Editorial

বেটির পক্ষে নয় ডাবল ইঞ্জিন

সম্পাদকীয় বিভাগ

নরেন্দ্র মোদীর ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ গালভরা স্লোগানের ঢাউস বেলুন ওডিশায় ডাবল ইঞ্জিনের গুঁতোয় ফেটে গেছে। দীর্ঘ দিনের বিজেডি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ওডিশায় সদ্য ক্ষমতায় আসা বিজেপি সরকার যে কেমন সুশাসন কায়েম করেছে এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বেটি বাঁচানোর ব্যবস্থা করেছে সেটা দুনিয়ার সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে বালাসোরের কলেজের ঘটনা। বছর বিশেকের কলেজ ছাত্রীর পড়াশুনা তো দূরের কথা তার সসম্মানে বাঁচার অধিকারটুকুও দেয়নি। ফলে অকল্পনীয় ও অসহনীয় মৃত্যুই তার জীবনে অনিবার্য হয়ে গেছে। বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও স্লোগানের উদ্‌গাতা নরেন্দ্র মোদী যথারীতি তার স্বভাবসিদ্ধ অভ্যাস অনুযায়ী মৌনীবাবা হয়ে আছেন। বাকি সব কথা অনর্গল বলে গেলেও এই প্রশ্নে একেবারে নীরব। গত বছর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে গলা ফুলিয়ে মহিলাদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিয়ে লম্বা ভাষণ দিয়েছিলেন। এটাই অগ্রাধিকার বলে আউড়ে ছিলেন। কিন্তু প্রতিদিন মহিলাদের বিরুদ্ধে দুঃসহ আক্রমণ ঘটে চললেও তিনি এ প্রসঙ্গে টুশব্দটিও করেন না। ভাঁওতাবাজি-জুমলাবাজির সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ প্রধানমন্ত্রী নিজে।
আরএসএস-বিজেপি’র নারী বিদ্বেষী মানসিকতার দাপটে ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যে নারীরা কোথাও নিরাপদে নেই। যোগীর রাম রাজত্বের দৌলতে উত্তর প্রদেশ তো এক্ষেত্রে ভারতরত্ন। রামভক্ত আর গো-ভক্তদের ডাবল ইঞ্জিনের রাজত্বে কোথাও নারীরা নিরাপদে নেই। তারা সসম্ভ্রমে নিরাপদে বাঁচতে পারেন না। পথে-ঘাটে, কর্মস্থলে, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নারীরা সমানাধিকার দূরের কথা ন্যূনতম আত্মমর্যাদা-আত্মসম্মান নিয়ে কাজ করতে পারেন না। পদে পদে যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতন, অশ্লীলতা, অপমান, কদর্য ইঙ্গিত তাদের সইতে হয়। প্রতিবাদ করলেও প্রতিকার মেলে না। উলটে বিপদের আশঙ্কা বাড়ে। হুমকির মুখে পড়তে হয়। কখনো সেটা ধর্ষণ-খুন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এটাই হিন্দুত্বের অভিনবত্ব।
বালাসোরের ফকির মোহন কলেজের ছাত্রী নিজের কলেজের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের যৌন নির্যাতনের ‍‌শিকার। দিনের পর দিন যন্ত্রণা সইতে না পেরে শরণাপন্ন হয় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। সঙ্ঘ পরিবারের শাখা এবিভিপি’র সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে শাসক বিজেপি’রও ঘনিষ্ঠ। ভেবেছিলেন কড়া দাওয়াই মিলবে। কিন্তু না, কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদেরকেই আড়ালের কৌশল নেয়। অগত্যা ছাত্রী কলেজ অধ্যক্ষকে  জানান। অধ্যক্ষ তাতে পাত্তাই দেননি। উলটে ছাত্রীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে চরম অপমান করা হয়। সহ্য করতে না পেরে কলেজের মধ্যেই গায়ে আগুন দিয়ে কয়েকদিন পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
এই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে নারীরা সে ছাত্রী হলেও তার উপর যৌন নির্যাতন করা যায়। সে কাজে অধ্যাপকরা লিপ্ত হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ বা অধ্যক্ষের কোনও আপত্তি নেই। সর্বোপরি এমন এক ভয়ঙ্কর ঘটনার পর রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী এমন কি মুখ্যমন্ত্রীর নির্বিকার থাকা থেকে প্রমাণ হয়ে যায় শাসক বিজেপি ঠিক কি চাইছে। নারীদের ভোগ্য ছাড়া আর কিছু ভাবতে চায় না এহেন শাসকরা।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় গোটা ওডিশা উত্তাল। বিক্ষোভ প্রতিবাদ ছড়িয়েছে সারা দেশে। কংগ্রেস, সিপিআই(এম) সহ ইন্ডিয়া মঞ্চের ৮টি দলের ডাকে ওডিশা বন্‌ধ হয়েছে। প্রতিবাদে শামিল প্রধান বিরোধী দল বিজে‍‌ডি-ও। জোরালো দাবি উঠেছে কড়া সাজার। ছাত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতার দায় মাথায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগেরও দাবি উঠেছে। উগ্র হিন্দুত্বের আবহে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনুবাদী সংস্কৃতির চাষ শুরু হয়ে গেছে। তাই ছাত্রীরা আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ নন। পুরুষতন্ত্রের যৌন আগ্রাসন বাড়তে থাকলে নারী শিক্ষায় ছেদ পড়ে যাবে। যৌন লালসা থেকে আত্মরক্ষায় ছাত্রীরা বাধ্য হবে শিক্ষার আঙিনা থেকে দূরে থাকতে।

Comments :0

Login to leave a comment