Editorial

জবাব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


প্রধানমন্ত্রী যতই মুখে কুলুপ আঁটুন আর শাসক দলের মন্ত্রী-সাংসদরা যতই সংসদ অচল করে রাখুন দিনের পর দিন তাতে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না আদানি গোষ্ঠীর যাবতীয় অপকর্ম, আড়াল করা যাবে না মোদী সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্কের গূঢ় রহস্য। আজ নয় কাল সব সত্য প্রকাশ্যে আসবেই। আদানি কাণ্ডকে ঘিরে দেশময় যা চলছে সেটা এখন আর শুধু বিরোধী রাজনীতির পরিসরে সীমাবদ্ধ নেই। বিষয়টি এখন দেশের আমজনতার প্রশ্ন হিসাবে হাজির হয়েছে। ভারতের জনগণ জানতে চান আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা জালিয়াতি, প্রতারণা, অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে তদন্তে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের এত আপত্তি কেন? মোদীরা যদি মনে করেন আদানিরা নির্দোষ তাহলে সেটা জনগণকে কেন ব্যাখ্যা বলছে না?

জনগণকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিন আদানিরা কোনও দোষ করেনি। তা না করে প্রধানমন্ত্রী মুখে কুলুপ এঁটে দলীয় মন্ত্রী-সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন আদানি প্রশ্ন এড়াতে সংসদ অচল করার। আসলে আদানিদের নির্দোষ প্রমাণ করার মতো কোনও তথ্য-পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। হিন্ডেনবার্গের তোলা প্রশ্নের সিংহভাগেরই উত্তর দিতে পারেনি আদানি গোষ্ঠী। তাহলে মোদী সরকার কোথা থেকে প্রমাণ হাজির করবে?

হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর বিজেপি’র ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ছিল ভারতের বিরুদ্ধে নাকি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ভারত-বিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় আদানিদের জালিয়াতি ফাঁস করাকে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি কি তাহলে ভারতের জাতীয় স্বার্থ ও আদানি গোষ্ঠীর কর্পোরেট স্বার্থকে এক এবং অভিন্ন দেখাতে চাইছে? মোদী সরকারের দৃষ্টিতে কি আদানিই ভারত আর ভারতই আদানি? আদানিদের অনিয়ম, জালিয়াতি, প্রতারণা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থ সিদ্ধির অবৈধ পথকে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর স্বার্থ বলে দেখাতে চাইছে মোদীরা?

মনে রাখতে হবে আদানিদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক গোপন করার বিষয় নয়। তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই গৌতম আদানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। আদানি গোষ্ঠীর কর্পোরেট সাম্রাজ্য বিস্তারে মুখ্যমন্ত্রী মোদী ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর কোনও ভূমিকা নেই এটা প্রমাণ করতে হবে মোদীকে। গুজরাটে অনেক শিল্পপতি আছে। কিন্তু এই জমনায় সকলকে শত যোজন পেছনে ফেলে উঠে এসেছে একমাত্র আদানি। তেমনি ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর দেশের সব প্রতিষ্ঠিত কর্পোরেটকে সরিয়ে ধুমকেতুর বেগে আকাশ ছুঁয়েছে আদানি। ২০১৪ সালে যার মূলধন ছিল মাত্র ৭১০ কোটি ডলার ৮ বছরের মধ্যে তা বেড়ে হয় ২০ হাজার কোটি ডলার। বিশ্বের ৬০৯তম ধনী থেকে আদানি হয়ে ওঠেন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম। এটা কোনও জাদুকাঠির ছোঁয়ায় মোদীকে তো সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে। বলতে পারেন মোদীর শাসনের সুফল কুড়িয়েছেন আদানি। তাহলে কি অন্য গোষ্ঠীগুলি ঘোড়ার ঘাস কেটেছে। দেশের অর্থনীতি গতি মন্থর হয়েছে, কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে আর একমাত্র আদানির ব্যবসা, মুনাফা, সম্পদ বাড়ছে হু হু করে। এটা কি ছেলে ভোলানো রূপকথার গল্প! বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীকে টার্গেট করে আদানিদের অপরাধ এবং সরকারে সঙ্গে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানিদের সম্পর্কে আড়াল করা যাবে না। মোদীকে জবাব দিতে হবে। ভীত মোদীর সেই সাহস হবে কি?
 

Comments :0

Login to leave a comment