বলতে এবং শুনতে দারুণ উপাদেয় মনে হলেও প্রধানমন্ত্রীর সাধের ডিজিটাল ইন্ডিয়া ইদানীং অনেক ক্ষেত্রেই আমজনতার কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই আশ্চর্য বিকাশের যুগে ভারত অন্যান্য দেশের থেকে পিছিয়ে থাকবে সেটা মোটেই কাম্য হতে পারে না। তাই এই ডিজিটাইজেশনের যুগে অনলাইনে কাজকে সহজে এবং কম সময়ের মধ্যে করে ফেলার সুযোগ হাত ছাড়া করা যায় না। যে কোনও সরকারের ক্ষেত্রেই জিডিটাইজেশন ব্যবস্থা চালু করা যুক্তিসঙ্গত এবং সময়ের দাবি। এই অবশ্যকরণীয় কাজটি করার জন্য কোনও সরকারই আলাদা করে কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না। অবশ্য নরেন্দ্র মোদীরা হামেশাই সেই দাবি করে থাকেন।
ডিজিটাইজেশন ব্যবস্থা যেমন তেমন করে চালু করে দিলেই চলে না। ক্রমাগত উন্নত হতে থাকা এই আধুনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ নিতান্তই অনভিজ্ঞ এবং বলা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞ। যারা একটু আধটু জানেন তারা উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে কাজে লাগাতে পারেন না। তাই এমন এক অজানা ব্যবস্থার মধ্যে তাদের আচমকা ছেড়ে তারা শুধু আতান্তরে পড়েন না, নিতান্তই অসহায় ও বিপন্নবোধ করেন। তাই তাদের পুরোপুরি বা আংশিক নির্ভর করতে হয় অন্যের উপর (সাইবার কাফে ইত্যাদি)। যাদের উপর নির্ভর করে তার ডিজিটাইজেড যুগে পা রাখবেন তাদের সততা ও নির্ভরযোগ্যতা কোথাও যাচাই হয় না। তাই সেখানে ঠকবার যথেষ্ট আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া ডিজিটাইজেশনের সুবিধা পেতে ঘরে ঘরে কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন থাকা জরুরি। সেটা এখনো সুদূর পরাহত। আবার ডিজিটাইজেড পরিষেবার জন্য যে সব সফটওয়ার, হার্ডওয়ার এদেশে ব্যবহার হয় সেগুলি কতটা উন্নত, নির্ভরযোগ্য ও সুরক্ষিত সেবিষয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তেমনি কম্পিউটার, সফটওয়ার প্রযুক্তিও প্রতিদিনই প্রায় উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। আজকের প্রযুক্তি কালই পুরানো ও বাতিলযোগ্য হয়ে যায়। এই পুরানো হয়ে যাওয়া প্রযুক্তি দীর্ঘদিন ব্যবহার হলে তা অনির্ভরযোগ্য ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। তাই জিডিটাইজেশন ব্যবস্থা একবার চালু করে দিলেই হয় না, সময় ও গতির সঙ্গে তাল রেখে ক্রমাগত উন্নত ও সর্বাধুনিক করতে হয়। নচেৎ সেখানে হ্যাকার তথা সাইবার অপরাধীরা ঢুকে পড়ে তছনছ করে দিতে পারে। চুরি হয়ে যেতে পারে যাবতীয় তথ্য পরিসংখ্যান। ব্যক্তিগত মূল্যবান তথ্যের নিরাপত্তা বা গোপনীয়তা বলে কিছু থাকে না। সর্বোপরি আর্থিক ক্ষেত্রে এধরনের হানাদারিতে লোপাট হয়ে যেতে পারে মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ। প্রতিদিনই শোনা যায় এমন টাকা লোপাটের ঘটনা। ফলে অপরিকল্পিত ডিজিটাইজেশন নাগরিক জীবনে নতুন এক আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া এমন এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য, আধার তথ্য, পাসপোর্টের তথ্য, ব্যাঙ্কের তথ্য ইত্যাদি কোনও কিছুই আর গোপন এবং নিরাপদ থাকছে না। অনবরত চুরি হয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি ক্ষেত্র তো দূরের কথা খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা তথ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে। এমনই চুরির সর্বশেষ নমুনা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ‘কো-উইন’র তথ্য।
করোনার সময় টিকাকরণের জন্য এই সফটওয়ার চালু করে মোদী সরকার। টিকা নিতে হলে আধার তথ্য দিয়ে নাম নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক ছিল। দেশের ৮১ কোটির বেশি মানুষ টিাকা নিয়েছেন। তাদের আধার তথ্য মজুত আছে কো-উইনে’। সম্প্রতি আমেরিকা থেকে জানা গেছে সেই সব আধার তথ্য ‘কো-উইন’ থেকে চুরি হয়ে গেছে। চোররা সেই তথ্য বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আধার তথ্য নিয়ে টিকা দিয়ে মোদীর ছবি দিয়ে শংসাপত্র বিলি করে ঘরে ঘরে মোদীর প্রচার হয়েছে। অথচ মানুষের আধার তথ্য চোরেদের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা হয়নি। মোদীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য ভারতের জনগণের ব্যক্তিগত যাবতীয় তথ্য চলে গেছে বিদেশিদের জিম্মায়।
Comments :0