Supreme Court

সিবিআই-কে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের ৩ মাসের মধ্যে ১৬ পৌরসভার দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে

রাজ্য

পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতির মামলাতেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই তদন্তের শ্লথতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো সুপ্রিম কোর্টে। এরাজ্যের ১৭টি পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে। তারমধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতে চার্জশিট দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। আগামী ৩ মাসের মধ্যে বাকি ১৬টি পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিলো শীর্ষ আদালত।
একই সঙ্গে এদিন পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের জামিনের আবেদনও খারিজ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি অতুল এস চান্দুকরের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। আদালত জানিয়েছে, এখনই জামিন মঞ্জুর করা সম্ভব নয়। বিচারপতির মন্তব্য, ওএমআর শিটে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। হাজার হাজার যুবকের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তদন্তের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তারা অয়ন শীলকে জামিন দিতে আগ্রহী নয়। ফলে আবেদনকারীর আইনজীবী যদি চান, তাহলে তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন প্রত্যাহার করতে পারেন। ৩ মাস পর ফের আবেদন করতে পারবেন তিনি। এরপরই জামিনের আবেদন প্রত্যাহার করেন অয়ন শীলের আইনজীবী।
টেট ও এসএসসি কেলেঙ্কারির তদন্তেই সামনে এসেছিল ধৃত তৃণমূল ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের নাম। তদন্ত এগতেই অয়ন শীলের সূত্রেই সামনে এসে পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতিও। এর প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটে ইডি উল্লেখ করেছিল, ২০১২-১৪’র দুটি টেটেই বিপুল পরিমাণ টাকা তুলেছিল ধৃত অয়ন শীল। নিয়োগের রেট চার্টও ছিল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা আর প্রশিক্ষণহীনদের জন্য ছিল ৪ লক্ষ টাকা। প্রায় ১ হাজার প্রার্থীর তালিকা মেলে তাঁর কাছ থেকে। ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন শুধু ২০১২-১৪’র টেট থেকে। এর মধ্যে এজেন্টের মাধ্যমে এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ২৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন তিনি। পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটেও অভিযুক্ত হয় এই অয়ন শীল। তৃণমূল সরকারের আসার পরে অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ শান্তনু ব্যানার্জির ‘বন্ধু’ অয়ন শীলের সংস্থাকেই পৌরসভার নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘থার্ড পার্টি’ এজেন্সি হিসাবে চিহ্নিত করেছিল সরকার। রাজ্যের অধিকাংশ পৌরসভায় নিয়োগের বরাত পেয়েছিল ধৃত প্রোমোটার অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজোন প্রাইভেট লিমিটেড। এই সংস্থার মাধ্যমেই পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো। আবার তাঁর বাড়িতেই তল্লাশি চালিয়ে টেটের নথি, পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড পর্যন্ত উদ্ধার হয়। 
দক্ষিণ দমদম পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতে এখনও পর্যন্ত চার্জশিট দিতে পেরেছে সিবিআই। তাতে ধৃত অয়ন শীলের পাশাপাশি নাম ছিল দক্ষিণ দমদম পৌরসভার তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পাঁচু রায়ের।  কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার চার্জশিটে দাবি করে, দক্ষিণ দমদম পৌরসভা সহ রাজ্যের ৬০টির মতো পৌরসভায় বেআইনি নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে। কোভিড পর্বের সময় একই দিনে পৌরসভায় নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি, নিয়োগপত্র বিলির পাশাপাশি ২৯ জন চাকরিতে যোগও দিয়ে দেন। কোনও পরীক্ষার বালাই নেই। 
সিবিআই’র তরফে আইনজীবী এদিন বলেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে তদন্ত। ১৬টি পৌরসভার তদন্ত প্রায় শেষ। বেশ কিছু ওএমআর শিট নকল করা হয়েছে। যাঁরা সেই কাজগুলো করেছেন, তাঁদের খোঁজ করছে সিবিআই। এরপরেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ৩ মাসের মধ্যে ১৬টি পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলার তদন্ত শেষ করতে হবে। ৩ মাস পরে অয়ন শীলের আইনজীবীকেও জামিনের আবেদন জানানোর পরামর্শ দিয়েছে বেঞ্চ।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন