসাবে নিজের সরকার পাবে কেউ জানে না। আর লাদাখে তো বিধানসভা বলেই কিছু নেই। ফলে লাদাখের রাজ্য হওয়ার স্বপ্ন আদৌ কোনোদিন সফল হবে কিনা সেই শঙ্কা থেকেই যায়। লাদাখের মানুষকে সেই শঙ্কাই প্রবলভাবে গ্রাস করছে।
৩৭০ ধারা প্রত্যাহার ও রাজ্য ভাঙার সময়ই মোদী সরকার বলেছিল অবিলম্বে লাদাখ রাজ্যের মর্যাদা পাবে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের এবং ২০২০ সালে লাদাখ হিল কাউন্সিল নির্বাচনে বিজেপি ইশ্‌তেহারে এই প্রতিশ্রুতির আভাস ছিল। কিন্তু রাজ্যের মর্যাদা হারানোর পর সাড়ে চার বছর কেটে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। অতি সন্তর্পণে বিষয়টিকে এড়িয়ে লাদাখে কেন্দ্রীয় শাসন জাঁকিয়ে বসানোরই প্রয়াস চলছে। দিল্লি থেকে মোদী-শাহ-রাজনাথের হুকুমে চলতে হচ্ছে লাদাখের মানুষকে। তাই তারা অপমানিত, প্রতারিত ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলে মনে করছেন। এই বোধ গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ দৃঢ় ও গভীর হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ-অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। সম্প্রতি সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে রাস্তায়।
গত সপ্তাহের শেষে তাপমাত্রা শূন্যের অনেক নিচে থাকা সত্ত্বেও গোটা লাদাখ বন্ধ রেখে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন লে-তে। লাদাখের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশের এই জমায়েত সোচ্চার হয়েছে চার দফা দাবিকে সামনে রেখে। ১) লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য ঘোষণা করতে হবে। ২) সংবিধানের ৬ষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করে লাদাখকে সাংবিধানিক সুরক্ষা দিতে হবে। ৩) স্থানীয় যুবদের জন্য চাকরি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ৪) কারগিল ও লে-র জন্য দু’টি লোকসভা আসন করতে হবে। এই দাবিকে সামনে রেখে মুসলিম অধ্যুষিত কারগিল এবং বৌদ্ধ অধ্যুষিত লে-র মানুষ হাতে হাত ধরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানা‍‌রে নয়, লে অ্যাপেক্স বডি এবং কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স যৌথভাবে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাতে শামিল সব অংশের মানুষ। তাদের আশঙ্কা রাজ্য ভেঙে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বহিরাগতদের শাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তার ছত্রছায়ায় লাদাখের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুটের বন্দোবস্ত হচ্ছে এবং বাহিরের লোক এনে লাদাখের জমি ও সম্পদ দখলের ষড়যন্ত্র চলছে। সব বিধি নিষেধ তুলে দিয়ে এই পার্বত্য ভূমির পরিবেশ ধ্বংস করে তার বিপন্নতা বাড়িয়ে তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে। এটা রুখতেই হবে। তাই জাত-ধর্ম ভুলে লাদাখের মানুষ এক হয়েছেন বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে।

Comments :0

Login to leave a comment