নীলাদ্রি সেন
জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সতেরো দফা দাবিতে সিআইটিইউ সহ দেশের দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীদের জাতীয় স্তরের স্বনিয়ন্ত্রিত ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর যৌথ মঞ্চের আহ্বানে আগামী ৯ জুলাই, বুধবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট হতে চলেছে। প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল এই ধর্মঘট হবে ২০ মে। কিন্ত পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা করে ধর্মঘটের দিন পরিবর্তন করে ৯ জুলাই করা হয়। ধর্মঘটের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো— ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে। সিআইটিইউ এবং সবকটি বামপন্থী ইউনিয়ন দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দাবিতে দেশজুড়ে প্রচার ও আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে। বামপন্থীরা নিজ নিজ শক্তির ওপর নির্ভর করে দেশের সব প্রান্তে শ্রমজীবীদের এই দাবির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছে। সংসদের অভ্যন্তরে সীমিত শক্তি নিয়েই বামপন্থী সাংসদরা এই দাবিতে বার বার মোদী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। কর্পোরেটরা তাদের পরম মিত্র মোদী সরকার তথা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে বেসরকারিকরণের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এই লক্ষ্যেই মোদী সরকারের পক্ষ থেকে সর্বনাশা ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন ঘোষণা করা হয়েছে। যার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো দেশি-বিদেশি কর্পোরেট পুঁজির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে লুট করবার সুবন্দোবস্ত করে দেওয়া। যার আসল লক্ষ্য কর্পোরেট পুঁজির কাছে ভারতের জাতীয় সম্পদকে ভেট দেবার এক সুপরিকল্পিত সরকারি চক্রান্ত। মোদী সরকার অবাধে কর্পোরেটদের হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মালিকানা তুলে দেওয়াতে শুধু যে জাতীয় সম্পদই ধ্বংস হতে বসেছে তাই নয় , সেইসঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীরা পরিবার পরিজন সহ ভয়ানকভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে তাদের রুটি রুজিতে। অন্যদিকে দেশের পরিষেবা ক্ষেত্রগুলোর দরজা নির্মমভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা ও মেরুকরণের রাজনৈতিক বাতাবরণ তৈরি করে এই কঠিন বাস্তবতাকে আড়াল করতে তৎপর হয়ে উঠেছে মোদী সরকার।
উদারনীতির সূচনা বিপন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ
মূলত নয়ের দশকের শুরুতে সরকারি উদারনীতিতে প্রথম বড় ধরনের আঘাত নামিয়ে আনা হয় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর ওপর। তার আগে অবশ্য আশির দশকের শেষ থেকেই বিশ্বায়নের নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার, বিশ্বব্যাঙ্ক দুনিয়াজুড়ে পুঁজিবাদী প্রভাবকে জোরালো করে তুলতে শুরু করে। যার থেকে বাদ ছিল না আমাদের দেশ। দশম লোকসভা নির্বাচনের পরে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের ১৯৯১ সালের ২৪ জুলাই সংসদে পেশ করা প্রথম সাধারণ বাজেট ও জাতীয় শিল্পনীতিতে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো বিপন্ন হয়ে পড়ে। বেসরকারিকরণের ধাপ হিসাবে শিল্পনীতিতে বলা হয় যে ১। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রি ও বিলগ্নিকরণ, ২। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর সঙ্কোচন, ৩। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে বরাদ্দ হ্রাস এবং ৪। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আধুনিকীকরণ বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি। এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বামপন্থীরা শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যকে আরও মজবুত করে তুলে রুখে দাঁড়ান। ফলে এই সরকারের প্রথম পাঁচ বছরের মেয়াদে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র মারুতি উদ্যোগ ছাড়া আর কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকে তারা বিলগ্নি করতে ব্যর্থ হন। ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকারের পক্ষ থেকে বামপন্থীদের তীব্র বাধাকে উপেক্ষা করে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিএসএনএল, বালকো, ইন্ডিয়া পেট্রোকেমিক্যাল সহ মোট ২৮ হাজার ২৮৪ কোটি টাকার সরকারি সম্পদকে বেসরকারিকরণ করা হলো। ২০০৪ সালে কেন্দ্রে প্রথম ইউ পি এ সরকার ক্ষমতাসীন হলে সংসদে বামপন্থীদের সংখ্যা বেড়ে হয় ৬১ জন। এই সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদে সংসদের ভেতরে ও বাইরে বামপন্থীদের লাগাতার বাধাদানের কারণে তারা একটিও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেসরকারিকরণ করতে সাহস পাননি। ২০০৯ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারের ওপর থেকে বামপন্থীরা নীতিগত কারণে সমর্থন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। আর এরপর ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতের ৯৯ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের বিলগ্নিকরণ করা হয়। তথ্যের আয়নাই বলে দিচ্ছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে রক্ষা করবার ক্ষেত্রে বামপন্থীরাদের ভুমিকার কোনও বিকল্প নেই।
।। স্বনির্ভর অর্থনীতির বুনিয়াদ।।
পরাধীন ভারতেই শিল্পপতিরা শিল্পের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু দেশে তীব্র দারিদ্র, ক্রয়ক্ষমতার অভাব এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা না পেয়ে তারা খুব বেশি এগতে পারেননি। এরা বুঝেছিলেন যে কয়লা, বিদ্যুৎ, লোহা, অন্যান্য যন্ত্রপাতি, রেল যোগাযোগের মতো মৌলিক ভারী পুঁজিনিবিড় শিল্প গড়ে তুলতে না পারলে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটানো সম্ভব নয়। কিন্তু তাতে প্রচুর পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। অন্যদিকে লাভ পেতেও দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। এই কারণে টাটা, বিড়লা, শ্রীরামের মতো একচেটিয়া শিল্পপতিরা ১৯৪৫ সালে "বম্বে পরিকল্পনা" তৈরি করে ভারতে ধনতান্ত্রিক পথকে মসৃণ রাখবার স্বার্থে ভারী শিল্প গড়ে তুলতে পরিকাঠামোগত সাহায্যটা কৌশলে রাষ্ট্রের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন। স্বাধীন ভারতে ১৯৪৮ সালে প্রথম শিল্পনীতি এবং ১৯৫৬ সালে তা কিছুটা সংশোধিত হয়ে Industrial Development and Regulation Act এবং ১৯৫৬ সালে Industrial Policy Regulation লাগু হয়। শিল্পের বুনিয়াদি ক্ষেত্র গড়ে তোলবার জন্য এগিয়ে আসে রাষ্ট্র। এইভাবে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পথচলা শুরু হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী তিন - চার দশক ধরে কয়লা, বিদ্যুৎ, রাসায়নিক, সার, লোহা, ইস্পাত, রেল, বিমান, জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি ভারী শিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগে ভারতে অভূতপূর্ব সম্পদ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে ও দেশকে অনেকাংশে আত্মনির্ভর করে তুলতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি বেসরকারি শিল্প মালিকদের ব্যবসা ও মুনাফাও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের কল্যাণে বহুগুণ বেড়ে যায়। ষাটের দশকের শেষে কেন্দ্রীয় সরকারের নিযুক্ত একটি স্টাডি টিমের রিপোর্টে বলা হয় যে "বেসরকারি শিল্পে লাভ হলো সদা ব্যবহৃত সূচক। কিন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে লাভের সঙ্গে অর্থনৈতিক নয় এমন বিবিধ লক্ষ্যপূরণ ও সরকার নির্ধারিত সামাজিক ও জাতীয় উদ্দেশ্য সাধন প্রভৃত্তি বিষয়গুলোর ওপরেও পরিচালকদের গুরুত্ব দিতে হয়। " অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সাফল্য ও বিকাশ ভারতের পরিষেবা ক্ষেত্রেও কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা এই সরকারি রিপোর্টে স্পষ্ট তুলে ধরা হয়েছে।
আঘাতে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা
আমাদের দেশের ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল, প্রতিরক্ষা, কয়লা, বন্দর, ইস্পাত, বিদ্যুৎ সহ সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্বাধীনতার পর চার দশক ধরে ভারতের আর্থিক অগ্রগতিতে মেরুদণ্ডের কাজ করেছে। মাথাপিছু গড় উৎপাদন ও বৈদেশিক রপ্তানি বৃদ্ধি, সর্বোপরি বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের ভূমিকা ভারতকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্ত আশির দশকের শেষ থেকে উদারনীতির ধাক্কায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে সঙ্কট দেখা দিতে শুরু করে। দেশের সরকারই রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের কাছ থেকে সরকার বেলাগাম ধার করতে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের চড়া শর্তে। শুরু হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার হস্তান্তর। অথচ পঞ্চাশের দশকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকে " তীর্থযাত্রীদের নতুন মন্দির " বলে উল্লেখ করেছিলেন। স্বাধীন ভারতের অর্থনীতিকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিতে সক্ষম হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো। নেহরুর সেই স্বপ্ন উত্তরাধিকারের হাতে ক্রমশ শেষ হতে শুরু করল। উৎপাদন ক্ষেত্র ও পরিষেবাকে বেসরকারি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিয়ে রাষ্ট্রকে শুধু কর আদায়ের ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করবার ঢেষ্টা শুরু হলো। ক্ষমতায় এসেই মোদী সরকারের পক্ষ থেকে পরিকল্পিত অর্থনীতির মূল ভিত্তি জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনকে ভেঙে দেওয়া হয়। শুরু হয়ে যায় বছর বছর লাভ দেওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর লাগামছাড়া বেসরকারিকরণ। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশে মোট বিলগ্নিকরণের ৬০.২৪ শতাংশ হয়েছে মোদী সরকারের প্রথম সাড়ে বছরে। আর রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস করে মোদী জমানাতে দেশের হাল কেমন হয়েছে ? বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ২০২৪ সালে ১২৭ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০৫ তম। ২০২৪-এর দারিদ্র সূচকে ১৪৩ টি দেশের মধ্যে ভারত ১২৬তম। ২০২৩ সালে ছিল ১২৫ তম স্থানে। বেকারত্ব, দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। ভারতে এখন ২৪৯ টি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মোট সম্পদের পরিমাণ ২.৬৪ লক্ষ কোটি টাকা। প্রায় প্রতি বছর এগুলো থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিভিডেন্ড বাবদ ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকা আয় হয়ে থাকে। ২০২৪ -২৫ আর্থিক বছরে অনেকগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। যা প্রমাণ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মানেই লোকসান একথা অসত্য সারবত্তাহীন প্রচার।
মোদী সরকারের আগ্রাসী নীতি
মোদী সরকারের ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইনে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পরিচালনার দায়িত্ব কর্পোরেটকে দেবার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। লাভ হলে ছিটেফোঁটা পাবে সরকার। এইভাবে তিন দশকের কিছু বেশি সময় ধরে চালানোর পর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার লাশ ফেরত আসবে সরকারের কাছে। গ্যাস পাইপলাইন, জাতীয় সড়ক, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন, রেললাইন, বন্দর, জল সরবরাহ, অপটিক্যাল ফাইবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলোকে এই মানিটাইজেশন পাইলাইনে বিশাল পরিমাণে জমি সহ বেসরকারি মালিকদের হাতে অবাধে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছে মোদী সরকার। চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে এই সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ থেকে মোট ১০ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ করবার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। আর মোদীজিদের এই তোফাকে কাজে লাগিয়ে চলছে বেলাগাম কর্পোরেট লুট। ঋণের টাকা বেআইনি পথে বিদেশে পাচার করে এইসব কর্পোরেটদের গা ঢাকা দেবার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো থেকে নেওয়া কর্পোরেট ঋণ খেলাপির সংখ্যা ২,১৫৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ২,৬৬৪ টি। এদের ঋণ খেলাপের পরিমাণ এই চার বছরের মধ্যে ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৬০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। ঋণ নিয়ে এরা বেমালুম মেরে দিল অথচ মোদী সরকারের তরফে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবার পরিবর্তে ঋণ খেলাপি কর্পোরেটদের ২০২০-২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৬ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে। তথ্য খোদ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের। কর্পোরেট ঋণ মকুব করলেও দেশে ঋণ শোধ করতে না পেরে মোদী আমলে আত্মহত্যা করা ১ লক্ষ ৪৭৪ জন ছাড়িয়ে যাওয়া কৃষকদের জন্য কৃষি ঋণ এক পয়সাও মকুব করতে রাজি নয় মোদী সরকার। দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের অবাধে ভেট দিয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে কার্যত লুটের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত করেছে এই সরকার। বামপন্থী শ্রমিক-কর্মচারীরদের সংগঠনগুলো বারে বারে সতর্ক করা সত্ত্বেও মোদীজিরা এই পথ থেকে একটুও সরে আসেনি। এমনকি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা পর্যন্ত করতে রাজি নয় এই সরকার। তাই অসংখ্য আন্দোলন-সংগ্রাম হুঁশিয়ারিতে হুঁশ না ফেরা রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদকে কর্পোরেটদের হাতে নির্বিচারে তুলে দেওয়া মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে ৯ জুলাই দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক। গোটা দেশকে স্তব্ধ করেই হবে রাষ্ট্রের সম্পদ লুটের তীব্র প্রতিবাদ যা আগামীর প্রতিরোধকে নিশ্চিতভাবে আরও মজবুত করে তুলবে।
Comments :0