Note Ban

ব্যর্থতার ছ’বছর

সম্পাদকীয় বিভাগ

Indian Note

ছ’বছর আগে এক সান্ধ্যাকালীন মহাভাষণে আচমকা দেশবাসীকে হতচকিত বাক্‌রুদ্ধ করে মধ্য রাত থেকেই চালু ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল বলে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন চমক প্রেমী আত্মপ্রচার সর্বস্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কার পরামর্শে এমন এক চূড়ান্ত হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষকে কার্যত পথে বসিয়ে ছেড়েছিলেন তা আজও অজ্ঞাত। তবে সিদ্ধান্তটি যে একান্তভাবে মোদীর নিজের তা অঘোষিত সত্য হিসেবেই জনপরিসরে চর্চিত। স্বধীন ভারতের ইতিহাসে এমন একটি কার্যত নজিরবিহীন সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে সাড়া জাগানো প্রচারের ঝড় তোলা হলেও ছ’বছর পর সেই দিনটিতে প্রধানমন্ত্রী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। সরকারের অন্য কোনও পদাধিকারী বা মুখপাত্রও মুখ খোলেননি। নোট বাতিলের ঘোষণার সময় যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাজির করা হয়েছিল আজ সেসব নিয়েও সরকারের কোনও ভাষ্য নেই। বোঝাই যাচ্ছে সরকারের তথা প্রধানমন্ত্রীর বলার মতো কিছু নেই বা বলার মুখ নেই। তাই গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এতবড় এক সরকারি পদক্ষেপের কোনও বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন হয় না। নীরবে প্রতিবছর সরকার এড়িয়ে যায় দিনটিকে। প্রধানমন্ত্রীর এই নীরবতাই পদক্ষেপটির চরম ব্যর্থতার স্বীকৃতি।

নোট বাতিলের ঘোষণায় কি বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী? জোর গলায় দাবি করেছিলেন তাঁর এই মাস্টার স্ট্রোকে দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে জাল নোট, মিলিয়ে যাবে যাবতীয় কালো টাকা, কালো টাকার মালিকরা হারাবে সব কালো টাকা, জব্দ হবে সন্ত্রাসবাদীরা কালো টাকা ও জাল নোট লোপাট হয়ে যাবার ফলে। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কোনও লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। মাঝখান থেকে নগদের অভাবে প্রতিটি পরিবারকে কয়েক মাস ধরে অশেষ যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। টাকার জন্য এটি এম-এ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন দেড় শতাধিক মানুষ। সবচেয়ে যেটা ভয়ঙ্কর আকার নেয় সেটা ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থাগুলির নগদের অভাবে কারবার বন্ধ হয়ে যাওয়া। লক্ষ লক্ষ সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হবার সাথে সাথে কাজ হারিয়েছেন কয়েক কোটি শ্রমজীবী। বন্ধ হওয়া সংস্থার অধিকাংশই আর কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অর্থনীতিতে বিনা মেঘে বজ্রঘাতের মতো নেমে আসে বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ের মধ্যেও লক্ষ্য পূরণের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ৫০ দিন সময় চেয়ে বলেছিলেন যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলে রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে যেন জনগণ তাকে সাজা দেয়। সেই নরেন্দ্র মোদী এখন মৌন মোদী। হবে না-ইবা কেন?
আজ দেশে জাল নোটের ছড়াছড়ি, ধরা পড়ছে প্রতিদিনই। কালো দাপট একটুও কমেনি। বরং নোট বাতিলের সুবাধে সব কালোটাকা সাদা হয়ে গেছে। এখন নতুন করে কালো টাকার সমান্তরাল অর্থনীতি তৈরি হয়েছে। আর সন্ত্রাসবাদ? সেও বিরাজ করছে যথারীতি। মাঝখানে ব্যর্থতা আড়াল করতে লক্ষ্য বদলে বলা হলো নগদহীন অর্থনীতি ও ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতেই নাকি নোট বাতিল করা হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক তথ্য ডিজিটাল লেনদেন খানিকটা বাড়লেও তার থেকে অনেক বেশি বেড়েছে নগদ লেনদেন। বাজারে নগদের পরিমাণ ছ’বছরে দেড়গুণেরও বেশি বেড়েছে। বাস্তবে কোনও উদ্দেশ্যই পূরণ হয়নি। মাঝখান থেকে খুন হয়েছে অর্থনীতি, বরবাদ হয়েছে মানুষের রুজি।
 

Comments :0

Login to leave a comment