STORY — SOURISH MISHRA | Barbie Princess Cloth Umbrella — NATUNPATA | 28 APRIL 2024

গল্প — সৌরীশ মিশ্র | ছাতা — নতুনপাতা | ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  Barbie Princess Cloth Umbrella   NATUNPATA  28 APRIL 2024

গল্প

ছাতা

সৌরীশ মিশ্র

নতুনপাতা


"আমি কিন্তু বার্বি ছাতা ছাড়া অন্য কোনও ছাতা কিনবো না আগে থেকেই বলে দিচ্ছি, বাবা।"
"ঠিক আছে, ঠিক আছে। দোকানে তো ঢোক এখন।"
দূর্বা আর ওর বাবা দেবপ্রিয়বাবু দোকানে ঢুকলেন। দোকানে এ সি চলছে। এ সি-র ঠান্ডা হাওয়ায় প্রাণ যেন জুড়িয়ে গেল দু'জনেরই। ক'দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে এই অঞ্চলে। তীব্র গরমে একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রাণ মানুষজনের। এটি এই এলাকার সবচাইতে চালু ছাতার দোকান। দূর্বা আর ওর বাবা দোকানে ঢুকে দেখল গ্রীষ্মের এই ভরদুপুরেও ভালই ভিড় দোকানে। একটা বাদে সবগুলো সেলস কাউন্টারেই ক্রেতা। তাই, ফাঁকা থাকা সেলস কাউন্টারটায় এসে দাঁড়াল ওরা।
সেলস-এর বছর পঁচিশ-তিরিশের ছেলেটি দেবপ্রিয়বাবুকে বললেন, "কি দেখাব স্যার?"
দেবপ্রিয়বাবু মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, "বল্ আংকেলকে তোর কি লাগবে।"
"তোমাদের কাছে বার্বি ছাতা আছে?" একটুও না ঘাবড়িয়ে টরটরিয়ে কথাগুলো বলে দশ বছরের দূর্বা।
সেলসের ছেলেটি ঠোঁটের কোণে একটু হেসে বলেন, "হ্যাঁ আছে। দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমায়।" বলতে বলতেই পিছনের শো-কেশ থেকে দশ-বারোটা বার্বি ছাতা বের করে দূর্বার সামনে এনে রাখে। ছোট্ট দূর্বা সাথে সাথেই বার্বি ছাতাগুলো নেড়ে-চেড়ে পছন্দ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

মিনিট দশেক লেগে যায় দূর্বার কোন ছাতাটা সে নেবে সেটা ঠিক করতে। প্রতিটা ছাতাই যে দারুণ দেখতে। শেষে, গোলাপি রঙের একটা বার্বি ছাতা পছন্দ করল সে। দূর্বার ছাতা বাছা হয়ে যেতেই সেলসের ছেলেটা দেবপ্রিয়বাবুকে বললেন, "আর কিছু লাগবে কি স্যার, না কি বিল করব?"
না আর কিছু লাগবে না, আপনি বিল করুন, এই কথাই বলতে যাচ্ছিলেন দেবপ্রিয়বাবু, তখুনি বাবার হাতটা ঝাঁকিয়ে দূর্বা বলে উঠল, "বাবা, আরেকটা ছাতা কিনতে হবে।"
"আরেকটা ছাতা? কার জন্য। তোর মার আর আমার ছাতা তো রয়েইছে। তবে?"
"মাসিদিদার ছাতাটা একদম বাজে হয়ে গেছে বাবা। ছাতার কাপড়টা ছিঁড়ে গেছে। ক'টা শিক-ও ভেঙ্গে গেছে। ওটা নিয়েই মাসিদিদা কাজে আসে। আমার খুব খারাপ লাগে, বাবা।"
দূর্বাদের বাড়িতে যে বয়স্কা মহিলা ঠিকে কাজ করে তারই কথা এখানে বলছে দূর্বা। দুর্বার বাবা আর মা ঐ মহিলাকে মাসি বলে, তাই দূর্বা তাঁকে ডাকে মাসিদিদা বলে।
দেবপ্রিয়বাবুর খেয়াল হয়, মেয়ে ঠিক কথাই বলেছে। তিনিও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন। দেবপ্রিয়বাবুর ভীষণই ভাল লাগে এই দেখে যে, মেয়ে এতো কম বয়সেও তার আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের কথাও ভাবছে।
"বাবা, কি ভাবছ? মাসিদিদার জন্য একটা ছাতা কিনবে না?"
"কিনব মা। আমাকে ভাল কোয়ালিটির লেডিস ছাতাও দেখান তো।" প্রথম বাক্যটা মেয়েকে আর শেষ বাক্যটা সেলসের ছেলেটিকে বললেন দেবপ্রিয়বাবু।
ছেলেটি সাথে সাথেই ক'টা মেয়েদের ছাতা নামায় শো-কেশ থেকে। রাখে সেগুলো দেবপ্রিয়বাবু আর দূর্বার সামনে।
"নে, তোর মাসিদিদার জন্য ছাতা তুই-ই পছন্দ কর।" মেয়েকে বলেন দেবপ্রিয়বাবু।
দূর্বা সাথে সাথে বাছতে শুরু করে দেয় ওর মাসিদিদার জন্য ছাতা।
দেবপ্রিয়বাবু লক্ষ্য করেন, তাঁর মেয়ের মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ফের, ঠিক যেমনটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল একটুখানি আগে যখন সে নিজের জন্য ছাতাটা বাছছিল। 
মেয়ের জন্য বড় গর্ব লাগে দেবপ্রিয়বাবুর।


 

Comments :0

Login to leave a comment