Smart Meters

স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে গনডেপুটেশন রাজ্যের একাধিক জেলায়

রাজ্য জেলা

বিদ্যুতের বিভিন্ন দাবিতে বুধবার পূর্বস্থলীতে গন ডেপুটেশন দিয়েছে সিপিআই(এম)। বুধবার বিদ্যুত নিয়ে একগুচ্ছ দাবি নিয়ে পূর্বস্থলীর পারুলিয়া বিদুৎ অফিসের ম্যানেজারকে গনডেপুটেশন দিল সিপিআই(এম) পূর্বস্হলী এড়িয়া কমিটির পক্ষ থেকে। এদিন বিকেলে ডেপুটেশন দেওয়ার আগে অফিসের সামনের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন জেলা, মহকুমা ও এড়িয়া কমিটির নেতৃবৃন্দ।
ডিজিটাল প্রিপ্রেড স্মার্ট মিটার বন্ধের স্থায়ী নির্দেশ জারী করা, ত্রৈমাসিক নয় মাসিক ভিত্তিতে বিদ্যুতের বিল পাঠানো, বিদ্যুতের ইউনিট পিছু দাম কমানো, কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানো, বিদ্যুতের পারস্পারিক ভর্তুকি চালু করা ও বিদ্যুতের আইন ২০২০ বাতিল সহ এইরকম বিভিন্ন দাবি নিয়ে বক্তারা বক্তব্য রাখেন। ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ সাহা ও এড়িয়া কমিটির সম্পাদক বিন কাসিম সেখ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বক্তব্যের পর কয়েকজনের প্রতিনিধি বিদ্যুত অফিসের আধিকারীকের হাতে ডেপুটেশনের কপি তুলে দেন। সেইসঙ্গে সোমবার নদীয়ার কালগঞ্জের উপনির্বাচনে তৃণমুল কংগ্রেসের বিজয়ের পর বিজয় মিছিল থেকে ছোঁড়া বোমায় নয় বছরের বালিকা তমান্নার মৃত্যুর কারণে বিকেলে পারুলিয়া, পূর্বস্থলী বিভিন্ন এলাকায় ধিক্কার জানিয়ে প্রতিবাদ বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন বাম বিধায়ক প্রদীপ সাহা।
এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর ২ ব্লকের বামফ্রন্টের উদ্যোগে কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিকদের নিয়ে পিছাবনি বিদ্যুৎ দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। তার আগে পিছাবনি বাজার এলাকায় ডিজিটাল প্রিপ্রেড স্মার্ট মিটার বন্ধের দাবি নিয়ে শ্লোগান তুলে বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকের হাতের ডেপুটেশনের দাবি পত্র তুলে দেয় পথ সভা হয়। আগামী ৯ জুলাই ধর্মঘটে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেন, সারাদেশে বামপন্থীদের আন্দোলনের চাপে সরকার প্রিপেড স্মার্ট মিটার আপাতত স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সাধারণ কৃষক খেদমজুর শ্রমিকদের দাবি প্রিপেড স্মার্ট মিটার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। জনগণের ব্যাক্তিগত ওই স্মার্ট মিটারের না বসানোর জন্য দরখাস্ত সহ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দাবি ছিল স্মার্ট মিটার বসানোর সাময়িক স্থগিত নয়, সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।  প্রতি মাসের বিল প্রতি মাসে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গরীব লোকদের ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ছাড় দিতে হবে। 
স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে এদিন উত্তাল হলো বসিরহাট। অবিলম্বে স্মার্ট মিটার খুলে নিতে হবে, আগের মিটার ফিরিয়ে দিতে হবে। বুধবার অবস্থান বিক্ষোভে আসা রৌশন বিবি, হাফিজা বিবি, সেলিমা বিবিরা জানালেন, এমনিতেই আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তার উপর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো আমাদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসিয়ে দিয়ে গেছে। কেন আমাদের না জানিয়ে আগের মিটার খুলে নেওয়া হলো?  আমরা তো টাকা দিয়ে মিটার নিয়েছিলাম। বক্তারা কেউ ইটভাটা শ্রমিক, কেউ খেতমজুরি করেন। জানালেন ,তারা তখন বাড়িতে ছিলেন না। সেই সুযোগে বাড়িতে পুরানো মিটার খুলে নতুন স্মার্ট মিটার বসিয়ে দিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের বাড়িতে‌, দোকানে, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ভুল বুঝিয়ে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার লাগিয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী এ হেন অবৈধ সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এদিন উত্তাল হলো বসিরহাট। বসিরহাট মহকুমা বিদ্যুৎ গ্রাহক অধিকার মঞ্চের উদ্যোগে এদিন ময়লাখোলা এলাকায়  বিদ্যুৎ দপ্তরের বসিরহাট (ডি) ডিভিশন অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচিতে দলে দলে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জমায়েত হয়। শুরু হয় ধর্না অবস্থান। রাজ্যজুড়ে সাধারণ মানুষের স্মার্ট মিটার বিরোধী মনোভাব বুঝতে পেরে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী বলেছেন আর স্মার্ট মিটার বসানো হবে না। বিদ্যুৎ মন্ত্রীর এ হেন বক্তব্যে পরিপ্রেক্ষিতে এদিনের ধর্না মঞ্চ থেকে দাবি ওঠে অবৈধভাবে লাগানো স্মার্ট মিটার খুলে পুনরায় ডিজিটাল মিটার লাগাতে হবে। ইতিমধ্যে গ্রাহকরা স্মার্ট মিটার খুলে ডিজিটাল মিটার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হাজার হাজার প্রতিবাদ পত্র জমা পড়ে বিদ্যুৎ দপ্তরে। বিদ্যুৎ গ্রাহক অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন মঞ্চের আহ্বায়ক আইনজীবী প্রণব কুমার দাস,নুরুল ইসলাম মোল্লা, রফিকুল ইসলাম মোল্লা, দেবব্রত বিশ্বাস, শাজাহান মণ্ডল সহ অন্যান্য।তারা তাদের বক্তব্যে  অভিযোগের সুরে বলেন, বসিরহাট(ডি) ডিভিশনে প্রায় ৬০হাজার স্মার্ট মিটার বসানোর নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা লুট করছে বিদ্যুৎ দপ্তর।ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে কার্যতঃ জোরপূর্বক মিটার বদলে দেওয়া হয়েছে। কতৃপক্ষের কাছে নেতৃবৃন্দের আবেদন স্মার্ট মিটার বসানোর আদেশের প্রতিলিপি আমাদের দেখাতে হবে। এদিন মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি সনদ পড়ে শোনান দেবব্রত বিশ্বাস। ৫দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয় বসিরহাট মহকুমা বিদ্যুৎ দপ্তরের ডি ই(ই) এবং ডি এম মিনাজ সরদারকে।ডেপুটেশনে যান নুর ইসলাম মোল্লা, দেবব্রত বিশ্বাস, অভিজিৎ রাহা।স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে ২০২৩ সালের আইন অনুসরণ করতে হবে। বিলের গরমিল, অতিরিক্ত বিল জরুরি ভিত্তিতে সংশোধন করতে হবে। ক্ষুদ্রশিল্পগুলিকে স্মার্ট মিটারের আওতার বাইরে রাখতে হবে।স্মার্ট মিটার বাতিল করা হলো এহেন নোটিশ প্রকাশিত করতে হবে ইত্যাদি।
এদিন এক'শ দিনের কাজ, স্মার্ট মিটার বসানোর বিরোধিতা সহ একাধিক দাবিতে দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকে বিডিও অফিস চত্বরে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন দিল সারা ভারত কৃষক সভা। ডেপুটেশনে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের নেতা তারাপদ বর্মন, প্রবীর পাল, গৌরাঙ্গ পাইন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে গ্রামে- গঞ্জে ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এর জন্য দায়ি কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার। গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য এই একশ দিনের প্রকল্পের কাজ চালু হয়েছিল। অথচ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকারের গাফিলতির ফলেই এই ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ রাজ্যের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। বর্তমানে এ রাজ্যের গ্রামে-গঞ্জে কোন কাজ নেই। ফলে সাধারণ মানুষ কাজ না পেয়ে কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। সেখানে গিয়েও এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ নানাভাবে হেনস্তার স্বীকার হচ্ছেন।  গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুতের স্মার্ট মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই স্মার্ট মিটার বসানো হলে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা চরম সমস্যার মধ্যে পড়বেন। বর্তমানে কৃষকরা কৃষি ফসলের সঠিক দাম পাচ্ছেন না। অথচ সার,বীজ সহ কৃষি সরঞ্জামের দাম বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার যে কৃষি নীতি গ্রহণ করেছে তা কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থে এই কাজ করে চলেছে। 
এদিন সংগঠনের তরফ থেকে দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের বিডিও-র কাছে ডেপুটেশন দেবার সময় বিডিও গঙ্গা ছেত্রীর সঙ্গে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়। সমস্যাগুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে বলে বিডিও সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের জানিয়েছেন। 

Comments :0

Login to leave a comment