Editorial

মিথ্যারও একটা সীমা থাকে

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে প্রচারের সব আলো ও কৃতিত্ব আপন ভাঁড়ারে ভরে নেবার আগ্রাসী লোভকে আড়াল করতে আরএসএস’র ছক অনুযায়ী আর এক নোংরা খেলায় মেতেছে বিজেপি। ভাবছে মনগড়া গল্প সাজিয়ে ধর্মীয় আচারের আদলে ডালি সাজিয়ে মিথ্যার নির্মাণ করলেই সংবিধান তথা আদিবাসী রাষ্ট্রপতিকে অপমানের অপরাধী লাঘব হয়ে যাবে। পাশাপাশি এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো ভাবছে এতে তামিল ব্রাহ্মণদের মন পাওয়া সহজ হবে যা তামিলনাডুতে বিজেপি’র রাজ‍‌নৈতিক সুবিধা পেতে সাহায্য করবে।


১৯৪৭ সালের আগস্টে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় তামিলনাডুর অধীনম মঠে পুরোহিতরা রাজদণ্ডরূপী এক‍‌টি দণ্ড জহওরলাল নেহরুকে উপহার দিয়েছিলেন। সেই সময় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা-সংগঠন এমন অজস্র উপহার নেহরুকে দিয়েছিলেন। এসব ছিল স্বাধীনতা লাভের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। নিতান্তই ব্যক্তিগত ও বেসরকারিভাবে নেহরুর বাড়িতে এইসব উপহার প্রদান হয়েছিল। এর সঙ্গে ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে মাউন্টব্যাটেন রাজদণ্ড নেহরুর হাতে তুলে দেবার কোনও সম্পর্ক নেই। বাস্তবে তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। আরএসএস’র পরিকল্পনা অনুযায়ী তামিল মঠের পুরোহিতদের সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কাল্পনিক কাহিনি সাজানো হয়েছে। তাকে সত্য, ঐতিহাসিক ঘটনা, ধর্মীয় ঘেরাটোপে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কদর্য প্রয়াস চলছে। মোদী-শাহ’রা যে মিথ্যার বেসাতিকে সত্য বলে চালাতে চাইছেন তার কোনও প্রমাণ নেই। কোনও নথিপত্রও নেই। নেহরুর বাড়িতে গিয়ে পুরোহিতরা যে বেসরকারিভাবে দণ্ডটি নেহরুকে দিয়েছিলেন তার সংবাদ বিবরণ তৎকালীন বেশিরভাগ সংবাদপত্রেই রয়েছে। এমনকি বিদেশি পত্রিকা ‘টাইম’ ম্যাগাজিনেও তার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে কোথাও মাউন্টব্যাটেনের উপস্থিতি বা ভূমিকা ছিল না। তাছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনও আনুষ্ঠানিক ঘটনা ঘটেনি। তাই আরএসএস-বিজেপি’র কল্পনাবিলাসী গল্পকারদের হোয়াটস-অ্যাপ ভাষ্য অনুযায়ী মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কোনও প্রতীক খোঁজেননি এবং তা নেহরুকে বলেনওনি। তাই এ ব্যাপারে নেহরুর রাজা গোপালচারীর পরামর্শ চাওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। তামিল ঢোল রাজাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথা নেহরুকে গোপালচারী বলতে যাননি। বিকৃত মানসিকতার উর্বর মস্তিষ্কের ফসল এই গল্প জুড়ে দিয়ে তামিল মঠের পুরোহিতদের দেওয়া রাজদণ্ড উপহারটি কল্পনার হাওয়ায় ভাসিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে মাউন্টব্যাটেনের হাতে। আর মাউন্টব্যাটেন তা দিয়েছেন নেহরুর হাতে। গোটাটাই অসত্যবাদী মোদী-শাহ’দের বানানো। এর কোনও প্রমাণ নে‍‌ই। নেহরুর পাওয়া অসংখ্য বেসরকারি উপহারগুলির মতো এই দণ্ডটিও সুরক্ষিত ছিল মিউজিয়ামে।

 সেখান থেকে সেটা তুলে এনে হিন্দুধর্মীয় আচার মেনে ব্রিটিশদের থেকে হস্তান্তরিত রাজদণ্ডরূপে নতুন সংসদ ভবনে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে প্রতীকরূপে। আর এই পরিকল্পনার আড়ালে সূক্ষ্মভাবে নিহিত আছে তামিলনাডুতে বি‍‌জেপি’র রাজ‍‌নৈতিক সুবিধা পাবার আর্তি। এই মিথ্যা গল্প দিয়ে তামিল ব্রাহ্মণদের মন পেতে মোদী-শাহ’রা মরীয়া। পাশাপা‍‌শি নতুন সংসদ ভবনকে ধর্মীয় আচারের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা যাতে সংবিধানের ধর্মনিরপক্ষতার আদর্শ নতুন সংসদ ভবনে ফিকে হয়ে যায়। ঘুরপথে এক ধর্মীয় প্রতীককে সংসদে গুরুত্বস্থানে অধিষ্ঠিত করা হচ্ছে। হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার পথে ধর্মীয় আচার সর্বস্ব হিন্দুত্বের সংসদ গঠনের এটা অন্যতম পদক্ষেপ। মিথ্যার বেসাতি দিয়ে হইচই তুলে একাধিপত্যকামী মোদীর লোভকে স্বীকৃতি দেবার এমন নিকৃষ্টমানের রুচিকে ভারতবাসী ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment