CABLE TV CRISIS

চ্যানেল ফিরলেও ঝুলেই রইল মাশুলবৃদ্ধির শঙ্কা

রাজ্য জেলা কলকাতা

cable tv cable operators bengali newstrai

কেবল চ্যানেল দেখা সমস্যা কাটতে চলেছে দ্রুত। ফের টিভির পর্দায় ফিরতে চলেছে জনপ্রিয় চ্যানেলগুলি। যদিও চড়া হারে মাসুল বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে। 

এরাজ্যের কেবল টিভি অপারেটররা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার থেকে লাগাতার এমএসও অফিসগুলিতে ধর্না দিয়েছেন তাঁরা। এই এমএসও’র থেকে সংযোগ নেন পাড়ার কেবল অপারেটররা। 

বিধাননগরে হ্যাথওয়ে এবং গোলাঘাটায় জিটিপিএল’র অফিসে তালা দিয়ে বিক্ষোভ দেখান কেবল টিভি অপারেটররা। এই এমএসও সংস্থাগুলির কাজ এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ডেন সংস্থার অফিসেও বিক্ষোভ দেখান কেবল অপারেটররা। এই চাপের মুখে জট কাটাতে রাজি হন এমএসও সংস্থাগুলি। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এমএসও এবং ব্রডকাস্টাররা এক বৈঠকে বসেন। সেখানে সংস্থাগুলির শীর্ষ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা অবধি চলে বৈঠক। বৈঠক শেষে জট কাটে। হ্যাথওয়ে, ডেন, জিটিপিএল প্রভৃতি এমএসও সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকা কেবল লাইনে ব্রডকাস্টাররা চ্যানেলের সংযোগ ফিরিয়ে দেন। 

সিটি কেবল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগেই ব্রডকাস্টারদের চুক্তি হয়ে গিয়েছিল। তাই সিটি’র সংযোগ নেওয়া দর্শকরা কেবল চ্যানেল দেখা থেকে বঞ্চিত হননি।

ঘটনার সূত্রপাত সপ্তাহ খানেক আগে। কেন্দ্রীয় টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা ট্রাই এনটিও-৩ নামে একটি মাশুল বিষয়ক নির্দেশিকা আনে। সেই নির্দেশিকার মাধ্যমে জি, স্টার, সোনি’র মতো ব্রডকাস্টাররা চ্যানেল এবং প্যাকেজের মাশুল এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। কেবল অপারেটররা জানাচ্ছেন এই বৃদ্ধির হার ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ। 

ব্রডকাস্টারদের এই এক তরফা আচরণের প্রতিবাদে তাঁদের সঙ্গে নয়া মাশুল চুক্তি করতে অস্বীকার করে এমএসও সংস্থাগুলি। হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থা ছাড়া সারা দেশের সিংহভাগ এমএসও সংস্থাই এর প্রতিবাদে সরব হন। এই সংস্থাগুলির অনুমোদিত সেট টপ বক্সে কেবল সংযোগ বন্ধ করে দেন ব্রডকাস্টারা। এবং স্বাভাবিক ভাবেই তারফলে গোটা দেশের সাড়ে চার কোটি বাড়িতে সেট টপ বক্স অকেজো হয়ে পড়ে। কলকাতা, কেরালা সহ ৭টি হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলাও হয়। 

সারা দেশের মতো এরাজ্যেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভের শিকার হন কেবল অপারেটররা। জনতার চাপ নিতে না পেরে বৃহস্পতিবার উত্তরপাড়ায় খোকন মোহন্তি নামে এক অপারেটর হার্ট ফেল করেন। এর পাশাপাশি আরজি কর সহ বেশ কিছু জায়গায় কেবল অপারেটরদের অফিসেও ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ। 

জটিলতা কাটিয়ে কবে ফিরবে টিভি চ্যানেল? এই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার কলকাতার চাঁদনি চকে ট্রাইয়ের আঞ্চলিক দপ্তর ঘেরাও করেন কেবল অপারেটররা। ট্রাইয়ের আধিকারিকরা জানান, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই তাঁরা এবিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। ফিরহাদ হাকিম সহ রাজ্য সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছে দরবার করেও কোনও সুরাহা আদায় করতে পারেননি কেবল অপারেটররা। 

ফলতঃ জনতার ক্ষোভের হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা লাগাতার এমএসও দপ্তর ঘেরাওয়ের পথে হাঁটেন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় লাগাতার আন্দোলন। এরাজ্যে কেবল অপারেটরদের মূলত ৩টি সংগঠন রয়েছে- আইসিও, বিশ্ববাংলা কেবল টিভি অপারেটর্স ইউনিয়ন এবং অ্যাবকো। তিন সংগঠনের সদস্যরাই এক যোগে আন্দোলনে নামেন।

আন্দোলনের চাপে এমএসও গুলির আধিকারিকরা ব্যবস্থা নিয়ে টিভিতে কেবল সংযোগ ফেরালেও মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে এখনও কোনও মীমাংসা হয়নি। 

একইসঙ্গে কেবল অপারেটরদের আশঙ্কা, এই জটিলতার সুযোগ নিয়ে কেবল ক্ষেত্রে জিও’র মতো বহুজাতিক ঢুকে পড়তে পারে। বরং এই জটিলতা এবং এনটিও-৩ মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে জিও’র আসার রাস্তাই পরিষ্কার করা হচ্ছে। আগামীদিনে জিও কমদামে চ্যানেল সংযোগ দেওয়ার কথা বলে গোটা বাজার দখল করতে পারে। তারফলে জীবিকা হারাবেন এরাজ্যের ১০ লক্ষের বেশি কেবল টিভি অপারেটর। 

এই প্রসঙ্গে বিশ্ববাংলা কেবল টিভি অপারেটর্‌স ইউনিয়নের সভাপতি শঙ্কর মন্ডল বলেন, কেবল অপারেটরদের সুরক্ষার জন্য আমরা রাজ্য পুলিশের ডিজিকে জানিয়েছি, সমস্ত থানায় ডায়েরি হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী, ফিরহাদ হাকিম সহ তৃণমূল নেতাদের কাছে দরবার করা হয়েছে। তাও কোনও সুরাহা মেলেনি। আমরা বাধ্য হয়ে এমএসও অফিসে তালা ঝুলিয়ে দাবি আদায় করেছি। ট্রাই ২০১৯ সাল থেকে কেবল টিভি’র ক্ষেত্রে জিও’র ঢোকার পথ করে দিচ্ছে। এনটিও-৩’র ফলে সাধারণ গ্রাহকের মাশুল বাড়বে। 

Comments :0

Login to leave a comment