Editorial

মোদীর কল্যাণে ঘর জুটল রামের

সম্পাদকীয় বিভাগ


অবশেষে ঘর পেলেন ‘ভগবানী শ্রী রামচন্দ্র’। শুধু ঘর নয়, পেলেন আস্ত একটা শহরও। পাঁচশ বছর আগে মোঘল আমলে নাকি তিনি ঘর ছাড়া হয়েছিলেন। পঁচাত্তর বছর আগে গভীর রাতে একদিন কোথা থেকে এসে তিনি নাকি বাবরি মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন। তারপর থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাবরি মসজিদই ছিল তাঁর ঠাঁই। ভক্তরা মসজিদ ভেঙে ধ্বংস করে দিলে রামের ঠাঁই হয় অস্থায়ী ঝুপড়িতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন বলেই এমন চোখ ধাঁধানো ঘর মিলেছে রামের। মোদী না থাকলে রামকে হয়তো গৃহহীনই থাকতে হতো। দেশজুড়ে মোদী ভক্তরা এমন বার্তাই বিলিয়ে চলেছেন অহরহ। অবশ্য এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে মোদী জমানাতেই ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ ও যুক্তি তর্ককে পাশে সরিয়ে কেলবমাত্র বিশ্বাসের উপর ভর করে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধানের রক্ষক দেশের সর্বোচ্চ আদালত ধ্বংস করা বাবরি মসজিদের জমি রামভক্তদের হাতে তুলে দিয়েছে। অতঃপর মোদীর উদ্যোগেই টাইফুন গতিতে চলেছে মন্দির নির্মাণের কাজ। করোনাকালে ভরা লকডাউনের সময় মোদীই ঘটা করে মন্দিরের ভূমিপূজন সেরেছিলেন। মোদী জমানাতেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে অযোধ্যার ভোল পালটে ঝাঁ-চকচকে শহর বানিয়েছে। গৌরী সেনের বদলে মোদী-যোগীই ঢেলে‍‌ছেন অঢেল সরকারি টাকা। শতশত বছরের প্রাচীন অযোধ্যার ক্ষীণতম নির্দশনও বাঁচিয়ে রাখা হয়নি। বদলে ফেলা হয়েছে ইতিহাসের বাহক রাস্তাঘাট, মহল্লা, অলিগলির নামও। হয়েছে নতুন তাক লাগানো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। নবনির্মাণ হয়েছে রেল স্টেশনের। তবে পুরানো নাম  বদলে গেছে। যে দেশে এত দারিদ্র, বেকারী, রুজির সঙ্কট, সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ জীবনযন্ত্রণা অযোধ্যায় এলে তার ছিটেফোঁটা টের পাওয়া যাবে না।
যে শহরে মোদী বানিয়েছেন রামের ঘর সে শহর এমন অত্যাধুনিক ধর্মীয় আভিজাত্যপূর্ণ না হলে চলে কি? মোদী শুধু গৃহহীন রামের ঘর বানিয়ে দেননি, সেই ঘরে নিষ্প্রাণ মূর্তিতে রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠাও করেছেন। মূর্তি স্বয়ং ভগবান প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন না, তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে মোদীর মতো ভক্তের প্রয়োজন হয়। যেমন পশ্চিমবঙ্গে দুর্গার চক্ষুদান করতে মমতাকে প্রয়োজন হয়। এর জন্য মোদী নাকি পনেরো দিন কঠোর ব্রত পালন করেছেন। বাড়ির লনে চেয়ারে বসে গোমাতার সেবা করেছেন। অবশ্য মন্দির উদ্বোধনের সময় অযোধ্যায় যাতে ভবঘুরে গো মাতারা উৎপাত করে পণ্ড করে দিতে না পারে তার জন্য তাদের ধরে আটক করে রাখা হয়েছে। মোদীর বাড়ির গোমাতারা শান্তশিষ্ঠ হলেও অযোধ্যার গোমাতারা সম্ভবত বেজায় বেয়াড়া।
ধর্ম থেকে সরকার-প্রশাসনকে দূরে রাখার নিদান যতই সংবিধানে লেখা থাক মোদী-যোগীরা চলেন হিন্দুত্ববাদী সংবিধান মেনে। তাই মন্দির নির্মাণে ঝাঁপিয়েছিল সরকার। যোগী তো অযোধ্যার নিত্যযাত্রী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু কাজ যেই করুক কৃতিত্ব মোদীর। প্রচারের সমস্ত রং-রূপ-আলো তাই মোদীর মুখেই কেন্দ্রীভূত। কৃতিত্বের ভাগ তিনি কাউকে দেবেন না। তাই গোটা অযোধ্যা সেজেছে মোদীর ছবিতে। মোদী আলোয় রামকে খুঁজে পাওয়া ভার। ভ্রম হতে পারে এটা কার মন্দির রামের না মোদীর। অবশ্য মোদী সকলকে বিমুখ করেননি ক্ষণিকের তরে হলেও পাশে রেখেছেন যোগী ও ভাগবতকে। এমনকি কপাল খুলেছে রাজ্যপাল আনন্দীবেনেরও। কিন্তু ডাক পাননি দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি এলে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদায় তিনি থাকবেন সামনে, পেছনে পড়ে যাবেন মোদী। সেই আশঙ্কায় রাষ্ট্রপতিকে ডাকা হয়নি নাকি আদিবাসী বলে মন্দিরে প্রবেশে সমস্যা আছে, স্পষ্ট নয়। তবে এতদিনে এটা সকলেই বুঝে গেছেন রামমন্দিরের সঙ্গে মোদী ছাড়া আর কারও নাম থাকুক মোদী সেটা চান না। অযোধ্যার রামমন্দির মোদীরই কীর্তি এটাই ‍‌ইতিহাসে লিখিত হোক চান মোদী।
 

Comments :0

Login to leave a comment