Modi Parivar

মোদীর পরিবার

সম্পাদকীয় বিভাগ

সন্দেশ খালির মহিলাদের দেওয়া মোদী আশ্বাস ভুয়ো, সরব প্রতিবাদ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এরাজ্যে এসে নারী শক্তির বন্দনা করেছেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মহিলা ভোটাররাই মোদী-শাহদের পাখির চোখ। ৩৭০ আস‍‌নে একাই জয়ের কথা ঘোষণা করে রেখেছেন অনেক আগে। কিন্তু কোথা থেকে কীভাবে সেই জয় আসবে তার হিসাব মেলা‍‌তে গিয়ে মহা ফ্যাসাদে পড়তে হচ্ছে। বিজেপি’র যেটুকু জনভিত্তি সেটা প্রধানত গোবলয়ে বা হিন্দি বলয়ে। সেখানে বেশিরভাগ আসনে তাদের সাংসদ রয়েছে। এই বিস্তীর্ণ অংশে নতুন করে বাড়তি আসন জেতার সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বরং প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধিতার আবহে কিছু আসন হাত ছাড়া হবার আশঙ্কা আছে। বিপরীতে গোবলয়ে বিরোধিতার হারাবার কিছু নেই। বরং পাবার কিছু অবশ্যই আছে। এই অবস্থায় ক্ষমতা ধরে রাখতে স্বয়ং মোদী ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার বহু আগে থেকে গোটা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রত্যেক রাজ্যে এক বা একাধিকবার সফর করে উন্নয়নের ফিরিস্তি পাঠ করছেন, মোদীর গ্যারান্টি দিচ্ছেন। তাঁর ক্ষমতায় ফেরার গ্যারান্টি অবশ্য জনগণ দিচ্ছে না। এক একরাজ্যে রাজ্যে যাচ্ছেন গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা করছেন, শিলান্যাস করছেন এবং উদ্বোধন করছেন। সহস্র-লক্ষ কোটি টাকা খরচের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভাষণ শুনলে মনে হবে গত দশ বছরে মানুষের সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। দেশে কোনও দারিদ্র নেই। বেকার বা কর্মহীন কেউ নেই। কৃষকের কোনও সমস্যা নেই। আদিবাসী জনজাতিরা দারুণ ফুর্তিতে আছেন। মহিলারা রাম রাজত্বে বাস করছেন। কিন্তু তথ্য পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যাবে প্রচারের চোখ ধাঁধানো আলোর আড়ালে বঞ্চনার, না পাওয়ার, ব্যর্থতার পাহাড়।
মোদীরা বুঝে গেছেন জনসংখ্যার অর্ধেক মহিলা। ভোটে তাই টার্গেট মহিলারা। মহিলাদের স্তুতি করছেন রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে। ঘরে ঘরে শৌচালায় করেছেন নাকি মহিলাদের কথা ভেবে। সব পরিবারে শৌচালায় আছে কাগজে কলমে। কিন্তু কটা আছে তার হিসেব নেই। কোথাও তৈরি হলেও ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। জনধন যোজনায় সব মহিলাদের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকান্ট খোলার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ অ্যাকাউন্টে লেনদেন কার্যত হয় না। কারণ মহিলাদের রোজগারই নেই। উজ্জ্বলা যোজনায় নাকি সব ঘরে রান্নার গ্যাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ পরিবার অর্থাভাবে নতুন গ্যাস কিনতে পারে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। পারিবারিক সঞ্চয় কমছে। আর সরকার নৃত্য করছে উচ্চ জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে। বিশ্বের সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধি নিয়ে। কিন্তু বলে না বেকার কর্মহীনদের যন্ত্রণার কথা। নিম্ন মজুরিও কম রোজগারের কথা। ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধির কথা। শিক্ষার অধপতনের কথা। কৃষকের ফসলের দাম না পাবার কথা। ঋণভারে আত্মহত্যা বৃদ্ধির কথা। বেকারদের মধ্যে কাজ না পাবার হতাশায় আত্মহত্যার কথা। ক্রমবর্ধমান হারে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যে ধর্ষণ, ধর্ষণ করে খুন, নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার কথা। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য নারীরাই সবচেয়ে বে‍‌শি নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার। মোদীর দলের শাসনে মণিপুরের মায়েদের উলঙ্গ করে রাস্তায় হাঁটানো হয়। বিলকিসের ধর্ষকদের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন দেশের ১৪০কোটি মানুষই নাকি তাঁর পরিবার, দেশের সব মা-বোনেরা তাঁর পরিবারের সদস্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও এটা স্পষ্ট হলো না তাঁর স্ত্রী তাঁর পরিবারের সদস্য কিনা।

Comments :0

Login to leave a comment