Editorial

সিবিআই’র গুরুভাই

সম্পাদকীয় বিভাগ

আরজি করের অভয়া কাণ্ডের ন্যায় বিচার ১৩ মাস পেরিয়ে যাবার পরও সুদূর পরাহত। ন্যায় বিচার আদৌ মিলবে কিনা সেটা নিয়েও গুরুতর সন্দেহ ক্রমশ দানা বাঁধছে। গণধর্ষণ ও খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসকের বাবা তো তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে ক্ষুব্ধ, বীতশ্রদ্ধ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই’র কাজকর্মে তারা চূড়ান্ত হতাশ। সিবিআই যে আ‍‌দৌ কোনও তদন্ত করছে না, করবেও না এব্যাপারে তারা একরকম নিশ্চিত। কয়েক মাস পর পর আদালতে কেবল স্ট্যাটাস রিপোর্টই পেশ করে চলেছে সিবিআই কিন্তু তাতে তদন্তের অগ্রগতির কোনও বিষয় নেই। নেই নতুন কোনও তথ্য প্রমাণের হদিশও। এইভাবে সময় নষ্ট করে একদিন তদন্ত গুটিয়ে ফেলাই তাদের সম্ভবত লক্ষ্য।
এরাজ্যে সারদা, নারদ, চাকরি দুর্নীতি, কয়লা পাচার, গোরু পাচার ইত্যাদি সহ গন্ডা গন্ডা বড়মাপের ও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মামলার তদন্তভার বর্তেছে সিবিআই’র উপর। তার মধ্যে রয়েছে অভয়ার ধর্ষণ খুনের মামলাও। প্রায় সবকটি মামলাই আদালতের নির্দেশে সিবিআই’র হাতে গেছে। কিন্তু কোনও মামলার কোনও সন্তোষজনক কিনারায় তারা পৌঁছাতে পারেনি। পদে পদে গাফিলতি, ঢিলেমি, দীর্ঘসূত্রিতা, সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়ার কারণে প্রতিদিনই আদালতে তিরস্কৃত হচ্ছে কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআই’র ভাবসাব দেখে বাংলার প্রবাদ ‘‘লজ্জা, ঘৃণা, ভয়, তিন থাকতে নয়’’ কেউ অনুসরণ করছে বলে মনে হয়। তদন্ত হাতে নিয়ে প্রথম কিছুদিন জোর তৎপরতা দেখায়। অভিযোগের মালা সাজিয়ে এমন ভাষ্য তৈরি করে যেন কয়েকদিনের মধ্যেই সব অপরাধীকে ধরে সাজার ব্যবস্থা করে ফেলবে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তাদের আর টিকিও খুঁজে পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে শুধু কোর্টে উদয় হয় আর বিচারকের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়। সি‍‌বিআই যে সত্যি সত্যি খাঁচায় বন্দি তোতা পাখি এরাজ্যে তাদের কাজকর্ম প্রমাণ করে দিচ্ছে।
এরাজ্যে যেসব গুরুতর মামলা সিবিআই’র হাতে এসেছে তার প্রায় সবগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের নেতা, কর্মীরা। পশ্চিমবঙ্গে যে সরকার আছে তারা নীতির থেকে দুর্নীতিকে বেশি পছন্দ করে। লুটতন্ত্রই তাদের আদর্শ। চুরি করাই তাদের পেশায় পরিণত হয়ে গেছে। তাই এই সব মামলার তদন্ত যদি এই সরকারের পুলিশ করে তাহলে একজন অপরাধীরও সাজা হবে না। তারা সসম্মানে নিরপরাধ প্রমাণিত হবে। উলটে অভিযোগকারী এবং প্রতিবাদকারীদেরই নানা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে নাজেহাল করবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ শাসকের চুরি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস না পায়। এই কারণেই মামলাগুলি রাজ্য পুলিশের হাত থেকে সরিয়ে সিবিআই-কে দেওয়া। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে পুলিশ-সিবিআই কার্যত ঘুটের এপিঠ-ওপিঠ। গোড়াতেই পুলিশ যেভাবে মামলা সাজিয়েছিল এবং অপরাধীদের আড়াল করতে তথ্য প্রমাণ লোপাটের জাল বিস্তার করেছিল সিবিআই কোনোমতেই সেই ছক থেকে বেরুতেই চাইছে। অভয়া কাণ্ডে রাজ্য পুলিশ যা যা বলেছিল এবং তদন্তের যে ছক সাজিয়ে দিয়েছিল সিবিআই তার থেকে এক চুলও এদিক ওদিক হয়নি। প্রকৃত  ধর্ষক ও খুনিদের এবং গোটা ষড়যন্ত্রের নেপথ্য নায়কদের আড়াল করতে প্রথম থেকেই প্রতিটি নিখুঁত পদক্ষেপে সমস্ত তথ্য প্রমাণ নষ্ট ও অধরা থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে। সবটাই হয়েছে সরকার ও পুলিশের উচ্চ স্তরের গোচরে ও পরামর্শে। সিবিআই সব জেনেও আশ্চর্যজনকভাবে সেদিক থেকে নজর সরিয়ে নিয়েছে। পুলিশের অবস্থানকে পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়ে এক নিরীহ গোবেচারাকে সাজা দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে। মোদীর সিবিআই কি মমতার পুলিশকে গুরুভাই মেনে দীক্ষা নিয়েছে?
 

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন