Editorial Pulwama

পুলওয়ামার সত্য ফাঁস

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Pulwama

 

পুলওয়ামা বিস্ফোরণ ঘটে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এমন এক ভয়ঙ্কর ঘটনার খবর জানার পর প্রায় সব বিরোধী দলের নেতারা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি হয় স্থগিত রেখেছিলেন অথবা বাতিল করেছিলেন। ব্যতিক্রম শুধু একজন, মহান দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেদিন তিনি জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে মনের সুখে বিদেশি টিভি চ্যানেলের জন্য শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পুলওয়ামার বিস্ফোরণ ঘটে  বিকেল  ‍‌তিনটে থেকে তিনটে  পনেরো মিনিটের মধ্যে। মোদী তাঁর শুটিং সেরে জঙ্গল থেকে বাইরে বেরিয়েছেন ছটা পঁয়তাল্লিশ থেকে সাতটার মধ্যে। প্রায় তিন ঘণ্টার ওপর তিনি ছিলেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকার তার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে ব্যর্থ। ভাবা যায় কাশ্মীরের মতো একটি সর্বোচ্চ স্পর্শকাতর এলাকায় একেবারে পাক সীমান্তের কাছে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৫০০ জওয়ানের কনভয় বিপ‍‌দে, অথচ দেশের নেতার খোঁজ নেই। শুটিং এবং  রাজ‍‌নৈতিক সমাবেশে ভাষণ সেরে তিনি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে কোনও এক ধাবা থেকে  ফোনে নাকি তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেছেন। তৎকালীন জন্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি যখন চরম সরকারি ব্যর্থতার কথা প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করাচ্ছিলেন তখন  প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ ঘটনা যাই ঘটুক সরকারের অপদার্থতা প্রকাশ্যে আনা যাবে না।


ঘটনার পর এনআইএ’র তদন্তে ১৮ মাস পর চার্জশিট পেশ হয়‌ তাতে ১৯ জনকে  অভিযুক্ত করা হয়। ইতিমধ্যে তাদের ৮ জন তথাকথিত এনকাউন্টারে মারা গেছে। অপর সাত অভিযুক্ত জেলে। বাকি চারজন হয় পাকিস্তানে বা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আছে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪০ জওয়ানের মৃত্যুকে ঘিরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছিল তার কোনও উত্তর মেলেনি। সরকারের তরফে সেসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিয়ে দেশবাসীর উদ্বেগ নিরসন বা রহস্যের উন্মোচনের কোনও প্রয়াস  দেখা যায়নি। ফলে সব প্রশ্ন আজও উত্তরহীন রহস্যে যোগ রয়ে গেছে। নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে কেন আড়াই হাজার জওয়ানকে নিয়ে প্রায় ১০০ গাড়ির  কনভয় নেওয়া হলো? কেন বিমানে তাদের যাবার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বাতিল করে? কেন সড়ক পথ  আগে থেকে পূর্ণ নজরদারির আওতায় আনা হয়নি? কেন হামলার আগাম গোয়েন্দাবার্তা মিললেও তাকে  উপেক্ষা করা হয়? তবে কি এমন একটি ঘটনা ঘটতে  দেবার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল।


এত জওয়ানের এভাবে মৃত্যুর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করার সর্বোচ্চ সরকারি তৎপরতা প্রত্যাশিত থাকলেও সরকার  সেদিকে  পা বাড়ায়নি। সবটা  ধামা চাপা দিয়ে ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে এবং নির্বাচনে উগ্র  জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা সৃষ্টি করে এবং দেশপ্রেমের ঝড় তুলে ফায়দা লুটতে শাসক দল ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভাবটা এমন দেশ চুলোয় যাক  আগে ভোটে জিততে হবে। দেশপ্রেমের উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য পুলওয়ামার বদলায় পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা  চালানো হয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দেশের  নবীন প্রজন্মকে  তাদের ভোটে  পুলওয়ামার শহীদ জওয়ান ও বালাকোটে হামলায় বীর জওয়ানদের  উৎসর্গ করার আহ্বান জানান। প্রকৃত সত্য  গোপন করতে সত্যপাল মালিকের মুখ বন্ধ করার নির্দেশ  সে কারণেই।  
 

Comments :0

Login to leave a comment