Post Editorial Dr. Biplab Acharya

যেমন দেখেছি ডাঃ বিপ্লব আচার্যকে

সম্পাদকীয় বিভাগ

Post Editorial Dr Biplab Acharya


মানস গুমটা
 

একটি ব্লেজারের গল্প...
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি আর অর্থোপেডিক বিভাগ মুখোমুখি না হলেও পাশাপাশি। ফ্রেজার ওয়ার্ডের দোতলায় সার্জারি আর সিসি ওয়ার্ডের দোতলায় অর্থোপেডিক বিভাগ। একটা ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো অঞ্চলের মাঝখানটা ফ্রেজার ওয়ার্ড। উত্তরে মুখ করে দাঁড়ালে পশ্চিমের বাড়িটা সিসি ওয়ার্ড। 


ডাঃ বিপ্লব আচার্য তখন সদ্য গড়ে ওঠা হেলথ ইউনিভার্সিটির ডিন। চারা গাছকে বৃক্ষে পরিণত করার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে। একই সঙ্গে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান। আবার বি সি রায় পোলিও হাসপাতালের দায়িত্বও তাঁর কাঁধে দিয়ে নিশ্চিন্তে সরকার। একটা শীতের দুপুরে বিল্ডিংগুলোর মাঝের ফাঁকা জায়গায় মুখোমুখি দেখা স্যারের সঙ্গে। আমি তখন সার্জারি বিভাগের সহকারী শিক্ষক। একটু রসিকতা করেই বললাম, শীত পড়েছে। আপনি একদিকে ডিন, অন্যদিকে বিভাগীয় প্রধান। একটা ব্লেজার পরতে পারেন তো। সবাই কেমন স্যুট টাই পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আপনি একটা ম্যাড়মেড়ে সোয়েটার পরে আছেন। পদমর্যাদা বলে একটা কথা আছে তো। শুনে গম্ভীর হয়ে নাকে এক টিপ নস্যি নিয়ে কিছু একটা বলতে যাবেন,তখনই বেশ কয়েকজন গ্রুপ-ডি স্টাফ হাউমাউ করে স্যারের কাছে হাজির। সুপারের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে। সবটা শুনে স্যার বললেন ঠিক আছে তোরা যা, কালকে সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানাবো। মিশন সফল হওয়ার হাসি নিয়ে ফিরে যাওয়া স্টাফেরা জানে এটা শুধু আশ্বাস নয়,আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করবেন স্যার। ওরা ফিরে যাওয়ার পর বললেন, ব্লেজার পরলে একটু চকচকে লাগতে পারে। নতুন দু’-একজন কাছাকাছি আসতে পারে, কিন্তু এদের মতো অনেকেই দূরে সরে যাবে। তারপরই জিজ্ঞেস করলেন তোর কি একটাই ব্লেজার? তোকে তো সব দিন এটাই পরতে দেখি।

 ভাবলাম এত ব্যস্ততার মধ্যেও, এভাবে নজর রাখেন কী করে? ছোট একটা ঘটনাই ডাঃ বিপ্লব আচার্যের জীবন দর্শন বোঝার জন্যে যথেষ্ট। সাধারণ মানুষের ডাক্তার। আপামর কর্মচারীদের বন্ধু, লড়াইয়ের সাথি।
কাজ করো...কাজ শেখ...
তখন আমি ফাইনাল ইয়ারে। ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ফাইনাল পরীক্ষার আগে অর্থোপেডিক সার্জারির ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষা। পরীক্ষক ডাঃ বিপ্লব আচার্য। প্রথম প্রশ্ন... কিছু পড়েছিস? বললাম একটু একটু। জিজ্ঞেস করলেন কোনও প্রশ্ন করবো? আমি বললাম না করলেই ভালো হয়। শুনে বললেন ঠিক আছে যা। ২ মাস সময় আছে মনে রাখিস।

ভালোভাবে ফাইনাল এমবিবিএস পাস করার পর স্যারকে প্রণাম করতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষায় কোনও প্রশ্ন না করে ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন? একদম পড়া করে যাইনি এরকম তো ছিল না। উত্তর ছিল জানি কিছু পড়েছিলি তবে অনেকটাই বাকি ছিল তোর। যারা ডাক্তারি পড়তে আসে তাদের মাথার ঘিলু নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। পরীক্ষায় পাশ করাও খুবই সহজ। একটু আধটু পড়লেই পাশ হয়ে যায়। তবে ডাক্তারি শিখতে হলে ঘিলু সঙ্গে নিয়ে ওয়ার্ডে পড়ে থাকতে হয়। আমাদের চোখ কান খোলা থাকে। কারা ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ায় আমরা জানি। ডাঃ আচার্য ছাত্র বৎসল ছিলেন? ছাত্র-ছাত্রীদের বন্ধু ছিলেন? মেন্টর ছিলেন? আদর্শ শিক্ষক? আমার মতে উনি ছিলেন সব। একাধারে শিক্ষক, মেন্টর, বন্ধু, অভিভাবক সর্বোপরি বিরাট ছাতা। যার তলায় নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে কাজ করা যায়। কাজ শেখা যায়। প্রায়ই একটা কথা বলতেন। কাজ করো, কাজ শেখ, পাশ/ফেল নিয়ে ভাবার দরকার নেই। জুনিয়ররা যখন অপারেশন করতো তখন অপারেশন থিয়েটারের এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকতো স্যারের। কাজ শেখানোর ব্যপারে ছিলেন ক্লান্তিহীন। এখন যারা অর্থোপেডিকসে ভালো কাজ করছেন, তাঁদের এক বড় অংশ ডাঃ বিপ্লব আচার্যের সরাসরি ছাত্র। এমনকি বহু ছাত্র-ছাত্রীকে বিদেশে গিয়ে উন্নত, বিশেষ চিকিৎসা, অপারেশন শিখে আসতে উৎসাহ দিয়েছেন,ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অসংখ্য অর্থোপেডিক চিকিৎসক তৈরির কারিগর। 


মডার্ন মেডিসিন ও তাঁর দূরদৃষ্টি
আমরা যখন ছাত্র, তখন গোটা ভারতবর্ষেই স্নাতকোত্তর এমএস,এমডি পড়ার সুযোগ ছিল খুবই কম। উপযুক্ত পরিকাঠামো, প্রয়োজনীয় শিক্ষক-চিকিৎসক না থাকলেও, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন সাম্প্রতিক সময়ে অসংখ্য নতুন পিজি কোর্স খোলার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে। যদিও এসবের গোপন লক্ষ্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির ব্যবসা বাড়ানো, তবুও সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিও কিছু সুবিধা পাচ্ছে। অতীতে এমডি এমএস কোর্স চালু করা এত সহজ ছিল না। নতুন স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করতে, তৎকালীন মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার অনুমতি পেতে, বহু কাঠ খড় পোড়াতে হতো। আমাদের রাজ্যে মেডিসিন সার্জারির মতো বড় বিষয়েও মাত্র ২৫টা করে স্নাতকোত্তর সিট ছিল। তারও আবার পঞ্চাশ শতাংশ ভর্তি হতো অল ইন্ডিয়া এন্ট্রান্স পরীক্ষার মাধ্যমে। রাজ্যে এমনিতেই কম সিট, ২০০৬ সাল নাগাদ, গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো, আমরা জানতে পারলাম, পিজি ছাড়া অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চালু থাকা এমডি, এমএস সিট গুলি মেডিক্যাল কাউন্সিলের অনুমোদন নেই। তার মানে আমাদের মতো যারা, নয়ের দশক থেকে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে, বিভিন্ন বিষয়ে, এমডি এমএস পড়েছি, তাদের ডিগ্রি মেডিক্যাল কাউন্সিলের অনুমোদনহীন। কারণ কোর্সগুলির অনুমোদনের জন্যে কাউন্সিলের ভিজিট করানো হয়নি। ফলে আমাদের মতো অনেকেই যারা ওই সময়ে এমএস এমডি করেছে, তারা শুধু নিজের রাজ্যেই কাজ করতে পারবে। রাজ্যের বাইরে বা দেশের বাইরে কাজ করতে পারবে না। রাগে ক্ষোভে অনেকেই তখন গাল দিচ্ছে সরকারকে। সবার মাথায় তখন বজ্রাঘাত। দিশাহারা অবস্থা আমাদের। ডাঃ বিপ্লব আচার্য তখন হেলথ ইউনিভার্সিটির ডিন। আমরা ছুটলাম তাঁর কাছে। অনুমোদন ফিরে পাওয়ার রাস্তার সন্ধানে। মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিয়মকানুন গুলে খাওয়া ডাঃ আচার্য বললেন উপায় একটাই।

 রেট্রোস্পেকটিভ অনুমোদন পাওয়ার জন্যে মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভিজিট করাতে হবে। একই সঙ্গে রাজ্যে বিভিন্ন বিষয়ে এমডি এমএস পড়ার সিট বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। বারবার বলতেন, পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স চালু না হলে মেডিক্যাল কলেজগুলি শুকিয়ে যাবে। মডার্ন মেডিসিনের বিপুল উন্নতি, অগ্রগতির সঙ্গে আমরা তাল রাখতে পারবো না। আমাদের রাজ্যের চিকিৎসা শিক্ষায় এই রকম টালমাটাল পরিস্থিতিতে, তাঁরই উদ্যোগে শুরু হলো নতুন কর্মযজ্ঞ। একদিকে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে পুরানো সিটগুলোর অনুমোদন ফিরে পাওয়া, অন্যদিকে নতুন নতুন স্নাতকোত্তর কোর্স খোলা। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল অ্যাসসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সদস্যরা। শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে বহু নতুন শিক্ষক-চিকিৎসক পোস্ট রাজ্য মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হলো। নিয়োগ হলো দ্রুততার সঙ্গে। শুরু হলো একের পর এক মেডিক্যাল কলেজে মেডিক্যাল কাউন্সিলের পরিদর্শন করানো। এই বিপুল কর্মযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে ফিরে পাওয়া গেল পুরানো সিটগুলোর অনুমোদন। শুধু তাই নয়, মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভিজিট করিয়ে বহু নতুন এমডি,এমএস, ডিএম,এমসিএইচ কোর্স চালু হয়ে গেল। ডাঃ আচার্য না থাকলে মডার্ন মেডিসিনে, আমাদের রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার এত সুযোগ তৈরি হতো না এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। মডার্ন মেডিসিনে তাঁর দূরদৃষ্টির ফসল এখন আমরা ভোগ করছি।


অ্যাসসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস 
আমরা যে সময় ডাক্তারি পড়তে ঢুকি, মানে ১৯৮৩ সালে, তখন মেডিক্যাল কলেজ সমেত রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে  এক অরাজক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের স্টাইপেন্ড বৃদ্ধি ও রোগী পরিষেবা উন্নতির দাবির মোড়কে  এবিজেডিএফ হাসপাতালে লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছে। তৎকালীন সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন হেলথ সার্ভিস অ্যাসসিয়েশনের একাংশ নেতৃত্ব, সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে শামিল হয়ে গেছে। রাজ্যজুড়ে চিকিৎসকদের হুমকি দিয়ে, তারা বাধ্য করছে লাগাতার কর্মবিরতিতে শামিল হতে। সই করে কাজ না করার ডাক ছিল ওই আন্দোলনের প্রধান অঙ্গ। এমনকি দিনের পর দিন ইমার্জেন্সি পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোগী পরিষেবা উন্নতির আন্দোলনে, রোগীর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করায়, সংগঠনের ভেতর থেকেই প্রতিবাদ করতে থাকেন ওই সংগঠনের সভাপতি প্রয়াত ভাস্কর ভাস্কর রায় চৌধুরি, আবিরলাল মুখার্জি, রমেন্দ্র নাথ কুণ্ডু সহ আরও বহু চিকিৎসক। হাসপাতালগুলিতে চূড়ান্ত নৈরাজ্যের পরিবেশে, ১৯৮৩ সালের ১৯ নভেম্বরে, পিজি হাসপাতালে রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ে ওই সংগঠনের মিটিঙে, মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা আন্দোলনের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বহু সংবেদনশীল চিকিৎসক। কিন্ত তাঁদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কেড়ে নেওয়া হয়  মাইক্রোফোন। সভাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়। ভণ্ডুল করে দেওয়া হয়। হেলথ সার্ভিস অ্যাসসিয়েশনের একাংশ নেতৃত্বের এইরকম অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদ করায় বহিষ্কৃত হতে হয় বিপ্লব আচার্য সমেত আরও চার জনকে। সেই সময় আমরা দেখেছি ডাঃ ভাস্কর রায় চৌধুরি, ডাঃ রমেন কুণ্ডু, ডাঃ আবিরলাল মুখার্জি, ডাঃ বরেন নাগ, ডাঃ বিপ্লব আচার্যের মতো চিকিৎসকেরা, নৈরাজ্যের পরিস্থিতিতে কীভাবে অসম লড়াই করে গেছেন।

 একদিকে রোগীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা আন্দোলনের  বিরোধিতায়, চিকিৎসকদের বোঝাতে গোটা রাজ্যে দৌড়ে বেড়ানো, অন্যদিকে দিনরাত এক করে, অসম শক্তি নিয়েও মেডিক্যাল কলেজগুলির ইমার্জেন্সি, ইন্ডোর, অপারেশন বজায় রাখার চেষ্টা। সেই উত্তাল পরিস্থিতিতে, হেলথ সার্ভিস 
অ্যাসোসিয়েশনের একাংশ নেতৃত্বের অগণতান্ত্রিক আচরণ ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নৈরাজ্য তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার বিরোধিতায়, প্রতিবাদী চিকিৎসকরা বাধ্য হন নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে। ১৯৮৪ সালের ২৪জুন, মৌলালি যুবকেন্দ্রে, একটি কনভেনশনের মধ্যে দিয়ে, ‘‘সায়েন্স, সার্ভিস, সোসাইটি’’ স্লোগানকে সামনে রেখে, সরকারি স্বাস্থ্যকে রক্ষা করা,উন্নত করা লক্ষ্য নিয়ে, গড়ে ওঠে সরকারি চিকিৎসকদের নিজস্ব সংগঠন ‘‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ’’। যাদের হাত ধরে এই সংগঠনের জন্ম হয়েছিল এবং পরবর্তীতে সংগঠন গড়ে তোলার পেছনে যে কয়েকজনের অবদান অপরিসীম তাঁদের মধ্যে ডাঃ বিপ্লব আচার্য অন্যতম।
ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু এবার আর নয় 
বয়স হয়েছিল কিন্তু চলে যাওয়ার সময় তো ছিল না। অসময়েই চলে গেলেন। পরিমিত জীবন অভ্যাসে, ছিলনা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস। বয়স জনিত হার্ট, কিডনির কিছু সমস্যা থাকলেও পিপলস রিলিফ কমিটির জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী দেখায় ছেদ ছিল না কোনোদিন। দ্বিতীয়বার অপারেশনের জন্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রান্তিক, গরিব মানুষের চিকিৎসা করে গেছেন। ২০১১সালে, ১৩ কেজি ওজনের পেটের টিউমারের, প্রায় ৬ ঘন্টা ব্যাপী অপারেশন ধাক্কা সামলে নিয়ে ফিরে ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। কাজের জায়গায়। প্রাণশক্তিতে ভরপুর আমাদের প্রিয় বিপ্লবদা, শিক্ষক ডাঃ বিপ্লব আচার্য ফিরে ছিলেন চিকিৎসা, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্যের আন্দোলনে। বিশ্রাম নেওয়ার কথা তাঁর মুখে কেউ শুনেছে বলে জানা যায়নি।


সাধারণ মানুষের আপনজনকে অবশ্য রেয়াত করেনি আমানবিক সরকার। ২০১২ সালে, অবসরের ৭ মাস আগে তাঁকে বদলি করা হয়েছিল দূরের মেডিক্যাল কলেজে। যেখানে, সেই সময়, তাঁর কাজ করার কোনো সুযোগই ছিল না। তবে সেখানেও, ওই অল্প সময়েই হয়ে উঠেছিলেন গরিবের বন্ধু, প্রান্তিক মানুষের আস্থা। মানুষের কাজ করতে গিয়ে নিজেকে অবহেলা করেছেন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতে পারেননি। ২০১১ সালে যে টিউমারের অপারেশন হয়েছিল সেই টিউমার আবার ঘুরে আসে তাঁর পেটে। কথা জড়িয়ে যাওয়া ও পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে তাঁকে ভর্তি হতে হয় তাঁর  দীর্ঘদিনের কর্মক্ষেত্র এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের সিসিইউতে। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসকদের টিম যখন সিদ্ধান্ত করেন আবার অপারেশন করার, তখনও আমরা তাঁর মুখে দেখিনি কোনো উদ্বেগের ছায়া। শান্তভাবে চিকিৎসকদের টিমকে বলেছিলেন,ভাবনার কিছু নেই, চিকিৎসা বিজ্ঞান যা করতে বলে তাই করো।


অপারেশনের দিন সকালেও খোশ মেজাজে গল্প করে অপারেশন থিয়েটারে গিয়েছিলেন। সার্জিক্যাল টিমকে হাসি মুখেই অনুমতি দিয়েছিলেন অপারেশনের। তবে এবারের দীর্ঘ অপারেশনের ধকল নিতে পারেনি ডাঃ আচার্যের শরীর। হার্ট, লাঙ, কিডনির নানা সমস্যা হতে থাকে অপারেশনের পরের দিন থেকে। ভেন্টিলেটরে ছিলেন প্রায় দশদিন। দিনরাত এক করে চিকিৎসকরা চেষ্টা করে গেলেও, তাঁরা হেরে গিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কাছে। মৃত্যু অনিবার্য হলেও, কিছু মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। 
ডাঃ বিপ্লব আচার্যকে অসময়ে হারানোর গভীর যন্ত্রনা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে তাঁর স্বপ্ন রূপায়ণের পথে।

 

Comments :0

Login to leave a comment