Editorial

গণহত্যায় আপত্তি নেই

সম্পাদকীয় বিভাগ


প্যালেস্তাইনের গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলের তিন সপ্তাহাধিক ধরে চলতে থাকা নির্বিচার গণহত্যা অভিযান অবিলম্বে বন্ধ হোক চায়না নরেন্দ্র মোদীদের নতুন ভারত। গাজায় নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে পাইকারি হারে খুন এবং ‍‌জল-স্থল-আকাশ পথে বোমা ক্ষেপণাস্ত্র-গোলার আঘাতে নজিরবিহীন ধ্বংসসাধনের সবচেয়ে জোরালো সমর্থক ও সাহায্যকারী যুদ্ধপ্রিয় সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার অধীনস্ত সঙ্গী হয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের জরুরি অধিবেশনে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবে সায় দেয়নি। যে কোনও ধরনের যুদ্ধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে চিরকাল গর্জে ওঠা ভারত এবং বিশ্বব্যাপী শান্তির পক্ষে সওয়ালকারী ভারত মোদীর হাতে পড়ে যুদ্ধের পক্ষে, ধ্বংসের পক্ষে, নরহত্যার পক্ষে পরোক্ষে সাফাই গাইছে। অথচ এক বছরও হয়নি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড়গলা করে দুনিয়াকে নীতি বাক্য শুনিয়েছিলেন ‘এখন যুদ্ধের সময় নয়’। এখন তিনি ভোল পালটে ফেলেছেন। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধে তার আপত্তি নেই। মুখে অবশ্য বলার সাহস হয়নি এটা যুদ্ধের সময়।
গাজায় ২২ লক্ষ মানুষের বাস। মার্কিন মদতে ইজরায়েলের গণহত্যা অভিযানে ইতিমধ্যে প্রায় দশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে অর্ধেকই প্রায় শিশু। নিজের বাড়িতে থাকার মতো অবস্থায় নেই বাকিদের কারোর। কয়েক লক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। কয়েক লক্ষ গাজাতেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। আহত-জখমের সীমাপরিসীমা নেই। গোটা গাজা বিদ্যুৎহীন, জ্বালানিহীন, টেলি ও সড়ক যোগাযোগবিহীন, খাদ্যহীন, ওষুধ-চিকিৎসাহীন। বসতবাড়ির পাশাপাশি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়শিবিরগুলি। এক চরমতম মানবিক সঙ্কটের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনছে গাজার মানুষ।
২২টি আরব দে‍‌শের তৈরি যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবটি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে পেশ করে জর্ডন। তাতে সমর্থন জানায় ১২০টি দেশ। বিরুদ্ধে ভোট দেয় আমেরিকা ও ইজরায়েল। সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। এছাড়া কোনও গুরুত্বপূর্ণ দেশ বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। এমনকি ইজরায়েলকে সমর্থনকারী মার্কিন মিত্র ইউরোপের দেশগুলিও বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। কিন্তু দুনিয়াকে অবাক করেছে ভারতের অবস্থান। তুচ্ছ অজুহাতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দিয়ে বিরত থেকেছে ভারত। হিন্দুত্ববাদী উগ্র জাতীয়তাবাদীদের কারণে আমেরিকা-ইজরায়েলের পাশে দাড়ানোকে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিল ভারত যে যুদ্ধের ও গণহত্যার বিরোধিতা করতে পারেনি। শুরুতে স্বয়ং মোদী সোচ্চার হয়ে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে বিদেশমন্ত্রক থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় ভারত পৃথক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের পক্ষে। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ বা গণহত্যা বন্ধে মোদী বা ভারত একটি শব্দও খরচ করেননি। এটা পরোক্ষে ইজরায়েলের গণহত্যা।কে সমর্থন করা। এবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের সেই অবস্থানেরই প্রতিফলন ঘটেছে। মোদীর নতুন ভারতের বিদেশনীতি বদলে গেছে। এখন তারা মার্কিন নেতৃত্বে যাবতীয় সামরিক ও স্ট্র্যা‍‌টেজিক জোটের শরিক হতে চায়। তারজন্য আমেরিকার অধীনস্ত হতেও আপত্তি নেই।

Comments :0

Login to leave a comment